পরিবহন সংকট, বেশি ভাড়া, কম দামের কারণে চলন বিলের খিরা চাষীরা ব্যাপক লোকসান গুনছেন

পরিবহন সংকট, বেশি ভাড়া, কম দামের কারণে চলন বিলের খিরা চাষীরা ব্যাপক লোকসান গুনছেন

পরিবহন সংকট, বেশি ভাড়া, কম দামের কারণে চলন বিলের খিরা চাষীরা ব্যাপক লোকসান গুনছেন

প্রচুর ফলন হওয়া সত্ত্বেও, বৃহত্তর চলন বিল অঞ্চলের ছোট জাতের শসা-যাকে খিরা বলা হয়) রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিবহন সংকট, উচ্চ যানবাহন ভাড়া এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের কম দামের কারণে এই বছর ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বিরাজমান পরিস্থিতি অস্থিরতার কারণে কৃষকদের এ  দৈন্যদশা।

অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও নাটোর জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা পরিবহন সংকট ও যানবাহনের বেশি ভাড়ার কারণে তাদের পণ্য ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠাতে সমস্যায় পড়েছেন।বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে বিরোধী দল-বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর হরতাল-অবরোধকে  কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বলেছেন যে ৭ জানুয়ারী, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি এবং জামায়াত তাদের দাবিতে চাপ দেয়ার জন্য হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচি ডাকার কারণে সপ্তাহের প্রায় চার থেকে পাঁচ দিন পরিবহন সংকট দেখা দেয়।পরিবহন অপারেটররা অগ্নিসংযোগের ভয়ে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চালানোর সাহস না করায় ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য বহনের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে বাধ্য হচ্ছেন।ফলে স্থানীয় বাজারে পাইকার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের উপস্থিতি কমে গেছে, যা কৃষক ও ব্যবসায়ীদেও লোকসানের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

চলন বিল এলাকার কৃষক আদম আলী বলেন, ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি কম থাকায় স্থানীয়ভাবে খিরা বিক্রি করতে পারছি না বলে আমরা ন্যায্য দাম পাচ্ছি না।বছরের নভেম্বর-এপ্রিল সময়কাল খিরা ফসল কাটার প্রধান সময়।তবে এবার বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গন্তব্যে পণ্য পাঠাতে সমস্যায় পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

হরতাল বা অবরোধের সময় দুর্বৃত্তদের অগ্নিসংযোগ বা ভাংচুরের আশঙ্কায় অধিকাংশ অপারেটর সড়ক বা মহাসড়কে যানবাহন আনতে নারাজ হওয়ায় পরিবহন ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে।ফলে পরিবহন সংকটের কারণে ক্ষেত ও গুদামে প্রচুর পরিমাণে খিরা নষ্ট হয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ার ব্যবসায়ী সোবদার আলী বলেন, আমি স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিন ট্রাক খিরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতাম, কিন্তু এখন আমার মালামাল ঢাকায় নিতে পারছি না। অতিরিক্ত চার্জ গুনলেও চলমান নৈরাজ্যের কারণে আমরা আমাদের মালামাল গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারি না।"

সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে এ সংবাদদাতা জানতে পারেন, বর্তমানে বিভিন্ন দোকানে এক মণ খিরা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে গত বছর একই সময়ে তা বিক্রি হয়েছিল ২,০০০ থেকে ২,৫০০ টাকায়। ফলে কৃষকরা এবার তাদের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না। সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার চর বর্ধনগাছার ব্যবসায়ী নুরনবী তালুকদার বলেন, প্রতি বছর এই মৌসুমে প্রতিদিন অন্তত ১০০ ট্রাক ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, বরিশাল, বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় খিরা নিয়ে যেত। হরতাল বা অবরোধ কার্যকর না হলে বছরে সর্বোচ্চ ২০টি ট্রাক এখান  থেকে খিরা বোঝাই হয়।"

পরে পণ্যটি দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।

বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এখানে খিরা কিনতে আসেন। তবে বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় পরিবহন সংকটের কারণে এবার ব্যবসা বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, এ বছর পাবনা  ও সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রায় ৭১১ হেক্টর জমিতে খিরা চাষ করা হয়েছে। পাবনা জেলায় ২১ ডিসেম্বও পর্যন্ত ৪৫ হেক্টর খিরা আবাদ হলেও আরো আবাদের পরিধি বাড়বে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।