গাজায় এক সপ্তাহে বাস্তুচ্যুত ১০ লাখ মানুষ : জাতিসংঘ

গাজায় এক সপ্তাহে বাস্তুচ্যুত ১০ লাখ মানুষ : জাতিসংঘ

সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান সংঘর্ষে গাজায় সাতদিনে অন্তত ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)।

রোববার (১৫ অক্টোবর) ফিলিস্তিনে নিযুক্ত সংস্থাটির যোগাযোগবিষয়ক পরিচালক জুলিয়েট তোমা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, গাজায় সংঘাতের প্রথম সপ্তাহে প্রায় দশ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। কয়েকদিন ধরে ইসরায়েলের টানা বোমাবর্ষণে উপত্যকার মানুষের জীবনে ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জাতিসংঘের কর্মীরা জানিয়েছেন।

সংস্থাটির কর্মকর্তা আজম সহকর্মীদের কাছে পাঠানো এক বার্তায় বলেছেন, এমন দিনে গাজায় থাকা মানেই কোনো রকমে বাঁচা। এটি জীবন নয়।

এছাড়া জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা জানিয়েছেন, ইসরাইলের কয়েকদিনের টানা বোমাবর্ষণে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

গত শনিবার (১৪ অক্টোবর) ভোরের দিকে হামাসের হামলার মাধ্যমে শুরু হওয়া যুদ্ধে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে।

রোববার (১৫ অক্টোবর) কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বলছে, হামাসের হামলায় ইসরায়েলে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ ছাড়িয়েছে। অপরদিকে দখলদার ইসরায়েলের বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৪৫০ ফিলিস্তিনি।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর রোববার ইসরায়েলিদের হতাহতের নতুন সংখ্যা প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মুখপাত্র তাল হেনরিখ সাংবাদিকদের বলেছেন, হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি (ইসরায়েলি) নিহত হয়েছেন। এছাড়া জিম্মি রয়েছেন ১২০ জনেরও বেশি।

অপরদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে ২ হাজার ৪৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৯ হাজার ২০০ জনে পৌঁছেছে।

ইসরায়েলের বিমান হামলায় যেসব ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন তাদের অনেকের মরদেহ আইসক্রিমের ফ্রিজারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কারণ মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া মরদেহ সমাহিত করার মতো পর্যাপ্ত জায়গাও নেই।

দেঈর আল-বালাহর সুহাদা আল-আকসা হাসপাতালের চিকিৎসক ইয়াসের আলী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, হাসপাতালের মর্গে শুধুমাত্র ১০টি মরদেহ রাখা যায়। এ কারণে আইসক্রিমের ফ্যাক্টরি থেকে আইসক্রিমের ফ্রিজার এনেছি যেন অসংখ্য শহীদকে রাখা যায়।

যেসব গাড়িতে এসব মরদেহ রাখা হয়েছে সেগুলোতে তখনো মুখে হাস্যোজ্জল শিশুদের আইসক্রিম খাওয়ার ছবি শোভা পাচ্ছিল। এসব ফ্রিজার মূলত সুপারমার্কেটগুলোতে আইসক্রিম সরবরাহ করত। এখন হামাস-ইসরায়েলের বিপর্যয়কারী যুদ্ধে নিহত মানুষদের জন্য অস্থায়ী মর্গ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব ফ্রিজার।

অস্থায়ী মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আলী নামের এক ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেছেন, এসব ফ্রিজার থাকা সত্ত্বেও এই হাসপাতালের প্রধান মর্গসহ মরদেহ সংরক্ষণের সবকিছু পূর্ণ হয়ে গেছে। ২০-৩০টি মরদেহ তাঁবুর ভেতরও রাখা হয়েছে। তিনি রয়টার্সের প্রতিনিধিকে একটি ফ্রিজারের দরজা খুলে দেখিয়েছেন কীভাবে কাফনে মোড়ানো কয়েকটি মরদেহ একসঙ্গে রাখা হয়েছে।

এরআগে, ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আক্রমণ অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে সবচেয়ে বড় হামলা ছিল। এ ঘটনার পর ইসরায়েল বড় প্রতিক্রিয়া দেখাবে– এমনটাই ভেবেছিল ফিলিস্তিনিরা। এরপর ইসরায়েলি বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয় আবাসিক ভবনগুলোকে। নির্বিচার হামলায় গাজা এখন মৃত্যুকূপে পরিণত।