ইসলামের দৃষ্টিতে নববর্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ

ইসলামের দৃষ্টিতে নববর্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ

ছবি: সংগৃহীত

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আর এরই ধারাবাহিকতায় বছর আসে এবং ১২ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর তা শেষ হয়ে আবার নতুন বছর শুরু হয়। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনুল কারিমের সূরা আত তাওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস ১২টি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে’। 

ইসলামের দৃষ্টিতে নববর্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ

নববর্ষ বা নতুন বছর মানে গত এক বছরের হিসাব কষে নতুন বছরে নতুন নতুন ভালো কাজ ও সুন্দর পরিকল্পনা নেওয়া। সুন্দর কাজ দিয়ে জীবনকে সাজাতে হবে। একজন প্রকৃত মুমিন এটাই দেখবে যে, দুনিয়াবি দৃষ্টিকোণ থেকে এ বছর সে কী হারিয়েছে আর কি পেয়েছে? তার ইহলৌকিক অবস্থা বা বৈষয়িক অবস্থায় কি ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আর কী কী নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বিগত বছরে কী কী ভালোকাজ করেছে আর এবছর যেন আরো বেশি ভালোকাজ করতে পারে সেই চেষ্টায় সে নতুন বছরকে বরণ করে নেবে তাহাজ্জুদ নামাজ এবং বিশেষ ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে।

সে বিগত বছরে কী কী ভালোকাজ করেছে আর এবছর যেন আরো বেশি ভালোকাজ করতে পারে সেই চেষ্টায় সে নতুন বছরকে বরণ করে নেবে তাহাজ্জুদ নামাজ এবং বিশেষ ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে। নিজেদের দুর্বলতার জন্য মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে এই দোয়া করতে হবে, হে আল্লাহ! আমাদের আগত বছর যেন বিগত বছরের ন্যায় আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল না হয় বরং আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি সময়, প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ ও পদচারণা যেন হয় একমাত্র তোমার সন্তুষ্টির জন্য।

ইমাম আযম আবু হানিফার (রহ.) দাদা তার পিতাকে পারস্যের নববর্ষের দিন আলী (রা.) এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং কিছু হাদিয়া পেশ করেছিলেন। তখন আলী (রা.) বললেন, ‘নওরোজুনা কুল্লা ইয়াওম’ মুমিনের প্রতিটি দিনই তো নববর্ষ। অর্থাৎ মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব নিকাশ করবে এবং নব উদ্যোমে নতুন করে আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করবে। আমাদের বছর যদি শুরু হয় ভালো কাজ আর তাহাজ্জুদের মধ্য দিয়ে তবেই নতুন বছর আমাদের জন্য তথা সারা বিশ্বের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

কল্যাণ-অকল্যাণ ও মঙ্গল-অমঙ্গল মানুষের কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা (কাল) সময়কে দোষারোপ কোরো না, কালকে গালমন্দ কোরো না; কারণ, আমিই মহাকাল, আমিই সময়ের পরিবর্তনকারী’।

নতুন বছর আসা মানে জীবনের নির্ধারিত সময় থেকে একটি বছর যাওয়া। আর জীবন থেকে এক বছর চলে যাওয়া মানে মৃত্যুর কাছাকাছি আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। তাই নতুন বছরে মৃত্যুর স্মরণ ও পরকালের প্রস্তুতি ভালোভাবে নেওয়া কারণ আমরা দিনদিন মৃত্যুর কাছাকাছি আগাচ্ছি। নতুন বছরের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো জীবনের হিসাব গোছানো। আল্লাহ হিসাব নেওয়ার আগে নিজের জীবনের হিসাব গুছিয়ে নিতে পারলেই জীবনের পরবর্তী ধাপে ভালো কিছু করা সম্ভব।

মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.) একবার মিম্বরে দাঁড়িয়ে তার খুতবায় এক ঐতিহাসিক উক্তি উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘হিসাব চাওয়ার আগে নিজের হিসাব করে নাও, তোমার কাজ পরিমাপ করার আগে নিজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও।

অশ্লীলতা, অনর্থক কাজকর্ম পরিহার করাও নববর্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিগত বছরে যে যে বেহুদা কাজ হয়েছে সবগুলোকে হিসাবের আওতায় এনে আগামী বছরের নতুব পরিকল্পনা হাতে নেওয়াই প্রকৃত বুদ্ধিমান মুমিনের কাজ।

নববর্ষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বিজাতীয় সংস্কৃতি পরিহার করা। পশ্চিমা সংস্কৃতিকে লালন করে নতুন বছরকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো বা বিগত বছরকে বিদায় জানানোর সঙ্গে ইসলামের ইবাদত-বন্দেগি, রীতি-নীতি বা সভ্যতা-সংস্কৃতির কোনো সম্পর্ক নেই।

‘থার্টিফার্স্ট নাইট’ পালন বা এজাতীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ বিজাতীয় সংস্কৃতির অংশ, যা মুসলমানদের জন্য অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আবু দাউদের হাদিসে ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভুক্ত বিবেচিত হবে’। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৩৩)