দেশ-বিদেশে ঘুরেও হালে পানি পাচ্ছে না সরকার : রিজভী

দেশ-বিদেশে ঘুরেও হালে পানি পাচ্ছে না সরকার : রিজভী

দেশ-বিদেশে ঘুরেও হালে পানি পাচ্ছে না সরকার : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ এর মতো পাতানো নির্বাচন করতে আবারো মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। এই কারণে করুণা ভিক্ষার জন্য দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু কোথাও হালে পানি পাচ্ছেন না।

বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, এ দেশের জনগণ নাগরিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার প্রত্যাশী। বাংলাদেশের মানুষ বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসন, ন্যায়বিচার, বহুমাত্রিকতা ও ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে। বাংলাদেশী জাতি সুপ্রাচীন, এখানে নীতি ও ন্যায্যতার ধারণা সুদীর্ঘকালের। সেই কারণে মানবাধিকারের পক্ষে অন্তর্নিহিত তাগিদ মানুষের মনে ক্রিয়া করে। বর্তমানে বাংলাদেশে কতৃর্ত্ববাদী শাসনে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরাই সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছে। নিপীড়ণ-নির্যাতন চরম মাত্রায় নামিয়ে আনা হয়েছে গণতন্ত্রকামী নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের ওপর। রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিপীড়ণ যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে অবৈধ ক্ষমতাকে সুরক্ষার জন্য। অবৈধ সরকার শেষ মরণকামড় দেয়ার জন্য লেলিয়ে দিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে।

তিনি বলেন, গতকাল ঢাকা জেলা আদালত প্রাঙ্গণে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট আয়োজিত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ফরমায়েশী সাজার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী আইনজীবীদের শান্তিপূর্ণ লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে পুলিশ কাণ্ডজ্ঞানহীন নারকীয় হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ জনের মতো পুরুষ ও নারী আইনজীবী।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনা দেশকে এক উপসংহারহীন পরিস্থিতির দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে দেশ থেকে আদালতের ন্যায়বিচারের ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে গেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমান এবং জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিদেরসহ লাখ লাখ নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন বিচারিক অসদাচরণের। আওয়ামী চেতনায় রঞ্জিত বিচারকরা অন্যায্য আচরণ করছেন। বর্তমানে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পালাক্রমে আদালতের সাজা ইতোপূর্বে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর হুমকির হুবহু প্রতিধ্বনি। জেলখানাগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের দিয়ে পূর্ণ করার পরও সরকারের আশা মেটেনি। আদালতের বারান্দাগুলোয় হাজার হাজার বিরোধী নেতাকর্মীদের ভিড়ে দম বন্ধ করা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হাজিরার নামে আদালতকে এখন হিটলালের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করা হয়েছে। সরকার ভিন্নমতাবলম্বী ও বিরোধী নেতাকর্মীদের টঁটি টিপে ধরার জন্য আদালতকে ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ এর মতো পাতানো নির্বাচন করতে আবারো মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। এই কারণে করুণা ভিক্ষার জন্য দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু কোথাও হালে পানি পাচ্ছে না। কারণ বাংলাদেশের জনগণ এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো গণতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের পক্ষে। তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সমতা, ন্যায়বিচার ও জনগণের ইচ্ছার পক্ষে। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরলেও আর কোনো লাভ হবে না। নির্যাতন ও বৈষম্য রোধ এবং অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কথা ও কাজের মধ্যে কখনোই মিল ছিল না। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার কথা ছিল না, কিন্তু ক্ষমতায় এসেই অসৎ উদ্দেশ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন, যার পরিণতি আমরা দেখেছি ২০১৪ ও ২০১৮ এর একতরফা জালিয়াতির নির্বাচনে। অথচ এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা অন্যের ব্রেনচাইল্ড হলেও সেটি আওয়ামী লীগের কোলে লালিত পালিত হয়েছে একটি জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিধ্বংসী আন্দোলনে। অথচ শেখ হাসিনা গোপন কথাটি গোপনে রেখে ক্ষমতায় এসেই ২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা মুছে দেন চিরদিন দেশের জনগণের প্রভু থাকার জন্য। আর তাই গণতন্ত্রের আওয়াজ পেলেই তার পুলিশ বাহিনীর বুটের আঘাতে সেটি পদপিষ্ট করতে চান। গতকাল ঢাকা জেলা আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের বর্বরোচিত হামলা পূর্বপরিকল্পিত, শেখ হাসিনার অনুমোদনক্রমেই হাইকোর্ট ও জজকোর্টের পুরুষ ও নারী আইনজীবীদের রক্ত ঝরিয়েছে পুলিশ। পুরুষ পুলিশের নারী আইনজীবীদের ওপর আক্রমণ সভ্যতার ভয়ঙ্কর কলঙ্ক।

আইনজীবীদের ওপর এই পৈশাচিক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে তিনি বলেন, যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।