অবিরাম বৃষ্টি : কৃষির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি

অবিরাম বৃষ্টি : কৃষির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি

ছবিঃ সংগৃহীত।

জলবায়ুর প্রভাবে অসময়ের অবিরাম বৃষ্টিতে ভিজছে রাজধানীসহ সারা দেশ। টানা তিন দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হয় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি দিয়ে। দুপুরের মধ্যে তা ভারি বৃষ্টিতে রূপ নেয়। ঢাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এতে রাস্তায় পানি জমে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। নগরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েন।

অফিসগামী ও অফিস ফেরত মানুষ বৃষ্টি ও জলজটে দীর্ঘ সময় পরিবহণে বসে থাকেন। দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়, ১৭৩ মিলিমিটার। রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে। অবিরাম বৃষ্টিতে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। উজানে তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে রাজশাহীর রাস্তায় চলছে নৌকা। টানা বৃষ্টিতে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নগরবাসী। বুধবারের একদিনের বৃষ্টি রাজশাহীতে ১০ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করেছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপকূলে গত কয়েকদিন ধরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।

বৃহস্পতিবার ছয় ঘণ্টায় কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৬১ মিলিমিটার, সন্দ্বীপে ৫৮, নেত্রকোনায় ৫৭, রাজশাহীতে ৫৫, ময়মনসিংহ ও বগুড়ায় ৩২, গোপালগঞ্জ ও নিকলীতে ২৯ এবং নোয়াখালীর হাতিয়ায় ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, আগামী দুইদিন পর্যন্ত অতিভারী (৮৯ মিলিমিটার বা তারও বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। আগামীকালও ঢাকায় প্রায় একইরকম বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

সিরাজগঞ্জে টানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন সড়কে হাঁটুপানি জমেছে। এতে অফিসগামী মানুষ আর শিক্ষার্থীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। টানা বর্ষণে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এদিকে টানা বৃষ্টির ফলে হাঁটুপানিতে ডুবে গেছে শহরের বিভিন্ন সড়ক। এতে বিভিন্ন সড়কে চলাচলের সময় আটকা পড়ছে যানবাহন।

ফরিদপুরে এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৯ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী একটানা মুষলধারে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে। দিনব্যাপী বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমে আসে স্থবিরতা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন ভ্যান-রিকশাচালক, হতদরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষ।

চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছুঁয়েছে কুষ্টিয়া। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সড়ক হাঁটুপানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে মানুষজনকে।

২০২৩ সালের আশ্বিনের বৃষ্টি যেন আষাঢ়-শ্রাবণের বৃষ্টিকেও হার মানিয়েছে। বরিশালে ৫ আগস্ট একদিনে ১০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড। ৬ আগস্ট একদিনের বৃষ্টিতে ৩০ বছরের রেকর্ড ভাঙে চট্টগ্রামের। রেকর্ড বৃষ্টিতে পাকিস্তান ও চীনে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২০ সালের অসময়ের বৃষ্টি ১০০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। রংপুরে মাত্র ১৪ ঘণ্টায় ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বদলে যাচ্ছে ঋতুচক্র। সময়ে দেখা না মিললেও অসময়ে বৃষ্টির বাড়াবাড়ি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মানুষ। এর প্রভাব পড়ছে জীবন ও প্রকৃতিতে। অসময়ে বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে বলে বলছেন বিজ্ঞানীরা।

২০২১ সালে ঢাকায় ডিসেম্বরে এক দিনের বৃষ্টি ৫০ বছরের রেকর্ড ভাঙে। ৩ ডিসেম্বর সোমবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত রাজধানীতে মোট ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা গত ৫০ বছরের ডিসেম্বরে মাসে এক দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টির রেকর্ড। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের বৃষ্টি আগের ৫২ বছরের রেকর্ড ভেঙে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ২০১৮ সালের শুরুতে স্মরণকালের রেকর্ড ভেঙে শীতে তাপমাত্রা নেমে আসে ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তারপর শরৎকালে আকাশ ভেঙে নামে বৃষ্টি।

