কলকাতা বাণিজ্যমেলায় নজর কাড়ছে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন

কলকাতা বাণিজ্যমেলায় নজর কাড়ছে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন

ছবিঃ সংগৃহীত।

ঢাকাই জামদানি, ঢাকাই মসলিন কিংবা পাট দিয়ে তৈরি ব্লেজার, বাংলাদেশের উৎপাদিত এসব পণ্য কেবল সে দেশেই নয়, কলকাতা তথা ভারতবাসীর কাছেও অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এমনিতেই বাংলাদেশি এসব পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মেলা ছাড়া সেভাবে বাংলাদেশি পণ্য খুব একটা পাওয়া যায় না কলকাতায়।

 

সাধারণত এই ধরনের মেলার জন্য মুখিয়ে থাকে এপার বাংলার মানুষ। আর শীতের শুরুতেই কলকাতার বুকে তেমন একটি মেলা হলে তো কথাই নেই! এই যেমনটা হয়েছে ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল মেগা ট্রেড ফেয়ার’। কলকাতার সায়েন্স সিটি মেলা প্রাঙ্গণে ১৫ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে এই মেলা, চলবে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, ঘানাসহ ১৭টি দেশ এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অংশ নিয়েছে। সেই সঙ্গে ভারতের ২২টি রাজ্যের স্টল তো রয়েছেই। কিন্তু এত কিছুর মাঝেও মধ্যমণি সেই বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন।

ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০টি স্টল রয়েছে এখানে। মেলায় যারা আসছেন, আগ্রহ নিয়েই এই প্যাভিলিয়নে ঢুকছেন, কেনাকাটাও করছেন। তবে পোশাকের স্টলগুলোতেই বেশি ভিড়। বিশেষ করে ঢাকাই জামদানি, ঢাকাই মসলিন, নকশি কাঁথার উপরে টান বেশি গ্রাহকদের। অনেকে আবার ফ্রুট ড্রিঙ্কস, ব্রেভারেজের দোকানগুলোতেও ভিড় জমাচ্ছেন, গলা ভেজাচ্ছেন।

 

এক নারী পোশাক বিক্রেতা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই তারা এই আন্তর্জাতিক মেলায় অংশ নিচ্ছে। আর বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছরও কলকাতার গ্রাহকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে, মেলার শুরুর ছয় দিন পরে এখনো গ্রাহকদের কাছ থেকে যে সাড়া পাওয়া গেছে, তা যথেষ্ট সন্তোষজনক।

পাট দিয়ে তৈরি ব্লেজার দেখে হতবাক সোমনাথ দে নামে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বাসিন্দা। তার অভিমত, বাণিজ্যমেলাতেই এই জিনিস পাওয়া সম্ভব। অন্য কোনো জায়গায় এই জিনিস পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায় না। তাছাড়া বাংলাদেশের জিনিস আমার খুবই পছন্দ।

 

বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার বাসিন্দা ও বর্তমানে কলকাতার গৃহবধূ ঝুমা সামন্ত বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নটা ঘুরে দেখে বেশ কিছু জিনিস কিনেছেন। তিনি বলেন, আমি কলকাতায় থাকলেও আমার শিকড় বাংলাদেশে। তাই যখন জানতে পারলাম, মেলায় বাংলাদেশি স্টল বসেছে, তখন আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছ।

 

ঝুমা আরও বলেন, কলকাতায় বাংলাদেশের মানুষ প্রচুর থাকে। আমি এখানে দেখতে আসি দেশের কোনো পরিচিত লোক এসেছে কি না। আমরা বাংলাদেশে যেসব জিনিসপত্র ব্যাবহার করি, সব কিছুই এখানে পাওয়া যাচ্ছে।

মেলার অন্যতম সংগঠক উৎপল রায় জানান, মানুষ যখন এই মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকছে, তখনই তারা জানতে চাইছেন বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নটা কোথায়। বাংলাদেশ মানেই আবেগ, আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা। আর এটাই আকৃষ্ট করছে লাখ লাখ গ্রাহককে। তার অভিমত, মেলায় আসা লোকজনের শতকরা ৮২ শতাংশ মানুষের শিকড়ই বাংলাদেশে। তাই তারা যখন এই প্যাভিলিয়নে ঢুকছে, তখন তাদের কাছে নিজের দেশ বলেই মনে হচ্ছে।

 

তিনি আরও বলেন, মাত্র পাঁচ দিনে প্রায় ৩৪ কোটি রুপির ব্যবসা হয়েছে। গত বছরের মেলা থেকে ৯৫৩ কোটি রুপির ব্যবসা হয়েছিল। আমরা আশাবাদী যে এ বছর তার থেকেও বেশি ব্যবসা হবে।

 

তবে এবারের মেলায় বাংলাদেশের বৃহৎ খাদ্য সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘প্রাণ’ গ্রুপের কোনো স্টল নেই। বাংলাদেশ থেকে আসা মাইনুল ইসলাম বলেন, এ বছর মেলায় প্রাণের কোনো স্টল নেই। আমাদের কাছে এসে সবাই প্রাণকেই খুঁজছে।এবারের মেলায় প্রাণের স্টল না থাকায় ক্রেতাদের মন অনেকটাই ভারাক্রান্ত। তাদের আশা আগামী বছরের মেলার প্রাণের স্টল থাকবে।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাতের বাসিন্দা সুরজিৎ বিশ্বাস বলেন, আমার মেয়ের পছন্দ তালিকার প্রথমে রয়েছে ‘প্রাণ’। স্কুলের টিফিনে প্রাণের ড্রাই কেক ছাড়া তার চলে না। তাই প্রাণের কিছু কিনবো বলে মেলায় এলাম। প্রাণের ভেবে একটি পানীয়ও কিনলাম। পরে খেয়াল করে দেখি, সেটি অন্য কোম্পানির। এ বছর প্রাণের কোনো স্টল নেই।