কপ-২৮ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবসার আগ্রাসী প্রহসনের সম্মেলনে পরিণত করা হচ্ছে : টিআইবি

কপ-২৮  জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবসার আগ্রাসী প্রহসনের সম্মেলনে পরিণত করা হচ্ছে : টিআইবি

কপ-২৮ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবসার আগ্রাসী প্রহসনের সম্মেলনে পরিণত করা হচ্ছে : টিআইবি

সংযুক্ত আরব অমিরাতে শুরু হতে যাওয়া কপ-২৮ (জলবায়ু সম্মেলন) ‘প্রহসনের সম্মেলন’-এ পরিণত করা হচ্ছে বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত নির্ভরযোগ্য তথ্যানুযায়ী পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী উন্নত ও ধনী দেশগুলোর অনেকের জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে অব্যাহত আগ্রাসী বিনিয়োগ এবং কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলনের আড়ালে প্রভাবশালী জীবাশ্ম জ্বালানি প্রতিষ্ঠানের অনৈতিক কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সংস্থাটি।

টিআইবির আহ্বান, কপ-২৮-এ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার হ্রাস করে এবং এ খাতে বিনিয়োগ ও ব্যবসার প্রসারের পথ পরিহার করে প্রস্তাবিত ক্ষয়-ক্ষতি (লস অ্যান্ড ড্যামেজ) তহবিলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা, অভিযোজন ও প্রশমন অর্থায়নসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়গুলোর সর্বোচ্চ প্রাধাণ্য নিশ্চিত করতে হবে।

নির্ভরযোগ্য কয়েকটি প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, যুক্তরাজ্য প্রতিবছর তেল ও গ্যাস খাতে কাজ করার জন্য নতুন লাইসেন্স প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। আবার তেল-গ্যাস খাতের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রধান দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু সঙ্কটের সকল বৈজ্ঞানিক বার্তা উপেক্ষা করে ২০২৩ সালে প্রতিদিন রেকর্ড ১২ দশমিক ৯ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উত্তোলনের পরিকল্পনা করেছে।

এদিকে, জীবাশ্ম খাতে উন্নত দেশগুলো বিনিয়োগ আগের তুলনায় ব্যাপক বৃদ্ধি করেছে। অন্যদিকে ২০২২ সালে জ্বালানি খাতের বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো রেকর্ড পরিমাণ চার ট্রিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছে। কয়লার ব্যবহার কমানোর ঘোষণা দেয়া দেশগুলোর অর্ধেকই কয়লার ব্যবহার বাড়িয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রই ১৪ শতাংশ বাড়িয়েছে।

আজ গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে অর্থায়ন হ্রাস, কয়লার ব্যবহার বন্ধ এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশের জন্য প্রতিশ্রুত অভিযোজন এবং প্রশমন তহবিল সরবরাহে উন্নত দেশগুলো শুধু ব্যর্থই হয়নি, উল্টো জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি অভূতপূর্ব মাত্রায় অব্যাহত রেখেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিজ্ঞানভিত্তিক সমস্ত জ্ঞানকে উপেক্ষা করে উন্নতদেশের এমন অপরিণামদর্শী অবস্থান জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং তাদের কার্বন নিঃসরণ হ্রাস সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের পরিপন্থী।’

এ বছর জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজক তেলসহ জীবাশ্ম জ্বালানি খাতের বৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশগুলোর অন্যতম সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবেন যিনি, তিনি একইসাথে দেশটির জাতীয় তেল কোম্পানির প্রধান নির্বাহী। জীবাশ্ম খাতের বিনিয়োগ এবং ব্যবসায়িক চুক্তির জন্য দেশটি জলবায়ু সম্মেলন আয়োজকের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্মেলন চলাকালীন সময় জীবাশ্ম খাতে বিনিয়োগ ও ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে খাত-সংশ্লিষ্টদের সাথে শলাপরামর্শের আয়োজন করেছে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে বৈশ্বিক গণমাধ্যমে।

অর্থাৎ জীবাশ্ম জ্বালানি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ অর্জনের জন্য জলবায়ু সম্মেলনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি শুধু ক্ষমতার অপব্যবহারই নয়, একইসাথে আয়োজক দেশ ও সম্মেলনসংশ্লিষ্টদের আচরণবিধি ও ইউএনএফসিসিসি নির্ধারিত নিরপেক্ষতার মূলনীতি ও মানদণ্ডের গুরুতর লঙ্ঘন- উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবসার সাথে জড়িত ক্ষমতার লবি-গ্রুপ এবং ধনী ও উন্নত দেশসমূহের জীবাশ্ম খাতের ব্যবসায়িক স্বার্থের বলি হচ্ছে কপ সম্মেলন জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো। যখন বিশ্বের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আক্রান্ত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত এবং মানব সভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষায় জীবাশ্ম থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যাওয়ার পথ খুঁজছে, তখন জলবায়ু সম্মেলনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে জীবাশ্ম খাতে বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ব্যবহার করা সম্মেলনকে প্রহসনে পরিণত করার সামিল।’

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিলে উন্নত দেশগুলো ক্ষতিপূরণ প্রদানের দায় এড়াতে চাচ্ছে এবং জলবায়ু সম্মেলনকে নিজেদের ব্যবসার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে যা শুধু অগ্রহণযোগ্য এবং অনৈতিকই নয়, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিবিরোধী। অর্থায়নসহ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত, সম্মেলনে স্বার্থের দ্বন্দ্ব-সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণ বাতিল, জ্বালানি খাতের লবিস্ট ও প্রভাবশালীদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধসহ সম্মেলনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, শুদ্ধাচার এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বাংলাদেশসহ আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) প্রতিনিধিদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। পাশাপাশি, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল থেকে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহকে দেয়া অর্থ ঋণ নয়, শর্তহীন ক্ষতিপূরণ বাবদ অনুদান হিসেবে প্রদানের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করতে দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি