যেভাবে বদলে যাচ্ছে জার্মানির অভিবাসন নীতি

যেভাবে বদলে যাচ্ছে জার্মানির অভিবাসন নীতি

ফাইল ছবি।

২০২৪ সাল থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের নিরুৎসাহিত করতে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে জার্মানি।এর মধ্যে রয়েছে- ‘ডিপোর্ট’ বা জোর করে ফেরত পাঠানোর সংখ্যা বাড়ানো, আশ্রয়প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা এবং নগদ অর্থসাহায্য কমানোর মতো সিদ্ধান্ত। তবে একই সময়, দক্ষ কর্মীদের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়া আরও সহজ করছে দেশটি।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে ৭ হাজার ৮৬১ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে জার্মানি। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আইন সংশোধন করেছে দেশটি। তাই ধারণা করা হচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে ডিপোর্টের সংখ্যা আরও বাড়বে।

আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া অভিবাসীদের ডিপোর্ট করার আগে ২৮ দিন আটকে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে জার্মান আইনে। কাউকে আটক করার ক্ষেত্রে তার ঘরে তল্লাশি চালানোর অনুমতিও দেওয়া হয়েছে পুলিশকে।

অভিবাসন চুক্তি

কেনিয়া, কলম্বিয়া, উজবেকিস্তান ও কিরগিজস্তানের সঙ্গে অভিবাসন বিষয়ক চুক্তির আলোচনা করছে জার্মানি। যদিও দেশটিতে সবচেয়ে বেশি আশ্রয়প্রার্থী গেছেন সিরিয়া, আফগানিস্তান ও তুরস্ক থেকে।

এসব দেশের সঙ্গে চুক্তির উদ্দেশ্য হলো, সেগুলোকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। ফলে এসব দেশ থেকে যাওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দিতে পারবে জার্মানি। গত নভেম্বরে জর্জিয়া এবং মলডোভাকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জার্মান সরকার।

তুরস্কের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চুক্তি নবায়নের বিষয়টি বর্তমানে আলোচনাধীন। জার্মানিও চায় চুক্তিটি নবায়ন হোক। কারণ, ওই চুক্তির মধ্য দিয়ে তুরস্ক থেকে যাওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়া সহজতর হবে।

আশ্রয়প্রক্রিয়ায় গতি

আশ্রয়প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার পথে হাঁটছে জার্মানি। বর্তমানে একটি আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া করতে দুই বছরেরও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। আইন সংশোধনের মাধ্যমে এই দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে তিন থেকে ছয় মাসে নামিয়ে আনতে চায় ইউরোপীয় দেশটি।

একই সময় আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য রাখা সুবিধার পরিসর সংকুচিত করতে চায় জার্মানি। ১৮ মাস পর থেকে দেওয়া কল্যাণ ভাতাটি তিন বছর পর দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। রাষ্ট্রীয় আবাসনে যেসব আশ্রয়প্রার্থী থাকেন, তাদের খাবারের খরচও কেটে নেওয়া হবে।নগদ অর্থের বদলে কার্ড

ব্যাংকের মাধ্যমে নগদ অর্থ না দিয়ে কার্ড চালু করতে চায় জার্মানির অনেক শহর। কারণ, আশ্রয়প্রার্থীরা ভাতা হিসেবে যে অর্থ পান, তার একটি অংশ নিজ দেশে থাকা আত্মীয় বা পরিবারের কাছে পাঠান অনেকেই। কার্ড ব্যবস্থা চালু হলে এই সুযোগটি আর থাকবে না।

জার্মানির মধ্যাঞ্চলীয় শহর হ্যানোফার গত ডিসেম্বর থেকেই ‘সোশ্যাল কার্ড’ চালু করেছে। এটি ব্যাংকের সাধারণ ডেবিট কার্ডের মতোই কাজ করে। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য থুরিঙ্গিয়ায় ১৬০ জন আশ্রয়প্রার্থীকে এ ধরনের কার্ড দেওয়া হয়েছে। কার্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আশ্রয়প্রার্থীকে মাসে একবার আশ্রয়ণ বিষয়ক অফিসে গিয়ে কার্ডটি রিচার্জ করতে হয়।

২০২৪ সালের মধ্যে এমন কার্ড ব্যবস্থা চালু করতে চায় হামবুর্গ এবং বাভারিয়ানও।

দক্ষ কর্মীদের জন্য সহজ অভিবাসন

জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য যখন কঠোর সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, ঠিক তখনই দক্ষ বিদেশি কর্মীদের কাছে টানতে সহজ করা হচ্ছে বিভিন্ন নিয়ম।

ভাষার দক্ষতা এবং পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যোগ্য বিদেশিদের পয়েন্ট সিস্টেমে এক বছরের ভিসা দেবে জার্মানি। এই সময়টায় তাকে সে দেশে চাকরি খোঁজার সুযোগ দেওয়া হবে।

বিদেশি কর্মীদের আয়ের সীমাও কমানো হয়েছে। ফলে, তাদের পরিবারের সদস্যদের জার্মানিতে নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হবে।

আগামী মার্চ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশের মানুষেরাও সরাসরি জার্মানিতে যেতে পারবেন এবং তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে কাজ করতে পারবেন।