স্থল হামলায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে ইসরাইল

স্থল হামলায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে ইসরাইল

সংগৃহীত

গাজা উপত্যকায় স্থল হামলায় বড় ধরনের কোনো সাফল্য পাচ্ছে না ইসরাইল। তারা প্রায় এক মাস ধরে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েও গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক সক্ষমতায় তেমন কোনো ক্ষতিও করতে পারেনি। আর এ কারণেই আর প্রবল আক্রমণ চালাচ্ছে ইসরাইল। এমন মন্তব্য করেছেন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষক মইন রাব্বানি।

ইসরাইল রাষ্ট্রের মানসিকতা নিয়ে রাব্বানি আল জাজিরাকে বলেন, তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য হাসিল করতে ব্যর্থ হয়েই গাজাকে মৃত্যুক্ষেত্রে পরিণত করছে। তারা এসব গণহত্যা চালাচ্ছে স্থল হামলায় সফল না হওয়ার কারণেই। এটা তাদের কাছে একটি বিকল্প বিবেচিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, তারা লাশ গুণে, তাদের রক্তলোলুপতাকে সন্তুষ্ট করছে। তিনি বলেন, ‌'আমার মনে হচ্ছে, ইসরাইলি নেতৃত্বের অনেকেই ইতোমধ্যেই বুঝে গেছে যে তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারছে না। আর কারণেই তারা বলছে যে তাহলে আমরা গাজা উপত্যকাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেই, আমরা হাজার হাজার লোককে হত্যা করি, আমরা তাদের ওপর মধ্যযুগের অবরোধ চাপিয়ে দেই, আমাদের বলবে না যে আমরা কোনো কিছু হাসিল করতে পারিনি।'

উল্লেখ্য, ইসরাইলি বাহিনী গাজা সিটিকে ঘিরে ফেলার দাবি করেছে।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা গাজায় হামাসের ১৩০ জন যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। তারা হামাসের রকেট নিক্ষেপস্থল, সামরিক ভাণ্ডার, টানেল সিস্টেমে হামলা অব্যাহত রেখেছে।

তারা বড় সাফল্যের দাবি করার সাথে সাথে ব্যাপক ক্ষতির কথাও স্বীকার করেছে। গাজা উপত্যকায় তারা ১৯ জন সৈন্যকে হারিয়েছে। ফলে ৭ অক্টোবর থেকে তাদের মোট সৈন্য নিহত হয়েছে ৩৩৫ জন।

ইসরাইল থেকে রাষ্ট্রদূতদের ফিরিয়ে নিয়েছে বাহরাইন
বাহরাইনের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বৃহস্পতিবার ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের জন্য ইসরাইলের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত এবং উভয় পক্ষের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে।
বাহরাইনের সরকারের গণমাধ্যম শাখা ন্যাশনাল কমিউনিকেশন সেন্টার (এনসিসি) ‘কিছু সময় আগে’ রাষ্ট্রদূতদের ফিরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, কিন্তু বাণিজ্য সম্পর্কের বিষয়ে কিছু জানায়নি।’

ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ২০২০ সালে ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী মার্কিন মিত্র বাহরাইনের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাদের অবহিত করা হয়নি।
বাহরাইন সংসদের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিনিধি পরিষদ নিশ্চিত করেছে যে, ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত বাহরাইন ত্যাগ করেছেন এবং ইসরায়েল থেকে বাহরাইনের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

নিম্নকক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরাইলের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্কও স্থগিত করা হয়েছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এবং ভ্রাতৃপ্রতীম ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ অধিকারের সমর্থনে’ এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

পার্লামেন্টের প্রথম ডেপুটি স্পিকার আবদুলনবি সালমান এএফপি’কে সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘গাজার চলমান সংঘাত নীরবতা সহ্য করা যায় না।’
এনসিসি বলেছে, অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে ‘বেসামরিকদের জীবন রক্ষায় এই পর্যায়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

২০২০ সালে মার্কিন-মধ্যস্থতায় আব্রাহাম চুক্তির অংশ হিসেবে বাহরাইন এবং ইসরাইল কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। চুক্তির অধীনে, ইসরাইল সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মরক্কোর সাথেও সম্পর্ক স্থাপন করে।

ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে, বাহরাইন সরকার এবং ইসরায়েল সরকারের কাছ থেকে এই দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কোনো ঘোষণা বা সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।’

মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইসরাইল এবং বাহরাইনের মধ্যে সম্পর্ক স্থিতিশীল’ রয়েছে।
ইসরাইলে হামাস যোদ্ধাদের হামলার পর থেকে, ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বোমাবর্ষণ করেছে এবং একটি আক্রমণে স্থল সেনা পাঠিয়েছে।

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরাইলের বেপরোয়া বিধ্বংসী হামলায় গাজায় ৯,০০০-এরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। তাদের দুই-তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু।

বাহরাইনে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক হামলার নিন্দা জানিয়ে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ দেখা গেছে।

সূত্র : আল জাজিরা ও এএফপি