আমাদের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান বদরুল হাসান লিটন জানান, রাজশাহীতে এক দিনের বৃষ্টিপাতে ১০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বুধবার বেলা ১টা থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৪৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিতে শহরের রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর নির্বাচনী পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে এই দুর্ভোগের মধ্যে নগরের পাড়া-মহল্লায় লোকজন জাল নিয়ে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছেন। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এই মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ৪৩ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়। তার আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর ৩০ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার বেলা একটা পর্যন্ত রাজশাহীতে একটানা বৃষ্টি হয়েছে। বেলা একটার দিকে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টিতে নগরের রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। অনেক পুকুর ভেসে গেছে। নগরের টিকাপাড়া গোরস্থানের সামনের রাস্তায় হাঁটুপানি জমেছে। নগরের বোসপাড়া এলাকার অনেক ঘরবাড়িতে পানি উঠে গেছে। ওই এলাকার গৃহবধূ জুলেখা বেগম জানান, তার বাড়িতে পানি উঠেছে। পানির সঙ্গে মাছও ভেসে এসেছে। তার ছেলে বাড়িতে আধা কেজির মাগুর মাছ ধরেছে। মহিষবাথান, বর্ণালী মোড় এলাকায় প্রধান সড়কটিতে হাঁটুসমান পানি জমেছে। বর্ণালী মোড় থেকে সাহেববাজারের দিকে নেমে যাওয়া রাস্তাটিতে আরও বেশি পানি জমেছে। বর্ণালী মোড় থেকে পূর্বে কাদিরগঞ্জ হয়ে দড়িখড়বোনা-রেলগেট সড়কেও একইভাবে পানি জমেছে। নগরের উপশহর, ভদ্রাসহ মূল শহরের বাইরের এলাকাগুলোয়ও পানি জমে গেছে। এ এলাকায় একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন কম বেরোচ্ছেন। রাস্তাঘাটে যানবাহন কম।

রাজশাহীর পরিবেশবাদী সংগঠন হেরিটেজের প্রতিষ্ঠাতা নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি রিকশা নিয়ে তিন ঘণ্টা শহরে ঘুরেছেন। তিনি ৪৫টি জায়গায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখেছেন। তার মধ্যে নগরের প্রাণকেন্দ্র সিঅ্যান্ডবি এলাকায় মানুষের ব্যাপক দুর্ভোগ দেখেছেন। এ এলাকায় ড্রেনগুলো উঁচু। রাস্তাগুলো নিচু। এ জন্য বেশি পানি জমেছে। এ শহরের অন্তত ১০০টি পয়েন্টে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

জলবায়ুর প্রভাব এদিকে জলবায়ুর প্রভাবে সৃষ্ট এল নিনোর প্রভাবে বছরের সাত মাস প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে খরা আর ঘাম ঝরানো গরমে পুড়েছে ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকাবাসীর মানুষ। এল নিনোর প্রভাবে দাবানলে পুড়ে ছারখার হয়েছে অনেক দেশ। সেই উষ্ণ গরমের দাপট কমতে না কমতেই বিপরীত প্রতিক্রিয়া নিয়ে এসেছে লা নিনা। লা নিনার প্রভাবে অসময়ে অবিরাম বৃষ্টি ও হিমবাহ গলে বন্যা দেখা দিচ্ছে অনেক দেশে। অতিবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায়। যার প্রভাব পড়তে পারে বাজারে।

