শুধু হামাস নয় ইসরাইলের ধ্বংস চায় আরো ১০ সংগঠন

শুধু হামাস নয় ইসরাইলের ধ্বংস চায় আরো ১০ সংগঠন

ছবিঃ সংগৃহীত

শুধু হামাস নয় ইসরাইলের ধ্বংস চায় আরও ১০ দল। দখলদার ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলকে ধ্বংস করে নিজেদের ভূখণ্ড ফিরিয়ে নিতে ফিলিস্তিনে গড়ে ওঠে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল। যাদের প্রায় সবগুলোতেই আবার গড়ে উঠেছে সশস্ত্র শাখা। সবার উদ্দেশ্য একটাই ইসরাইলের দমন-পীড়ন-অত্যাচার ও মানচিত্রখেকো আগ্রাসন থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষা করা। ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়তে প্রয়োজনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করবে একসঙ্গে।

 

ইজ আল-দিন কাসেম ব্রিগেড (আইকিউবি)

হামাসের সামরিক শাখা ইজ আল-দিন কাসেম ব্রিগেড (আইকিউবি)। ফিলিস্তিনের ইজ আল-দিন কাসেম নামক একজন মুসলিম ধর্ম প্রচারকের নামানুসারে এই দলটির নামকরণ। ১৯৯১ সালের মাঝামাঝি সময়ে দলটি গঠন করা হয়। ইসরাইলের হাত থেকে ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন করা ও ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই এর মূল লক্ষ্য। ইজ আল-দিন কাসেম ব্রিগেড ইসরাইলের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বড় বড় অভিযান পরিচালনা করে। এটিকে গাজার প্রথম বৃহত্তম সশস্ত্র দল হিসাবে অভিহিত করা হয়।

আল-নাসির সালিহ আল-দীন

গাজার সশস্ত্র বাহিনীর গ্রুপ পপুলার রেজিস্ট্যান্স কমিটির (পিআরসি) সশস্ত্র শাখা আল-নাসের সালাহ আল-দীন ব্রিগেড। যদিও বাস্তবে উভয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই বলে মনে করা হয়। পিআরসি বর্তমানে আবু ইয়াসির শশনেহের নেতৃত্বে রয়েছে। পিআরসি ইসলামি আদর্শে অনুপ্রাণিত। হামাসের ইজ আল-দিন আল-কাসাম ব্রিগেড (আইকিউবি) এবং ইসলামিক জিহাদের আল-কুদস ব্রিগেডের (একিউবি) পরে আল-নাসির সালিহ আল-দীন গাজায় তৃতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র দল। পিআরসি তারা হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) শক্তিশালী মিত্র। 

 

আল-আকসা শহিদ ব্রিগেড (এএমবি)

আল-আকসা শহিদ ব্রিগেড (এএমবি) ফিলিস্তিনের নেতৃত্বাস্থানীয় দল ফাতাহর সশস্ত্র শাখা। ২০০০ সালের শেষ দিকে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে গঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে এটি গাজা ও পশ্চিম তীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। লেবাননে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরেও এর সদস্য থাকতে পারে। মুক্তিকামী এ দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত বা প্রকাশ্যে ফাতাহ দ্বারা সমর্থিত না হলেও অনেক ফাতাহ নেতা এএমবির সঙ্গে একটি অস্পষ্ট সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। গোষ্ঠীটি মূলত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরাইলি বাহিনী এবং ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের তাড়িয়ে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ধারণা করা হয়, কয়েকশ যোদ্ধা নিয়ে দলটি গঠিত হয়েছে। গোষ্ঠীটির নির্দিষ্ট কোনো নেতা নেই। তবে প্রতিটি সেলের নিজস্ব স্থানীয় নেতা এবং স্বাধীন অপারেশনাল এজেন্ডা রয়েছে। ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের মতে, আল-আকসা শহিদ ব্রিগেড স্থানীয়, স্বায়ত্তশাসিত ইউনিট নিয়ে গঠিত। যারা স্বাধীনভাবে কাজ করে। আল-আকসা শহিদ ব্রিগেডের সঙ্গে ফাতাহর নেতৃত্বের সরাসরি সম্পর্ক আছে কি না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যদিও ব্রিগেডটি ফাতাহের একটি সশস্ত্র শাখা হিসেবে গঠিত হয়েছিল।

 

তুলকারম ব্রিগেড

ফিলিস্তিন অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বাহিনীর মোকাবিলায় তুলকারম ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী শাখা আল-কুদস ব্রিগেডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অধিকৃত পশ্চিম তীরে কাজ করে। অন্যান্য মুক্তিকামী দলের মতো তাদেরও লক্ষ্য ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিকে রক্ষা করা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্রিগেডের মুখপাত্র বলেন, ‘ইহুদিবাদীদের অপরাধের জবাব দেওয়ার জন্য তুলকারম ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। আমরা তাদের আগ্রাসনের জবাব দিতে প্রস্তুত।’ তুলকারম অধিকৃত পশ্চিম তীরের প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার বসতির একটি ছোট্ট জেলা শহর। 

