পবিত্র কোরআনের বর্ণনায় রহমত ও আজাবের বাতাস

পবিত্র কোরআনের বর্ণনায় রহমত ও আজাবের বাতাস

প্রতিকী ছবি

পবিত্র কোরআনে বাতাসের আরবি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে রিহুন (একবচন) আর ব্যবহার করা হয়েছে রিয়াহুন (বহুবচন)। দুটি শব্দের অর্থই বাতাস। দুটি শব্দের ব্যবহার এ জন্য যে বাতাস শব্দটি কোরআনে যখন একবচনে ব্যবহার হবে তখন সেটি আজাবের অর্থ দেবে আর যখন বহুবচন হিসেবে ব্যবহার হবে তখন সেটি রহমত অর্থ বোঝাবে।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে বাতাসকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

১. রহমতের বাতাস ও ২. আজাবের বাতাস।

রহমতের বাতাস চার প্রকার

১. মুবাশশিরাত : বৃষ্টির আগে যে ঠাণ্ডা ও প্রশান্তিময় বাতাস বৃষ্টির আগাম সুসংবাদ জানান দেয় তাকে মুবাশশিরাত বাতাস বলা হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। এমনকি যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ণ মেঘমালা বয়ে আনে তখন আমি এই মেঘমালাকে একটি মৃত শহরের দিকে হাঁকিয়ে দিই।

অতঃপর এই মেঘ থেকে বৃষ্টিধারা বর্ষণ করি। অতঃপর পানি দ্বারা সব রকমের ফল উৎপন্ন করি। এমনিভাবে মৃতদের বের করব, যাতে তোমরা চিন্তা করো।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৭)

২. নাশিরাত : সব ধরনের ভারী মেঘকে তার নিজ নিজ স্তরে বহনকারী বাতাসকে নাশিরাত বলা হয়।

কোরআনে এসেছে, ‘তিনি আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চারিত করে। অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বৃষ্টিধারা। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা : রোম, আয়াত : ৪৮)
৩. মুরসালাত : তথা প্রেরিত, মহান রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত কল্যাণময় ও প্রশান্তিদায়ক বাতাসকে মুরসালাত বলে।

রাসুল (সা.)-এর দানশীলতার উদাহরণে তাঁকে রিহুল মুলসাল বা প্রেরিত বাতাসের চেয়েও বেশি দানশীল বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘কল্যাণের জন্য প্রেরিত বায়ুর শপথ।’ (সুরা : মুরসালাত, আয়াত : ১)

৪. জারিয়াত: জারিয়াত বলা হয় ধুলিকণাবিশিষ্ট ঝঞ্ঝাবায়ুকে। আল্লাহ বলেন, ‘কসম ঝঞ্ঝাবায়ুর।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ১)

আজাবের বাতাস চার প্রকার

১. আকিম : যে বাতাসে কোনো কল্যাণ নেই, যা কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর চরম পরিণতি ও ধ্বংস নিয়ে আসে। যেমন আদ সম্প্রদায়ের ওপর এই বাতাস প্রবাহিত হয়েছিল। আল্লাহ বলেন, ‘এবং নিদর্শন রয়েছে তাদের কাহিনিতে; যখন আমি তাদের ওপর অশুভ বায়ু প্রেরণ করেছিলাম।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৪১)

২. ছরছর : অত্যধিক শৈত্যসম্পন্ন প্রচণ্ড বাতাসকে ‘ছরছর’ বলে। কোরআনের ভাষায়, ‘এবং আদ গোত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচণ্ড ঝঞ্ঝাবায়ুর মাধ্যমে, যা তিনি প্রবাহিত করেছিলেন তাদের ওপর সাত রাত্রি ও আট দিবস পর্যন্ত অবিরাম। আপনি তাদের দেখতেন যে তারা অসার খর্জুর কাণ্ডের মতো ভূপাতিত হয়ে আছে।’ (সুরা : হাকক্বাহ, আয়াত : ৬-৭)

৩. আসিফ : এ বাতাস সমুদ্রে প্রবাহিত হয়ে তার তরঙ্গমালা উত্তাল করে তোলে। যার ফলে জাহাজডুবিসহ অনেক প্রতীক‚ লতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তিনি তোমাদের ভ্রমণ করান স্থল ও সাগরে। এমনকি যখন তোমরা নৌকাসমূহে আরোহণ করলে আর তা লোকজনকে অনুকূল হাওয়ায় বয়ে নিয়ে চলল এবং তাতে তারা আনন্দিত হলো। নৌকাগুলোর ওপর এলো তীব্র বাতাস আর সর্বদিক থেকে সেগুলোর ওপর ঢেউ আসতে লাগল এবং তারা জানতে পারল যে তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তখন আল্লাহকে তার ইবাদতে নিস্বার্থ হয়ে ডাকতে লাগল; যদি তুমি আমাদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার করে তোলো তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২২)

৪. কসিফ : এই ধরনের বাতাস অত্যন্ত শক্তিশালী। যাকে সাধারণত আমরা টর্নেডো, সাইক্লোন বা হারিকেন ইত্যাদি বলে চিনে থাকি। কোরআনের ভাষায়, ‘অথবা তোমরা কি এ বিষয়ে নিশ্চিত যে তিনি তোমাদের আরেকবার সমুদ্রে নিয়ে যাবেন না, অতঃপর তোমাদের জন্য মহা ঝটিকা প্রেরণ করবেন না, অতঃপর অকৃতজ্ঞতার শাস্তিস্বরূপ তোমাদের নিমজ্জিত করবেন না? তখন তোমরা আমার বিরুদ্ধে এ বিষয়ে সাহায্যকারী কাউকে পাবে না।’ (সুরা : ইসরাঈল, আয়াত : ৬৯)

পরিশেষে আমরা যেকোনো ধরনের বাতাসের সময় রাসুল (সা.)-এর শেখানো দোয়া পাঠ করব। তা হলো- 

‘আল্লহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খইরিহা, ওয়া খয়রি মা ফিহা, ওয়া খয়রি মা উরসিলাত বিহ। ওয়া আঊযুবিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা ফিহা, ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহ।’