জাহাজভাঙা শ্রমিকদের গড় আয়ু ২০ বছর কম

জাহাজভাঙা শ্রমিকদের গড় আয়ু ২০ বছর কম

সংগৃহীত

বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করছেন। এ শিল্পে কর্মরতদের আয়ু বাংলাদেশের মানুষের জীবনকালের চেয়ে ২০ বছর কম। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।

‘লাভের জন্য জীবন নিয়ে বাণিজ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বুধবার প্রকাশ করা হয়। নিউইয়র্কভিত্তিক এইচআরডব্লিউ এবং বেলজিয়ামভিত্তিক এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজভাঙা শিল্পের দেশ। এই শিল্পের কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড। সীতাকুণ্ডের সমুদ্র-তীরবর্তী যেসব ইয়ার্ডে জাহাজ ভাঙা হয়, সেগুলো এই মুহূর্তে বিশ্বের বৃহত্তম ইয়ার্ড।

প্রতিবেদনটি প্রস্তুতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দলের অন্যতম সদস্য এবং এইচআরডব্লিউ’র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর আইন অমান্য করে পুরোনো ও বাতিল জাহাজ বাংলাদেশে বিক্রি করছে। এতে কোম্পানির পকেটে মুনাফার অর্থ ঢুকছে ঠিকই; কিন্তু তাদের মুনাফার জন্য গুরুতর হুমকিতে পড়েছে বাংলাদেশিদের জীবন ও পরিবেশ।’

জুলিয়া ব্লেকনার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক জাহাজ কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই আইন ফাঁকি দিয়ে নিজেদের বাতিল মালপত্র বাংলাদেশে পাঠানো বন্ধ করতে হবে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫২০টি পুরোনো-বাতিল জাহাজ ভাঙা হয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক কোনো প্রকার সুরক্ষা উপকরণ ছাড়াই ভেঙেছেন জাহাজগুলো। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, কারখানা মালিকরা কাজ করার সময় তাদের গ্লাভস, মাস্ক, জুতা, জাহাজভাঙার জন্য বিশেষ সুরক্ষা পোশাক দিতে চান না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ইয়ার্ডগুলোতে কাজ চলার সময় অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা প্রায় নিয়মিত ব্যাপার। সীতাকুণ্ডের ইয়ার্ডগুলোতে ২০১৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৬২ জন এবং আহত হয়েছেন আরও শত শত শ্রমিক।’  গত সপ্তাহেও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা গেছেন দু’জন শ্রমিক।

এ ছাড়াও রয়েছে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি। ইয়ার্ডগুলো সাগরতীরবর্তী হওয়ায় জাহাজভাঙার কারণে বিভিন্ন রাসায়নিক ও বিষাক্ত উপাদান সরাসরি সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে, যা বঙ্গোপসাগরের ওই এলাকার সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যকে রীতিমতো হুমকির মুখে ফেলছে। পুরোনো বাতিল জাহাজগুলোর অ্যাসবেস্টস ফুসফুসের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী ঘটাতে সক্ষম।

বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওশি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রিপন চৌধুরী এএফপিকে জানান, সম্প্রতি তারা সীতাকুণ্ডের ১১০ শ্রমিকের মেডিকেল পরীক্ষা করেছিলেন, তাদের মধ্যে ৩৩ জনের দেহে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেছে এইচআরডব্লিউ। এর মধ্যে রয়েছে– জাহাজভাঙা শিল্পে কঠোর স্বাস্থ্য ও শ্রম অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য হাইকোর্টের ১৮ দফা নির্দেশনা সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ করা। শিশুদের নিয়োগ দিলে কিংবা শ্রমিক অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন হলে সেই কারখানা বন্ধ করে দেওয়া।

শ্রমিকদের (মৃত্যুর ক্ষেত্রে তাদের পরিবারকে) পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং বিপজ্জনক বর্জ্য সংরক্ষণ সুবিধা তৈরি করা।