 

লায়ন্স ডেন

পশ্চিম তীরভিত্তিক ফিলিস্তিনির নতুন এ মুক্তিকামী সংগঠনটি ইসরাইলের আরেক ত্রাস। পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরে দলটির মূল ঘাঁটি। ২০২২ সালের আগস্টে ইসরাইলি বাহিনী নাবলুস শহরের বিশিষ্ট নেতা ইব্রাহিম আল-নাবলুসিকে হত্যা করে। এ ঘটনার পরপরই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটি নিয়মিতভাবে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও লায়ন্স ডেনের অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই। তবে ধারণা করা হয়, এটি শহরটির প্রচলিত একটি দল ‘নাবলুস ব্যাটালিয়ন’ থেকে বেড়ে উঠেছে। গ্রুপের অনেক সদস্যের ফাতাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলেও মনে করা হয়। ইসরাইলি সূত্রের মতে, লায়ন্স ডেনটি আদম আল-শিশানি, মোহাম্মদ আল-দাখিল, আশরাফ মুবাসলাত এবং ইব্রাহিম আল-নাবলুসির সমন্বয়ে গঠিত হয়। যাদের বয়স ছিল ২৫ বছরেরও কম। ইসরাইলি বাহিনীর হাতে সবাই নিহত হয়েছেন।

 

আবু আলী মুস্তফা ব্রিগেডস

আবু আলী মুস্তফা ব্রিগেড ফিলিস্তিনের পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) বাহিনীর সশস্ত্র শাখা। তারা পশ্চিম তীর এবং গাজা উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করে। সশস্ত্র দলটির নামকরণ করা হয়েছে নিহত পিএফএলপি নেতা আবু আলী মুস্তফার নামে। যিনি ২০০১ সালে ২৭ আগস্টে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন। আবু আলী মুস্তফার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ২০০১ সালে আত্মঘাতী বোমা হামলা, রকেট হামলার অভিযান চালায়। ইসরাইলি পর্যটনমন্ত্রী রেহাভাম জেইভিকে হত্যার মাধ্যমে দলটি দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় তাদের কার্যক্রম আরও জোরদার করে। সম্প্রতি পিএফএলপির সশস্ত্র শাখা আবু আলী মুস্তফা ব্রিগেডের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানাায়, দলটি হিজবুল্লাহ থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট আরও জানায়, পিএফএলপি এয়ারলাইন হাইজ্যাকিংসহ ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশকে বড় আকারের অন্তর্জাতিক অভিযানের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিল।

 

ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ব্রিগেড

ফিলিস্তিনের ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (ডিএফএলপি) বাহিনীর সামরিক শাখাটিই হলো ‘ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ব্রিগেড’। দলটি ১৯৬৯ সালে গঠিত হলেও ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরের শেষদিকে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু হওয়ার পর ডিএফএলপির সশস্ত্র শাখা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ২০০৭ সালে আল-আকসা শহিদ ব্রিগেডসহ অন্যান্য ফিলিস্তিনি উপদলের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০১৭ সালের মে মাসে তারা ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি বন্দিদের রক্ষা ও জনগণের অধিকার রক্ষা করার জন্য গাজা উপত্যকার একটি সামরিক প্রশিক্ষণের স্থানে আবদেল কাদের আল হুসাইনি ব্রিগেডের সঙ্গে একটি যৌথ মহড়া পরিচালনা করে। চলমান ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে যোগ দিয়েছে ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ব্রিগেড।

 

আবদেল কাদের আল হুসাইনি ব্রিগেড

ফাতাহর আরেকটি সশস্ত্র শাখা ‘আবদেল কাদের আল হুসাইনি ব্রিগেড’। দলের একমাত্র লক্ষ্য ইসরাইলের ধ্বংস। চলমান যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে দলটি হামাস ও ইসলামিক জিহাদি বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। 

 

আল-মুজাহিদিন ব্রিগেড

আল-মুজাহিদিন ব্রিগেড ফিলিস্তিনি মুজাহিদিন আন্দোলনের সশস্ত্র শাখা। তারা গাজা এবং পশ্চিম তীরে (জেনিনসহ) কাজ করে। ব্রিগেডটি ইসলামিক জিহাদের আল-কুদস ব্রিগেডের সহযোগিতায় কাজ করছে। ফিলিস্তিনি মুজাহিদিন আন্দোলনের মহাসচিব ডক্টর আসাদ আবু শারিয়া। দলটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযানের পুরো প্রস্তুতিতে রয়েছে। আল-মুজাহিদিন ব্রিগেডের ফিল্ড কমান্ডার আবু হামজা ইসরাইলকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘তারা প্রস্তুত এবং সক্ষম। ইসরাইলকে পরাজিত করার জন্য অপেক্ষা করছেন।’