সুরা ইয়াসিন সকালে ও রাতে পড়ার ফজিলত

সুরা ইয়াসিন সকালে ও রাতে পড়ার ফজিলত

প্রতিকী ছবি

সুরা ইয়াসিন পবিত্র কোরআনের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন সুরা। ১১৪টি সুরার মধ্যে ক্রমানুসারে ৩৬তম। এই সুরাকে কোরআনের হৃদয় বলেছেন নবীজি। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, عَنْ أَنَسٍ ، قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ ﷺ إِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ قَلْبًا، وَقَلْبُ القُرْآنِ يس ، وَمَنْ قَرَأَ يس كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِقِرَاءَتِهَا قِرَاءَةَ القُرْآنِ عَشْرَ مَرَّاتٍ অর্থ: ‘প্রত্যেক বস্তুর একটি হৃদয় রয়েছে, আর কোরআনে হৃদয় হচ্ছে- ইয়াসিন। যে ব্যক্তি ইয়াসিন পড়বে আল্লাহ তার আমলনামায় ১০বার পূর্ণ কোরআন পড়ার নেকি দান করবেন।’ (জামে তিরমিজি: ২৮৮৭)

সুরা ইয়াসিন দিনে বা রাতে যেকোনো সময় পড়া যায়। দিনে পড়ার ফজিলত সম্পর্কে আতা ইবনে আবি রাবাহ (রহ) বলেন, আমার কাছে এই হাদিস পৌঁছেছে যে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- مَنْ قَرَأَ یٰسٓ فِي صَدْرِ النَّهَارِ، قُضِيَتْ حَوَائِجُهُ অর্থ: ‘যে ব্যক্তি দিনের শুরুতে সু ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে তার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করা হবে। (সুনানে দারেমি: ২/৫৪৯; ফাজায়েলে আমল: ০১/৫২) 

অন্য হাদিসে ইয়াহইয়া ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-স্বস্তিতে থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে।’ (আহকামুল কোরআন লিল-কুরতুবি: ২/১৫)

সুরা ইয়াসিন রাতে পড়ার ফজিলত সম্পর্কে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- مَنْ قَرَأَ یٰسٓ فِي لَيْلَةٍ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ غُفِرَ لَهُ অর্থ: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য রাতের বেলা সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ২৫৭৪, তাফসিরে ইবনে কাসির: ৬/৫৬২) অন্য হাদিসের বর্ণনায় ‘ওই রাতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (ইবনুস সিন্নি, আমালুল ইয়াওম ওয়াল লাইলাহ: ৪৭)

সুরা ইয়াসিনের ফজিলত সম্পর্কে আরেক হাদিসে আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করে, আল্লাহ তাআলা কবরবাসীর আজাব হালকা করে দেন এবং তার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সওয়াব লেখা হয়। (শারহুস সাদুর: ৩০)

তবে, সুরা ইয়াসিনের ফজিলত নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে আলেমদের মধ্যে। কিছু ওলামায়ে কেরামের মত হলো- কোরআনের অন্যান্য আয়াত তেলাওয়াত করলে যেমন প্রতিটি অক্ষরে সওয়াব পাওয়া যায়; সুরা ইয়াসিন পাঠ করলেও ঠিক তেমন সওয়াব পাওয়া যাবে। এর বেশি ফজিলতের কথা সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়নি; বরং দুর্বল বর্ণনায় এসেছে। তবে হ্যাঁ কোরআনে কিছু সুরা রয়েছে, যেগুলোর অতিরিক্ত ফজিলতের কথা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু ওসব সুরার মধ্যে সুরা ইয়াসিন নেই।

এরপরও সকাল-রাতে সুরা ইয়াসিন পাঠ করা যাবে এবং তা মোস্তাহাব আমল হিসেবে ধর্তব্য হবে। কারণ, সুরা ইয়াসিনের ফজিলত সম্পর্কিত হাদিসগুলো সনদের দিক থেকে কিছুটা দুর্বল হলেও মওজু বা জাল নয়। আর অভিন্ন বক্তব্যসম্বলিত হাদিস একাধিক থাকলে উসুলে হাদিসের নীতিমালা অনুযায়ী ওই হাদিসগুলো হাসান বা সহিহের পর্যায়ে চলে আসে। উদাহরণস্বরূপ- একবার সুরা ইয়াসিন পড়লে ১০ বার কোরআন পড়ার নেকি সম্পর্কিত হাদিসটি জামে তিরমিজিতে আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে, বায়হাকি শুআবুল ঈমানে আবু হুরায়রা (রা.) ও প্রসিদ্ধ তাবেঈ হাসসান ইবনে আতিয়্যাহ (রহ) থেকে, মুসতাগফিরির ফাজায়েলুল কোরআনে (হাদিস নং ৮৬৫) আনাস (রা.) থেকে এবং বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। 

তাছাড়া ফাজায়েলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিসও আমলযোগ্য এবং মোস্তাহাব। এটি উসুলে হাদিসের অন্যতম একটি নীতিমালা। ইমাম নববি (রহ) বলেন, ‘মুহাদ্দিসিন ও ফুকাহায়ে কেরাম ও অন্যান্য ওলামায়েকেরাম বলেন, দুর্বল হাদিসের ওপর ফাজায়েল ও তারগিব তথা উৎসাহ প্রদান ও তারহিব তথা ভীতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আমল করা জায়েজ ও মোস্তাহাব, যদি হাদিসটি জাল না হয়। (আল আজকার: ৭-৮)