কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা

কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা

প্রতীকী ছবি

ইসলাম আমাদের কাছে ধর্ম হিসেবে পরিচিত হলেও এটি অন্যান্য ধর্মের মতো মোটেও গতানুগতিক কোনো ধর্ম নয়। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। আমরা সবাই জানি আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালা। আর ইসলাম তারই প্রদর্শিত জীবনব্যবস্থা। মানুষের সৃষ্টিকর্তা যিনি, তার প্রদর্শিত জীবনব্যবস্থা যে সবচেয়ে সেরা এবং মানবজাতির জন্য সর্বাধিক কল্যাণকর তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু, ব্যক্তি থেকে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম আবশ্যক।

জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম যেমন অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়, নাজ-নিয়ামত ও জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে থাকে; তেমনি ইসলামে বেশ কিছু নিষিদ্ধ কাজ রয়েছে। এগুলোকে গুনাহ বলা হয়। গুনাহের কাজ নিঃসন্দেহে মানুষের জন্য ক্ষতিকর। গুনাহের মধ্যে কম-বেশি এবং গভীরতা হিসেবে ছোট গুনাহ এবং বড় গুনাহ ভাগ করা হয়েছে। শরিয়তের পরিভাষায় বড় গুনাহগুলোকে ‘কবিরা গুনাহ’ এবং ছোট গুনাহগুলোকে ‘ছগিরা গুনাহ’ বলা হয়। আজকে আমরা কবিরা গুনাহ সম্পর্কে জানব।

কবিরা গুনাহ কাকে বলে? কিংবা কবিরা গুনাহ কী? এটা কেউ কেউ জানেন, আবার অনেকে জানেন না। মূলত কবিরা গুনাহ বলা হয় সেসব বড় বড় পাপকর্মকে যেগুলোতে নিম্নোক্ত কোনো একটি বিষয় পাওয়া যাবে: যেসব গুনাহের ব্যাপারে ইসলামি শরিয়তে জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হয়েছে, যেসব গুনাহের ব্যাপারে দুনিয়াতে নির্ধারিত দণ্ড প্রয়োগের কথা রয়েছে, যে কাজের ব্যাপারে বলা হয়েছে- যে ব্যক্তি এমনটি করবে সে মুসলমানদের দলভুক্ত নয়, যে কাজের ব্যাপারে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যেসব বিষয়কে মুনাফেকির আলামত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যে কাজকে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইত্যাদি।

গুনাহের কাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অনেক অপছন্দ করেন। মানবজাতি সৃষ্টির অন্যতম একটি উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সুরা আয যারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘আর আমি জ্বিন এবং মানবজাতিকে শুধু আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি’। তেমনি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার অনেক অনেক উপকারিতা রয়েছে।

কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকার মর্যাদা: মহান আল্লাহ বলেন, ‘যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে, যদি তোমরা সেসব বড় গুনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পার, তবে আমি তোমাদের (ছোট) গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।’ (সুরা নিসা: ৩১)

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান এতদুভয়ের মাঝে সংঘটিত সমস্ত পাপরাশির জন্য কাফফারাস্বরূপ যায় যদি কবিরা গুনাহ সমূহ থেকে বেঁচে থাকা যায়।’ (মুসলিম: ২৩৩)

সম্মানিত পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ, আমরা কোরআন ও হাদিসের আলোকে কিছু কবিরা গুনাহ সম্পর্কে জানব। আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা কিংবা কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা, ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ পরিত্যাগ করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা, জাদুটোনা করা, এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, সতী-সাধ্বী মুমিন নারীর প্রতি অপবাদ দেয়া, রোজা না রাখা, জাকাত আদায় না করা, সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও হজ আদায় না করা, প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া, চুগলখোরি করা (ঝগড়া লাগানোর উদ্দেশ্যে একজনের কথা আরেকজনের নিকট লাগানো), আত্মহত্যা করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা, মাদক বা নেশাদ্রব্য গ্রহণ করা, মদ প্রস্তুত ও প্রচারে অংশগ্রহণ করা, জুয়া খেলা, তকদির (ভাগ্য) অস্বীকার করা, গণকের কাছে অদৃশ্যের খবর জানতে চাওয়া, মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করা, জিনা-ব্যভিচার ও

সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া, মানুষের গোপন কথা চুপিসারে শোনার চেষ্টা করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে পশু জবেহ করা, ওজনে কম দেয়া, গিবত তথা অনুপস্থিতিতে কারও দোষ চর্চা করা, সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে মুখমণ্ডলের চুল তুলে ফেলা বা চুল উঠিয়ে ভ্রু চিকন করা (ভ্রু প্লাগ করা), পুরুষের গোড়ালির নিচে ঝুলিয়ে পোশাক পরিধান করা, চুরি করা, ডাকাতি করা, সুদ লেনদেন করা, সুদ লেখা বা তাতে সাক্ষী থাকা, ঘুষ লেনদেন করা, প্রতারণা করা, রিয়া বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ভালো আমল করা, পুরুষের রেশমি পোশাক এবং স্বর্ণ ও রৌপ্য পরিধান করা, স্বামীর অবাধ্য হওয়া, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাদ সৃষ্টি করা, অঙ্গীকার পূরণ না করা, শরীরে উল্কি অঙ্কন করা বা ট্যাটু করা, ঋণ পরিশোধ না করা।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সব রকম গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন এবং কু-প্রবৃত্তি ও শয়তানের প্ররোচনায় কোনো গুনাহ করে ফেললে আমাদের ক্ষমা করুন এবং সবাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। আমীন।