লালমনিরহাট হানাদার মুক্ত দিবস আজ

লালমনিরহাট হানাদার মুক্ত দিবস আজ

ফাইল ছবি

আজ ৬ ডিসেম্বর। লালমমিরহাট মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল দেশের উত্তরের জেলা লালমনিরহাট। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সড়কে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে লালমনিরহাট হাইস্কুল মাঠ থেকে বের হবে একটি বিজয় র‍্যালি। অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা।

পাকিস্তানি জান্তা সরকার ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বাঙালি জাতির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করার পর বাঙালিরা আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সারাদেশের মতোই উত্তাল হয়ে ওঠে লালমনিরহাটের পাড়া-মহল্লা। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী অঞ্চলেও। উর্দুভাষী বিহারি অধ্যুষিত শহর লালমনিরহাট সদরে দেখা দেয় টানটান উত্তেজনা। ৮ মার্চ শহীদুল্লাহকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় লালমনিরহাট সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। একই দিন রাতে সামসুল আলম নাদু লালমনিরহাটে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত প্রথম পতাকা তৈরি করেন।

৯ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দেন এবং লালমনিরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের পুরাতন গেটের সামনে অবস্থিত শহিদ মিনারে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের পতাকাটি উত্তোলন করেন। উর্দুভার্ষী বিহারিরা দলবেঁধে এসে পতাকা নামিয়ে শহিদ মিনারটি গুড়িয়ে দেয়। এতে উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। লালমনিরহাট থেকে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবুল হোসেনকে আহ্বায়ক করে ১৫ মার্চ সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের লালমনিরহাট থানা কমিটি গঠন করা হয়। ২৩ মার্চ জিন্নাহ (বর্তমান নাম শহিদ সোহরাওয়ার্দী) মাঠে জনসভার ডাক দেয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।

২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর ২৭ মার্চ দুপুরে শাহজাহানের নেতৃত্ব একটি মিছিল রেলওয়ের আপইয়ার্ড কলোনি পার হওয়ার সময় পাকিস্তানিরা গুলিবর্ষণ শুরু করে। পাকিস্তানি ইপিআর সদস্য জিয়াউল হকের গুলিতে শাহজাহান বিকেলে মারা যান। হানাদার বাহিনীর গুলিতে প্রথম শহিদ শাহজাহানকে বাড়ির পাশে ২৮ মার্চ দাফন করা হয়। 

১০ অক্টোবর বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ। তিনি সেখানে রাত্রিযাপন করে ১১ অক্টোবর বিপ্লবী সাংস্কৃতিক পরিষদের সদস্যদের বিপ্লবী সংগীত আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। সেপ্টেম্বর মাসে পরিদর্শনে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের সংসদীয় দলের সদস্যরা। 

মুক্তিযুদ্ধে লালমনিরহাট জেলায় অসংখ্য শহিদের লাশের সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি। ২৮ ও ২৯ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাক বাহিনীর ওপর প্রবল আক্রমণ শুরু করেন। ৩০ নভেম্বর হাতীবান্ধা মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসে। মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে আগে থেকেই পাটগ্রাম ছিল মুক্তাঞ্চল। একপর্যায়ে ৪ ও ৫ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ ও আদিতমারীতে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ব্যাপক মাত্রায় আক্রমণ চালায় মুক্তিবাহিনী।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ৫ ডিসেম্বর ভোর ৫টার দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা রংপুর ক্যান্টনমেন্টের দিকে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তিস্তা ব্রিজের পশ্চিম পাড়ের কিছু অংশ উড়িয়ে দিয়ে যায় তারা।  ফলে ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট জেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য শহিদ ক্যাপ্টেন তমিজ উদ্দিন বীর বিক্রম ও ক্যাপ্টেন (অব.) আজিজুল হক বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।

লালমনিরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাংসদের কমান্ডার মেজবাহ উদ্দিন আহমদে বলেন, ‘রেলওয়ের গণকবরসহ বেশ কয়েকটি গণকবর চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনেক গণকবর চিহ্নিত করা যায়নি। এসব গণকবর চিহ্নিত করার জন্য সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। এই ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধারা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’ তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরই লালমনিরহাট মুক্ত দিবস পালন করা হয়।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট মুক্ত দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র‌্যালি আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ পরিবারের সদস্য, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা অংশ নেবেন।