সাধারণত এল নিনোর পরপরই লা নিনা আসে। এল নিনোর বিপরীত প্রতিক্রিয়া হিসেবে লা নিনা শুরু হয়। এল নিনোর প্রভাবে সাগরে উষ্ণ পানির স্রোত প্রবাহিত হওয়ার পর পরে সাগরের পানির উষ্ণতা কমে আসে। সাগরের পানির এ উষ্ণতা কমে আসাকে লা নিনা নামে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। লা নিনার প্রভাবে অতিবৃষ্টি ও বন্যা হয়। ১৯৯৮ সালে লা নিনার প্রভাবে বাংলাদেশ ভারত ও চীনে ভয়াবহ এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হয়। ২০২০ সালের দীর্ঘ বন্যার জন্য লা নিনার প্রভাব দায়ী। চলতি ২০২৩ সালে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেছে লা নিনা। বছরের শেষ দিকে লা নিনা দেখা দিলে কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়। মাঠে থাকা আমন ধান, গম, ভুট্টা, আলু ও শীতকালীন সবজি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসের কৃষিকর্মীরা জানান, বন্যা ও ভূমিধসের মধ্য দিয়ে এশিয়ার ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে লা নিনা। এর প্রভাব পড়বে খাদ্য উৎপাদনেও। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে এল নিনো ও লা নিনা দ্রুত সক্রিয় হয়ে উঠছে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্যে, প্রতিবছর এক হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের ১৩ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ ঝুঁকিতে পড়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ওই গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে। ১৯৫০ সাল থেকে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে চীন, ভারত ও বাংলাদেশে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছে। প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অসময়ে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির বাড়াবাড়ির ফলে দেশে খাদ্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, নতুন নতুন দুর্যোগ বাড়ছে ও রোগ-বালাইয়ের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। অক্টোবরেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় শ্রাবণের মতোই বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টিপাতের এ আচরণ স্বাভাবিক নয় বলে বলছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষণা প্রতিবেদন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবহাওয়ার বৈরী আচরণে বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টে গেছে। এতে দেখা যায়, প্রতিবছর বৃষ্টিপাত টেকনাফে ৩৬ শতাংশ, কক্সবাজারে ২২ এবং পটুয়াখালী ও বরগুনায় ১৫ ও ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। অন্যদিকে ভোলা ও খুলনা-বাগেরহাট এবং সাতক্ষীরায় বৃষ্টিপাত ২০ শতাংশ করে কমে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায়, গত ৩০ বছরে দেশের চট্টগ্রাম বিভাগে বৃৃষ্টিপাত অব্যাহতভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে সেখানে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ শতাংশ বাড়ছে। অতিবৃষ্টির কারণে পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ধস হচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় লবণাক্ততা বাড়ছে। এতে ফসল উৎপাদন বিপর্যস্ত হচ্ছে। জলবায়ুর প্রভাবে বৃৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষক। আশ্বিন-কার্তিকের বৃষ্টি অস্বাভাবিক এবং কৃষির জন্য ক্ষতিকর।

২০১৭ সালের শুরুতে অতিবৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা আগাম ঢলে হাওড়ের ধান তলিয়ে যায়। ওই বছর ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে ১০০ বছরের রেকর্ড ভেঙে বেশি বৃষ্টি হয়। ওই পানি উজানের এলাকা বাংলাদেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চল দিয়ে বঙ্গোপসাগরে যাওয়ার সময় দেশের প্রায় ৮০ লাখ মানুষের ক্ষতি করে যায়। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসেও ব্যাপক বৃষ্টি হয়। বাংলা চৈত্র মাসে আষাঢ় মাসের মতো বৃষ্টি হয়। এতে আগাম বন্যায় আঘাত হানে শস্যভাণ্ডার খ্যাত দেশের হাওড়াঞ্চলে। অসময়ের বন্যায় হাওড়ের ফসলহানি হয়। ২০২১- ২০২২ সালেও স্মরণকালের বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় সিলেটে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আষাঢ়-শ্রাবণের সেই মুষলধারার বৃষ্টি এখন আর নেই। বর্ষাকালে বৃষ্টির পরিমাণও কমে গেছে। এতটাই কমেছে যে, সেটি স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে প্রায় ২৫ ভাগ কম। অথচ ২০২০ সালে উত্তর বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ুর অক্ষ ভারতের ওড়িশা ও উত্তর প্রদেশে সক্রিয় ছিল। মূলত উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত মেঘমালা হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি ঝরায়। ২০২০ সালে কালবৈশাখীর মৌসুমে বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। ২০২০ ও ২০২২ সালে দেশে আগের ১২ বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে।