সমুদ্রের গ্রাসের হুমকির মুখে আলবেনিয়ার উপকূল অঞ্চল

সমুদ্রের গ্রাসের হুমকির মুখে আলবেনিয়ার উপকূল অঞ্চল

সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম স্পষ্ট দৃষ্টান্ত ভূমিক্ষয়। শুধু নদী নয়, বেড়ে চলা পানির স্তরের কারণে সমুদ্রের উপকূলও সঙ্কুচিত হচ্ছে। আলবেনিয়ার এক এলাকার মানুষ কয়েক দশকের মধ্যে নাটকীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন।

আলবেনিয়ার উত্তরের লেগুন বা উপহ্রদগুলি যেন স্বর্গরাজ্য। ডেমুশ জেসইয়া প্রায় চার দশক ধরে সেখানে জেলের কাজ করছেন। তবে তার মতে, বেশ কয়েক বছর ধরে মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যখন থেকে লেগুনে কাঁকড়া এসেছে, তখন থেকে সাধারণ ও ইল মাছের সংখ্যা কমে চলেছে। প্রতি বছর আমাদের জালে কম মাছ ধরা পড়ছে। আগে এই লেগুনে অনেক জাতের মাছ পাওয়া যেতো। কয়েক হাজার কিলো মাছ ধরতে পারতাম।

অ্যাড্রিয়াটিক সাগর থেকে এই উপহ্রদের মাঝে শুধু চিকন একফালি জমি রয়েছে। সমুদ্রের স্তরের উচ্চতা বেড়ে চলায় ব্লু ক্র্যাব জাতের কাঁকড়া লেগুনে প্রবেশ করতে পারছে। ইয়াক গিনিও মনে করেন, যে কাঁকড়া লেগুনের প্রাকৃতিক মৎসভাণ্ডারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। আঞ্চলিক পরিবেশ সংরক্ষণকারী হিসেবে তিনি জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করেন।

এই জীববিজ্ঞানীর মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই একফালি এই জমি সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। গিনি বলেন, সমুদ্রে ঝড় বাড়ছে, ভূমিক্ষয় হচ্ছে, তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। বন্যাও লেগুনের উপর প্রভাব ফেলছে।

ইয়াক গিনির মতে, রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ না করলে সমুদ্র শুধু এই সব উপহ্রদই গ্রাস করে নেবে না, আলবেনিয়ার উপকূলও সঙ্কুচিত হবে। দেশের উপকূলের আনুমানিক প্রায় এক তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যেই ভূমিক্ষয়ের শিকার হয়েছে।

প্রায় চার দশক আগে কমিউনিস্ট জমানায় এক বাংকার তৈরি হয়েছিল। সে সময়ে সেটি সমুদ্র থেকে প্রায় ৪০ মিটার দূরে ছিল। এমন অনেক বাংকার আজ পানির নিচে চলে গেছে। সমুদ্র আরো কয়েকটিকে গ্রাস করে নিতে চলেছে। সমুদ্রের গ্রাসের কারণে সঙ্কুচিত হয়ে পড়া সৈকতে পর্যটকদের জন্য বরাদ্দ জায়গাও কমছে। স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, গত বছর আমাদের এখানে আরো ছাতা ছিল। এ বছর একটি সারি কম করতে হয়েছে। কে জানে পরের বছর কী হবে! হয়তো আরো একটি সারি উধাও হয়ে যাবে।

একই সঙ্গে নতুন হোটেল গজিয়ে উঠছে, যা ভূমিক্ষয় আরো তরান্বিত করবে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। ফাটিয়োন নোকার বাবা নব্বইয়ের দশকের শেষে যে রেস্তোরাঁ গড়ে তুলেছিলেন, সেটিও সমুদ্রের গ্রাসে হারিয়ে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। ফাটিয়োন বলেন, আগে গ্রামের বাসিন্দারা এখানে আসতেন। তখন গোটা এলাকা সবুজ ছিল। অনেকটা অ্যামাজনের মতো দেখতে জঙ্গল ছিল। আজকের হাল নিজের চোখেই দেখুন।

ভূমিক্ষয় বন্ধ করতে তিনি আলবেনিয়ার সরকারের আরো পদক্ষেপের দাবি করছেন। রাজধানী টিরানায় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে ক্লোদানা মারিকা তার বক্তব্য জানালেন। উপকূল এলাকায় প্রকৃতি সংরক্ষণও তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আলবেনিয়ার পরিবেশ ও পর্যটন মন্ত্রী ক্লোদানা মারিকা বলেন, আমরা রূপায়নের জন্য সংগ্রাম করছি। আমাদের যথেষ্ট আর্থিক সম্পদ নেই, কর্মীর সংখ্যাও কম। কারণ অর্থায়নের বিষয়টি সব সময়ে সেই সব মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যাদের প্রয়োজন।

তিনি বলেন, বর্তমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটের এক শতাংশেরও কম পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য ধার্য করা হচ্ছে। আলবেনিয়ার আরো তিরিশ গুন বেশি অর্থ ব্যয় করা উচিত। কিন্তু দরিদ্র এই দেশের হাতে সেই টাকা নেই।

আবার উপহ্রদে ফেরা যাক। যে সব মানুষ বাসস্থান ও জীবিকার জন্য লেগুনের উপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য হুমকি বেড়েই চলেছে। ডেমুশ জেসইয়া বলেন, বহু বছর আগেই এই সব লেগুন ক্ষতির প্রাথমিক লক্ষণ দেখিয়েছিল। কিন্তু এখানে যে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে, আমরা এমন আশঙ্কাকে গুরুত্ব দেইনি।

ডেমুশ বলেন, বিশাল পরিমাণে মাছ ধরার সময় শেষ হয়ে গেছে। আরো বেশি জেলে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। এখন একমাত্র ব্লু ক্র্যাবের কোনো অভাব নেই।