পাবনায় কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন

পাবনায় কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন

ছবি : সংবাদাতা

পাবনায় কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে যুবলীগ কর্মী তানজিবকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। রোববার দুপুরে পাবনা শহরের টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ মোড়ে প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে এলাকার বিপুল সংখ্যক নারী পুরুষ অংশ গ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পুলিশ তানজিবকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করেছে। নিহত তানজীব পাবনা  জেলা স্কুলের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। এরপর পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে মাষ্টার্স পাশ করেন। স্থানীয় ভুমিদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান করায় তারা পুলিশকে দিয়ে টাকার বিনিময়ে এ জঘন্য হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে। তারা তানজীব হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান।

তারা আরও বলেন,পুলিশ প্রশাসন তানজিব সম্পর্কে তদন্ত ও যাচাই বাছাই না করে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তার গায়ে সন্ত্রাসী তকমা লাগিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে গুলি করে হত্যা করে। নিহত তানজিবের কাছ থেকে ১টি পিস্তল ও ১টি রিভালবার পাওয়া গেছে তার নামে ৫টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ দাবী করলেও আসলে তানজিদের নামে মাত্র ২টি মারামারির মামলা রয়েছে।

তানজিদের মা মলিনা খাতুন বলেন, পাবনায় বড় বড় সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, রাঘব বোয়ালরা বীরদর্পে অন্যায় করে প্রকাশ্যে ঘুওে বেড়ালেও পুলিশ তাদের কিছুই বলছে না। পুলিশ শুধু আমার ছেলেকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি; তানজিবের নামাজে জানাযায় বাধা প্রদান করে এবং তড়িঘড়ি করে লাশ দাফনের জন্য চাপ দিতে থাকে। তারপরও পুলিশী বাধা উপক্ষো করে প্রচুর সংখ্যক মানুষ জানাযায় অংশ গ্রহণ করেন।

নিহত তানজীবের মা আরও জানান, তানজিব শেখের ৪ দাদা রামচন্দ্রপুর মহলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মকছেদ আলী  সেখ, আকু  শেখ, শেখ কোরবান আলী মেম্বর ও আফছার আলী সেখ। একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানকে এভাবে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা কওে গোটা দেশ ও জাতিকে অপমাণিত করেছে। যারা জীবনের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করেছে সেই দেশেরই পুলিশ বিনা অপরাধে তাদের পরিবারের সন্তানদের হত্যা করেছে।

নিহত তানজিব এর স্ত্রী মেঘনা খাতুন বলেন, ভুমিদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী প্রভাবশালী ও নদী খেকো দুধর্ষ সন্ত্রাসীরা  পুলিশকে টাকা দিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। আমার স্বামীর পায়ের রগ কাটা ছিল এবং শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহৃ ছিল। তিনি বলেন, তানজিব তো পুলিশের কাছে আটক ছিল তাহলে বন্দুকযুদ্ধ করলো  কেমনে।

নিহত তানজীব ছাত্রলীগ ও পরে যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। এ ছাড়া তিনি এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের পরিবেশক ও একটি জেন্টস পারলার পরিচালনা করতেন। নিহত তানজীবের ৩ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

মানববন্ধনে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ বাবু, পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সাধারন সম্পাদক এনায়েত হোসেন দুলাল, পৌর কমিশনার ইকবাল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ইমরান ও রেজাউল করিম রেজাসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দও অংশ নেন। এর আগে বৃহস্পতিবার পাবনা প্রেস ক্লাবে হত্যা কান্ডের বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন তানজিবের পরিবার।

পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর  সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ বাবু বলেন, “১৮ মামলা নিয়ে এডওয়ার্ড কলেজের ভিপি হয়েছিলাম। রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক সময় মামলা হতে পারে। মাত্র ২ মারামারির মামলার আসামীকে  বন্ধুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হল। তাহলে  তো পাবনায় ৩ হাজার লোককে ক্রসফায়ার দেয়ার প্রয়োজন। এখানে পরিষ্কার কারো ইন্ধনে বা বিশেষ কারণে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। দ্রত বিভাগীয় তদন্ত করে জড়িতদের  বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।”

উলেখ্য, ৭ জুলাই বুধবার ভোর রাতে সদর উপজেলার শিবরামপুর বেড়িবাঁধ বটতলা এলাকায় পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যুবক তানজিব শেখ নিহত হন। তিনি শহরের রামচন্দ্রপুর মহলার বাবু শেখের ছেলে। পুলিশের দাবি নিহত তানজিবের বিরুদ্ধে বিস্ফোরকসহ ৫ টি মামলা রয়েছে। তিনি শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছিলেন।