অবশেষে আন্দোলনের সুফল পেলেন নবীগঞ্জের দুটি বাগানের চা শ্রমিকরা

অবশেষে আন্দোলনের সুফল পেলেন নবীগঞ্জের দুটি বাগানের চা শ্রমিকরা

ছবিঃ সংগৃহীত।

অবশেষে আন্দোলনের সুফল পেলেন নবীগঞ্জের দুটি বাগানের চা শ্রমিকরা। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) বিকালে শ্রমিকদের বকেয়া ৫২ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। বাকি টাকা দুই মাসের মধ্যে প্রদান করা হবে। চা শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন পেয়ে চরম খুশি। আজ শনিবার (২৬ আগস্ট) তারা আবারও কাজে যোগদান করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর অধিদপ্তরের নির্দেশে মন্ত্রী পরিষদ নবীগঞ্জ উপজেলার ইমাম ও বাওয়ানির চা বাগানের শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ভাতাধিসহ যাবতীয় দাবি পাওনা পরিশোধে আন্ত:মন্ত্রণালয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভা ২২ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকের সিন্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল টাকা প্রদান করা হয়।

এবিষয়কে সামনে রেখে চা শ্রমিকরা তাদের ৪২ দিন ধরে ধর্মঘট, মানববন্ধন ও অবরোধ কর্মসুচী করে আসছিলেন। গতকাল তাদের এই ৪২ দিনের মজুরী প্রদান করা হয়। এই সমস্যা মালিকের জন্য সৃষ্টি হয়েছে তাই তারা শ্রমিকদের আন্দোলন কালিন সময়ের ৪২ দিনের বেতন ভাতা দিতে হয়েছে।

গত ৪২দিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের চা শ্রমিকরা। চলমান তলব, রেশন, বকেয়া মজুরি, বোনাস, উৎসব ভাতা, ভবিষ্যত তহবিলের বকেয়া টাকা, চিকিৎসা, স্থায়ী বাসস্থান নিশ্চিত করণের দাবীতে দফায় দফায় নানা কর্মসূচি পালন করে আসলেও কার্যত কোনো সমাধান।

গতকাল মন্ত্রী পরিষদ সচিবের আস্বাসের প্রেক্ষিতে আবারও কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে। হবিগঞ্জ জেলার হবিগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নে অবস্থিত ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের পাওনা বেতন ও অন্যান্য ভাতা দি পরিশোধের লক্ষ্যে আগামী ২২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর অধিদপ্তরে নির্দেশনায় মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম‚হ, বাংলাদেশ চা বোর্ড , প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জেলা প্রশাসক হবিগঞ্জ ও মালিকপক্ষের সাথে বৈঠকে বসেন। দীর্ঘ ৬ সপ্তাহ যাবত সাপ্তাহিক তলব ও রেশন না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ৷

বিষয়টি হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করলে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ ২২ আগস্ট ২০২৩ তারিখে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাটি ডেকে সিন্ধান্ত নেয় শ্রমিকদের মোট পাওনা এক কোটি ৫৫ লাখ টাকা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। এর অংশ হিসাবে শুক্রবার বিকালে প্রথম কিস্তিতে ৫২ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়।

বকেয়া বেতন ভাতা প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জনাব মোঃ রফিকুল আলম, বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব প্রিয়াংকা পাল ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীগঞ্জ জনাব ইমরান শাহারীয়ার, সহকারী কমিশনার ভুমি শাহীন দেলোয়ার,নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এম,এ আহমদ আজাদ, সাবেক সহ সভাপতি এম,মুজিবুর রহমান, এম,এ মুহিত, সাংবাদিক ছনি চৌধুরী, বাংলাদেশ চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা, বাংলাদেশ চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালির ভারপ্রপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুভাশ রবি দাশ,বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, ইমাম চা বাগানের সভাপতি রামভজন রবিদাশ প্রমূখ।

চা শ্রমিকদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়- নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নে অবস্থিত ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগান। এইদুটি বাগানে কাজ করেন ৩৬০ জন চা শ্রমিক। শ্রমিকদের দাবী, ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের ৩৬০ জন শ্রমিকের শ্রমচুক্তি মোতাবেক শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি/এরিয়ার অর্থ বাবদ ২০১৯-২০ ও ২০২১-২২ অর্থ বছরের ৮১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, এরিয়া বোনাসের ১৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা পরিশোধ করছেনা মলিকপক্ষ।

এছাড়া চা বাগান শ্রমিক ভবিষ্যত তহবিলের (পিএফ) ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা মালিক পক্ষ পিএফ কার্যালয়ে জমা প্রদান না করার ফলে অবসর প্রাপ্ত শ্রমিকগণ পিএফ অর্থ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে চা শ্রমিকদের রোদ-বৃষ্টিতে বাসস্থানে অবস্থান করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত তারা।

বাংলাদেশ চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন- বার বার আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েও মালিকপক্ষ বকেয়া পরিশোধ করেনি। আজকে আমরা বকেয়া বেতন ভাতা পেয়েছি আগামীকাল কাজে যোগদান করবো। আমরা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ,ও হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে অসংখ্য ধন্যবাদ তাদের কারনে আজকে আমরা বেতন ভাতা ও পিএফ অর্থ পাচ্ছি। আমরা আশাবাদী বাকি দুই কিস্তির টাকা দুই মাসের মধ্যে পেয়ে যাবো। আজকে ্চরম আনন্দিত আমাদের এন্দালন সফল হয়েছে।

এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার বলেন, আমরা আশাবাদী মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ স্থায়ী ভাবে সমাধান করেছেন। গত ২২ আগষ্ট মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের দুটি চা বাগানের শ্রমিকদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক দেবী চন্দ্র তিনি সমস্ত দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। তাই মালিক পক্ষ টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েছে। আশাবাদী বাকি টাকা যথারিতী কিস্তি মোতাবেক প্রদান করা হবে।