বাংলাদেশই হবে সারা বিশ্বের যোগাযোগের হাব: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশই হবে সারা বিশ্বের যোগাযোগের হাব: প্রধানমন্ত্রী

সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে একসময় বাংলাদেশই হবে সারা বিশ্বের যোগাযোগের হাব। কক্সবাজার বা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, এটাই হবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহনের হাব। সেটাই আমরা বিশ্বাস করি। সেভাবেই আমরা তৈরি করতে চাচ্ছি।

তিনি বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এই টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী। তবে এটা প্রায় ২ কোটির কাছাকাছি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

শনিবার (৭ অক্টোবর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের যোগাযোগ ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনীতি উন্নতির জন্য একান্ত অপরিহার্য। আধুনিক যুগের নৌপথ সড়ক পথ রেলপথের সঙ্গে সঙ্গে আকাশ পথ সেটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বহন করে। বিশেষ করে, এদের সঙ্গে আমাদের যে যোগাযোগ সেই যোগাযোগের মূল বাহন হচ্ছে বিমান। অর্থাৎ আকাশ যাত্রাটা হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেটাকে গুরুত্ব দেই।

তিনি বলেন, ৯৬ সালে আমি যখন সরকারে আসি তখন আমাদের বিমানবন্দরের কোনো বোডিং ছিল না, পার্কিং লোড ছিল না, কিছুই ছিল না। আমরা সরকারে এসেই বিমানবন্দরের উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। চট্টগ্রাম এবং সিলেট এই দুই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও আমরা নির্মাণ করি। সঙ্গে শাহজালাল বিমানবন্দরের উন্নয়নের প্রকল্প গ্রহণ করি। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল এ সময়টাই বিমানবন্দরের উন্নয়নের যাত্রা শুরু হয়। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, যদি পারেন তাহলে ৯৬ সালে পূর্ব পর্যন্ত কী উন্নয়ন ছিল সেটা একটু দেখবেন।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের বিমানবন্দর আরও পর্যাপ্ত আধুনিক, সুযোগ-সুবিধা যাতে সৃষ্টি হয়, তার জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। কারণ, আমাদের দেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা বসবাস করে। তারা বিভিন্ন দেশে কাজ করে। আমাদের রেমিট্যান্স পাঠায়। তারাও যাতায়াত করে।

এর আগে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে তিনি শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল এরিয়ায় এসে পৌঁছান। এসময় দেশের গানের সঙ্গে মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশন করে তাকে স্বাগত জানানো হয়। এরপর অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ -এর বিভিন্ন অংশ ঘুরে ঘুরে দেখেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্সাল এম মফিদুর রহমানসহ বেবিচক ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তৃতীয় টার্মিনাল সম্পর্কে বেবিচক জানায়, তৃতীয় টার্মিনাল তিন তলা বিশিষ্ট। টার্মিনালের আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার এবং দৈর্ঘ্য ৭০০ মিটার ও প্রস্থ ২০০ মিটার। এ ভবনটির নকশা করেছেন রোহানি বাহারিন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুরের স্থপতি।

যাত্রীধারণ সক্ষমতা হবে বছরে ১৬ মিলিয়ন। তৃতীয় টার্মিনালের কার পার্কিংয়ে এক হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখা যাবে। উড়োজাহাজ পার্কিং বে থাকবে ৩৭টি। আগমনী যাত্রীদের জন্য লাগেজ বেল্ট থাকবে ১৬টি।

বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য এক হাজার ৩০০ বর্গমিটার আয়তনের একটি কাস্টম হল থাকবে। সেখানে থাকবে ৬টি চ্যানেল। চেক ইন কাউন্টার থাকবে ১১৫টি, এর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় ১৫টি। ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকছে ১২৮টি। এর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় ইমেগ্রেশন কাউন্টার ১৫টি।

এছাড়া থাকছে বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার ৬৬টি। আগমনী ইমিগ্রেশন কাউন্টার ৫৯টি, ভিভিআইপি ইমিগ্রেশন কাউন্টার ৩টি। বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে প্রথম পর্যায়ে ১২টি। পরবর্তী সময় স¤প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় আরো ১৪টি বোর্ডিং ব্রিজ যুক্ত করা হবে। বর্তমান টার্মিনাল ২টির সঙ্গে তৃতীয় টার্মিনালের কোনো সংযোগ থাকবে না। তবে পরবর্তীতে প্রকল্পে করিডোর নির্মাণ করা হবে।

বেবিচক কর্মকর্তারা আরো জানান, এরই মধ্যে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ (যন্ত্রপাতি স্থাপন, জনবল নিয়োগ, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং) করা হবে উদ্বোধনের পর। পরে আগামী বছরের ডিসেম্বরের দিকে টার্মিনাল ব্যবহারের সুযোগ পাবেন যাত্রীরা।