ইসরাইল-ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্র সমাধান কি সম্ভব?

ইসরাইল-ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্র সমাধান কি সম্ভব?

ইসরাইল-ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্র সমাধান কি সম্ভব?

হামাস-ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধে চার দিনের বিরতি ও বন্দী বিনিময় চলছে। পেরিয়ে গেছে ৪৮ ঘণ্টা। এরই মধ্যে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বান বাড়ছে।রোববার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চার দিনের যুদ্ধ বিরতির মধ্যে ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে নতুন করে আন্তর্জাতিক আহ্বান বাড়ছে।প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দুই-রাষ্ট্র সমাধান নিয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু করার এখ্নই সেরা সময়।

আল জাজিরার সাংবাদিক জেমস বেসের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন- অ্যালন লিয়েল, ফিলিস বেনিস ও মুস্তাফা বারঘৌতি। তারা পুরনো দ্বন্দ্বের স্থায়ী সমাধানের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে যোগ দিয়েছিলেন।

দুই রাষ্ট্র সমাধানে কী ছিল?
ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল পৃথক দুটি রাষ্ট্রের ধারণা প্রথমবারের মতো বাস্তবতার দিকে এগোতে শুরু করে ১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে ফিলিস্তিন-ইসরাইলের শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। যেটা অসলো অ্যাকর্ড নামে পরিচিতি।এই চুক্তিতে পশ্চিম তীর এবং গাজায় সরকার পরিচালনার জন্য একটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়। এটা গঠনের সময়সীমা ছিলো পাঁচ বছর।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা স্বীকার করে নেয় ইসরাইল রাষ্ট্রকে।চুক্তি অনুযায়ী অবশ্য খুব দ্রুতই পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকা নিয়ে সম্ভাব্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি কর্তৃপক্ষও গঠন করা হয়।কিন্তু তারপরই শান্তি প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। নানারকম বাধা তৈরি হয়।

শান্তি প্রক্রিয়া কেন স্থবির হলো?
অসলোতে দুই রাষ্ট্র সমাধান মেনে নেয়া হলেও সেই রাষ্ট্র কবে গঠন হবে তার কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি।এমনকি ইসরাইলের বাইরে আলাদা একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চারটি বিষয়েরও কোনো সমাধান করা হয়নি।এই চারটি বিষয় হচ্ছে, প্রথমত- দুই রাষ্ট্রের সীমান্ত কোথায়, কিভাবে নির্ধারণ হবে সেটা।

দ্বিতীয়ত- জেরুসালেম কার অধীনে থাকবে। তৃতীয়ত- ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ভেতরে থাকা ইসরাইলি বসতিস্থাপনকারীদের কিভাবে সরিয়ে নেয়া হবে।

এবং চতুর্থত- ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের পর থেকে ইসরাইলের ভেতরে থাকা যেসব ফিলিস্তিনি বাস্তচ্যুত হয়েছেন, তারা ইসরাইলে কিভাবে ফিরবেন।চুক্তিতে বলা হয়েছিল, পাঁচ বছরের মধ্যে একটি ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ গঠনের পর এগুলো আলোচনার ভিত্তিতে পরে ঠিক করা হবে। কিন্তু সেটা আর কখনোই হয়নি।

এদিকে যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে ১৩ ইসরাইলি ও ৩৯ ফিলিস্তিনির মুক্তির পর শনিবার ১৪ ইসরাইলির মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে ৪২ ফিলিস্তিনির মুক্তি দেয় ইসরাইল।জানা গেছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ১৪ হাজার ৮৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৮ হাজারেরও বেশি শিশু এবং নারী। আহত হয়েছে ২৮ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ।

গত মাস থেকে অবরুদ্ধ ছিটমহলে ইসরাইলের অবিরত বিমান ও স্থল হামলায় হাসপাতাল, মসজিদ এবং গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ইতোমধ্যে ১ হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছে।

উল্লেখ্য, গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করেছে বলে ঘোষণা করে। এর প্রতিরোধে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরাইল।

এক বিবৃতিতে হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ বলেন, গত শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে ইসরাইলে পাঁচ হাজার রকেট বর্ষণের মাধ্যমে ‘অপারেশন আল-আকসা স্ট্রম’ শুরু হয়েছে। এ সময় ইসরাইল গাজা থেকে অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করে।বস্তুত, ১৯৫৩ সালের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার যুদ্ধ শুরু হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে।
সূত্র : আল-জাজিরা