মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হালাল শোকেস এ বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

‘মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেস’ এর ১৯তম আসরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশও অংশগ্রহণ করেছে।খাদ্য ও পানীয়, মডেস্ট ফ্যাশন, ই-কর্মাস, ইসলামিক ফিন্যান্স ও ফিনটেকসহ মোট ১৩টি ক্লাস্টারে বিশ্বের ৪০টি দেশের ১ হাজার ৪০টি প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৮০০টি বুথের মাধ্যমে এই মেলায় অংশগ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহযোগিতায় এবং বাংলাদেশ হাইকমিশন, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়ার সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই মেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে ৯টি বুথে ১৬টি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। মালয়েশিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে আয়োজিত মেলাসমূহের মধ্যে এটিতেই বাংলাদেশ বড় পরিসরে অংশগ্রহণ করছে।

মালয়েশিয়ার মিনিস্ট্রি অব ইনভেস্টমেন্ট, ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং মালয়েশিয়া ইন্টারনাল ট্রেড ডেভলপমেন্ট করপোরেশন (এমএটিআরএডিই) এর আয়োজনে মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে স্থানীয় সময় সোমবার শুরু হওয়া মেলা চলবে ১৫ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) পর্যন্ত। এই মেলাতে মালয়েশিয়ার হালাল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন বেরহাদ (এইচডিসি) এবং ডিপার্টমেন্ট অফ ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট অফ মালয়েশিয়া সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে।

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সরোয়ার বুধবার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে মালয়েশিয়ায় তাদের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন পরামর্শ দেন।

এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি জানান, হালাল পণ্যের বাণিজ্য একটি ক্রমবর্ধমান সেক্টর। বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও হালাল পণ্য বাণিজ্যে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

সারাবিশ্বে বর্তমানে হালাল বাণিজ্যের পরিমাণ ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার, ২০৩০ সালে বাণিজ্য বেড়ে দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ যদি এর ১০ শতাংশ বাজার ধরতে পারে তাহলে ৩৬০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে, ১ শতাংশ ধরলেও ৩৬ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সে লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।

এ সময় এমএটিআরএডিই-এর পরিচালক এস জয়শংকর, আয়োজককারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবর্গ, বাংলাদেশ হাইকমিশনের দূতালয় প্রধান ও কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) ফারহানা আহমেদ চৌধুরী, কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য, কাউন্সিলর (কনস্যুলার) রাসেল রানা, প্রথম সচিব (প্রেস) সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ, প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) প্রণব কুমার ঘোষ, প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) রেহানা পারভীনসহ হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রবাসী বাংলাদেশীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো শ্রী আনোয়ার ইব্রাহীম এবং উপপ্রধানমন্ত্রী দাতো শ্রী ড. আহমেদ জাহিদ হামিদি বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেন এবং বাংলাদেশের প্রদর্শিত পণ্যগুলোকে সম্ভাবনাময় হিসেবে উল্লেখ করেন।

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো শ্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ১৯তম মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হালাল শোকেস এবং দ্য গ্লোবাল হালাল সামিট-২০২৩ এর উদ্বোধন করেন। এ সময় মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ, বাণিজ্য, শিল্পমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

খাদ্য, পোশাক শিল্প, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, আইটি ও হস্তশিল্প এসব ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ থেকে বোম্বে সুইটস অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, এগ্রোভার্স লিমিটেড, তাহমিনাস, পিপলস লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ, কে এম আর ক্রাফট, কারুপণ্য, বন্ধন নূরস, অ্যালবাট্রস ফ্যাশন, পশরা লেদার অ্যান্ড জুট, জুটএক্স, বিদোরা ব্যাগ এবং হস্তশিল্প, টেকসলিউশন, প্রিঙ্ক, ত্রিনাস ক্লোসেট, ডাইনাস গ্ল্যামার এবং কল্পতরু এসকল প্রতিষ্ঠানগুলো মেলায় অংশগ্রহণ করছে।

১৯তম মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হালাল শোকেস স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে হালাল অর্থনীতির জন্য স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উদ্ভাবন এবং টেকসই উদ্যোগের ওপর বিশেষ জোর দেবে। এই মেলা শুধুমাত্র এশিয়ান অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এখানে আন্তর্জাতিক প্যাভিলিয়নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন ট্রেড কমিশন, সরকারী সংস্থা, শিল্প ও ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ থাকবে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় হালাল বাণিজ্যের পরিমাণও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। হালাল বাণিজ্যে মালয়েশিয়ার অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য এবং সেকারণে এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার সাথে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এই মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে হালাল সেক্টরের উন্নয়ন তথা মালয়েশিয়াসহ আসিয়ান অঞ্চলে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।

সূত্র : ইউএনবি