সমকামী নাটক সাজিয়ে শিক্ষককে হত্যা,আটক ৩

সমকামী নাটক সাজিয়ে শিক্ষককে হত্যা,আটক ৩

সমকামী নাটক সাজিয়ে শিক্ষককে হত্যা,আটক ৩

সাভার পৌর এলাকার ভাটপাড়া এলাকায় এক শিক্ষককে হত্যার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারীসহ তিনজনকে আটক করেছে র‌্যাব। আটককৃতদের যশোর, ঝিনাইদহ ও রংপুর এলাকায় র‌্যাবের যৌথ অভিযানে আটক করা হয়। 

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

নিহত ওই শিক্ষকের নাম গোলাম কিবরিয়া (৪৩)। হত্যার পর ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য লাশের পাশে অভিযুক্তরা চিরকুট লিখে রেখে যায়। আটক ব্যক্তিরা হলেন, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মো: ইমন খান (২৩), মো: সাগর (২২) ও মো: ছাদেক গাজী (২২)। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুট করা ৫ লাখ ২১ হাজার ৯৯ টাকা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতদের কাছ থেকে জানা যায়, নিহত শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া জমি কেনা-বেচা করতেন। এ কারণে তার কাছে সব সময় মোটা অঙ্কের টাকা থাকত। টাকা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য শিক্ষককে হত্যার পর সমকামীর চিরকুট লিখে নাটক সাজানো হয়। গত রোববার বেলা ৩টার দিকে সাভার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির কক্ষ থেকে হাত-পা বাঁধা এবং গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় গোলাম কিবরিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় লাশের পাশ থেকে 'এই ব্যক্তি সমকামী করে পুলিশ ভাই, আমরা তাই মেরে ফেলেছি, ভাই ও অবৈধ কাজ করে...আমরা ইসলামের সৈনিক' লেখা একটি চিরকুট পাওয়া যায়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। 

র‌্যাব জানায়, নিহত গোলাম কিবরিয়া সাভার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি কয়েক বছর ধরে নিজ বাড়িতে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতেন। পাশাপাশি জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করতেন। গত ১৯ আগস্ট শনিবার রাত ১০টার দিকে তার বড় ভাই মো: গোলাম মোস্তফার ঘরে রাতের খাবার শেষে নিজ কক্ষে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘটনার দিন ২০ আগস্ট বেলা ২টার দিকে কিবরিয়া ঘুম থেকে না ওঠায় বাড়ির লোকজন তাকে ডাকাডাকি করে। সাড়া না পেয়ে একপর্যায়ে তার ঘরের পেছনের দরজা খোলা দেখতে পায়। এ সময় বাড়ির লোকজন রুমের ভেতর গিয়ে খাটের ওপর লুঙ্গি দিয়ে নিহত শিক্ষকের হাত-পা বাঁধা ও গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় নিথর লাশ দেখতে পায়। নিহতের রুমের মালামাল তখন এলোমেলো ও আলমারি খোলা ছিল। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতদের কাছ থেকে জানা যায়, ইমনের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে এই হত্যাটি হয়েছে। সাগর একজন অটোরিকশাচালক। তার রিকশায় নিহত শিক্ষক মাঝে মধ্যে যাতায়াত করার কারণে ২ বছর আগে তার সাথে পরিচয় হয়। গত ৬ মাস আগে সাগর তার বন্ধু ইমনকে শিক্ষকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। পরিচয়ের সুবাদে ইমন ও সাগর শিক্ষক কিবরিয়ার বাসায় মাঝে মধ্যে যাওয়া আসা করতেন।

র‌্যাব বলেন, শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করতেন এবং ব্যবসার যাবতীয় টাকা বাসায় রাখতেন। সাগর ও ইমন শিক্ষকের বাসায় যাওয়া আসার সুবাদে এই টাকা তাদের নজরে আসে। পরবর্তীতে তারা শিক্ষককে হত্যা করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেন। ইমন তার পরিকল্পনার বিষয়টি ঘটনার ৭ থেকে ৮ দিন আগে ছাদেককে বলেন। ছাদেকের বিভিন্ন জায়গায় ঋণ থাকায় তিনি এই পরিকল্পনায় সম্মতি দেন। 

র‌্যাব জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯ আগস্ট ইমন ও ছাদেক জিরানী বাজার থেকে বাসে করে সাভারের বাস স্ট্যান্ড এলাকায় এসে শিক্ষককে ফোন করে দেখা করতে চান। শিক্ষক কিবরিয়া তাদেরকে বাসায় আসতে বলেন। এ সময় রাত আনুমানিক ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে ইমন ও ছাদেক শিক্ষকের বাসায় আসেন। এ সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী সাগর অটোরিকশা নিয়ে শিক্ষকের বাসার আশপাশে অবস্থান করেন। শিক্ষকের বাসায় তারা রাতের হালকা নাশতা শেষে আলাপচারিতার একপর্যায়ে রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে ছাদেক শিক্ষক গোলাম কিবরিয়ার গলা চেপে ধরেন এবং ইমন তার মুখ চেপে ধরেন। এরপর গোলাম কিবরিয়ার লুঙ্গি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ও গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যূ নিশ্চিত করেন তারা। 

র‌্যাব আরো বলেন, হত্যার এই ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ছাদেক নিজ হাতে একটি সাদা কাগজে চিরকুট লিখে মৃত দেহের পাশে রেখে দেন। ইমন নিহতের বিছানার নিচ থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৪টি মোবাইল নিয়ে যান। পরে তারা সাগরের অটোরিকশায় করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সাভার বাস স্ট্যান্ড এলাকায় চলে আসেন।

র‌্যাব বলেন, ইমন সাগরকে ৫০ হাজার টাকা দেন। বাকি ৬ লাখ টাকা ইমন ও ছাদেক নিজেদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে নেন। ঘটনার পর দিন সকালে গ্রেফতার এড়াতে ইমন প্রথমে গাজীপুর পরে যশোরের চৌগাছা এলাকায়, সাগর রংপুরের মিঠাপুকুর, ছাদেক ঝিনাইদহে তার আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করেন।তিনি বলেন, ইমন মা-বাবাসহ প্রায় ১৫ বছর ধরে জিরানী এলাকায় বসবাস করছেন।

তিনি রাজধানীর আশুলিয়ার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। একটি গার্মেন্টসে কোয়ালিটি কন্ট্রোলার হিসেবে কাজ করতেন। মাদকাসক্ত ইমনের বিরুদ্ধে কাশিমপুর থানায় একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে। সাগর মা-বাবাসহ প্রায় ২০ বছর ধরে একই এলাকায় বসবাস করছিলেন। আর ছাদেক মা-বাবাসহ প্রায় ২০ বছর ধরে ঢাকার জিরানী এলাকায় বসবাস করছেন। ওই এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন তিনি।

সাভার মডেল থানা ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) রাজিত সিকদার মঙ্গলবার জানান, আটককৃত তিনজনকে সাভার থানায় হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।