ভারতে ১৯ শিশুকে ধর্ষণ-হত্যা: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ আসামি খালাস

ভারতে ১৯ শিশুকে ধর্ষণ-হত্যা: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ আসামি খালাস

ছবিঃ সংগৃহীত।

ভারতের বহুল আলোচিত ‘নিঠারি হত্যা’ মামলায় খালাস পেয়ে গেছেন প্রধান আসামি সুরিন্দর কোলি ও তার সহযোগী মনিন্দর সিং পান্ধার।

সোমবার (১৬ অক্টোবর) অপরাধের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে অন্তত ১২ মামলায় তাদের নির্দোষ ঘোষণা করে বেকসুর খালাস দেন এলাহাবাদ হাইকোর্ট। এমনকি, তাদের মৃত্যুদণ্ডের রায়ও বাতিল করা হয়েছে।

 

এদিকে, মামলার তদন্তকারী সংস্থার প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত ও আইনজীবীদের অপরাধ প্রমাণে ব্যর্থতার ফলে এই রায় দিতে হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাহাবাদ হাইকোর্ট। এর আগে ১২টি মামলার মধ্যে সুরিন্দরকে পাঁচটিতে ও মনিন্দরকে দুটিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

পুরো রায়ের কপি পুরোপুরি প্রকাশ না করলেও এলাহাবাদ হাইকোর্ট বলেছে, নিঠারি মামলার সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) ও নয়ডা পুলিশের তদন্ত পরিচালনা ছিল পুরোপুরি ব্যর্থ ও জনগণের আস্থার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার মতো। এমনকি বিচারকরাও যুক্তিসঙ্গতভাবে আসামিদের অপরাধ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে ও একটি সংগঠিত অঙ্গ ব্যবসার সম্ভাবনাসহ মূল বিষয়গুলো বাদ দিয়ে গেছেন।

২০০৬ সালে দিল্লির অভিজাত এলাকা নয়ডায় মনিন্দরের বাড়ির সামনের নর্দমায় ব্যাগের ভেতর মানবদেহাংশ এবং শিশুদের জামাকাপড় পাওয়া যায়। তা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়েই হাড়হিম করা ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের খবর বেরিয়ে আসে। জানা যায়, অন্তত ১৯ নারী ও শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার পর তাদের দেহ টুকরো করে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।

 

সুরিন্দর ও মনিন্দরকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে বাড়ির আশেপাশে তাদের দেখিয়ে দেওয়া জায়গা থেকে আরও কিছু দেহাবশেষ উদ্ধার করে পুলিশ। সে সময় অভিযোগপত্রে পুলিশ বলেছিল, মনিন্দরের বাড়িতেই ওইসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে। যেখানে সুরিন্দর ছিল তার চাকর।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, সুরিন্দরই চকলেট ও মিষ্টির লোভ দেখিয়ে শিশুদের বাড়ির ভেতর নিয়ে যেতেন। এমনকি, জিজ্ঞাসাবাদে সুরিন্দর স্বীকার করেন যে তিনি মানুষের মাংস খেতেন ও মরদেহের সঙ্গে সহবাসে আসক্ত ছিলেন। যদিও আদালতে তিনি তা অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ তাকে মারধর করে এই স্বীকারোক্তি আদায় করেছে।

 

সিবিআই এই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা দায়ের করে, যেগুলোতে সুরিন্দরের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ ও আলামত নষ্টের অভিযোগ আনা হয়। অন্যদিকে, মনিন্দরের বিরুদ্ধে আনা হয় মানবপাচারের অভিযোগ। ২০০৯ সালে তারা দোষী সাব্যস্ত হন ও তাদের দুজনকেই মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন গাজিয়াবাদের সিবিআই আদালত।

 

২০১৪ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক মাসের জন্য ফাঁসির আদেশ স্থগিত রাখার পর পুনরায় মৃত্যুদণ্ড বহাল ঘোষণা করেন। সে সময় প্রাণভিক্ষা চেয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির কাছে আবেদনও করেন আসামিরা। তবে প্রণব মুখার্জি সে আবেদন প্রত্যাখ্যান করে দেন।

 

ভয়াবহ ওই হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরেই ভারতজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তোলেন অনেকে। কারণ, পুলিশ একাধিক অভিযোগ পেয়েও নিখোঁজ নারী ও শিশুদের খুঁজে বের করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি।

জানা গেছে, যারা নিখোঁজ হয়েছিল তাদের বেশিরভাগই মনিন্দরের বাড়ির কাছে অবস্থিত নিঠারি বস্তিতে বসবাস করতো। তাই এই ঘটনা ‘নিঠারি হত্যাকাণ্ড’ নামেই পরিচিতি পায়।