নির্যাতন চালিয়ে দু’বছরের শিশুকে হত্যা, সৎমা গ্রেপ্তার

নির্যাতন চালিয়ে দু’বছরের শিশুকে হত্যা, সৎমা গ্রেপ্তার

প্রতীকী ছবি

স্বামীর প্রথম স্ত্রীর সন্তানকে নিজের মেয়ে হিসেবে রাখতে চাননি সৎমা পারভীন সুলতানা। ফলে দুই বছরের শিশু আয়শাকে প্রতিনিয়ত তিনি নির্যাতন করতেন তিনি। এমনকি দুই হাত বেঁধে, মুখে স্কচটেপ লাগিয়েও নির্যাতন করতেন সৎমা পারভীন। এমন নির্মম নির্যাতনে অবশেষে মারা গেছে শিশু আয়েশা।

এসব অভিযোগে শেষমেশ যশোর শহরের খোলাডাঙ্গা গ্রামের পারভীন সুলতানাকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। পরে পারভীনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার মুঠোফোনে তোলা নির্যাতনের ছবি দেখে এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

নিহত আয়েশা আক্তার খোলাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা ওয়াসকুরুনি ওরফে পিন্টুর মেয়ে। গ্রেপ্তার পারভীন সুলতানা ওয়াসকুরুনির দ্বিতীয় স্ত্রী। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশ।

এর আগে গত শনিবার অচেতন অবস্থায় আয়েশাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান পারভীন সুলতানা। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আয়েশাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় আয়েশার মাথা, মুখ, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

ওই দিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আয়েশার বাবা ওয়াসকুরুনি ও সৎমা পারভীন সুলতানাকে কোতোয়ালি থানায় নেয়া হয়। তাদের দাবি, আয়েশাকে কেউ আঘাত করেননি। পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

পরে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) পারভীন সুলতানাকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক বলেন, চিকিৎসকের কাছ থেকে আয়েশাকে নির্যাতনের বিষয়ে আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হই। পরে শিশুটির বাবাকে মামলা করতে বলি। কিন্তু তিনি মামলা করতে রাজি হননি। কারণ, আয়েশাকে নির্যাতন করার বিষয়ে তিনি সব জানতেন।

তিনি আরও বলেন, সৎমেয়েকে সংসারে রাখতে চাননি পারভীন। এ কারণে দুই বছরের শিশু আয়শাকে প্রতিনিয়ত মারধর করতেন তিনি। শুধু তাই না, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ও দুই হাত বেঁধে শিশুটিকে নির্যাতন চালানো হতো। এই নির্যাতনেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির হাত বেঁধে নির্যাতনের ছবি পারভিন মুঠোফোনে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। ওই ছবি দেখে ও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক জয়ন্ত সরকার বাদী হয়ে পারভীনকে আসামি করে মামলা করেন বলেও জানান ওসি।

জানা যায়, আয়েশার মায়ের নাম জান্নাতুল। ৮-১০ বছর আগে ওয়াসকুরুনি ও জান্নাতুলের বিয়ে হয়। আয়েশা ছাড়াও তাদের আরেকটি ছেলে রয়েছে। ওয়াসকুরুনি ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। সেখানে পারভীনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে ওয়াসকুরুনির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে জান্নাতুলের।

পরে ২০১৮ সালে ওয়াসকুরুনি ও পারভীন বিয়ে করেন। তখন থেকে তারা যশোর শহরের খোলাডাঙ্গা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। পাঁচ মাস আগে জান্নাতুল তাঁদের দুই সন্তান আয়েশা ও তার বড় ভাইকে ওয়াসকুরুনির কাছে রেখে যান। এরপর থেকেই পারভীন তাদের ওপর অত্যাচার শুরু করেন।

এছাড়াও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে আয়েশা কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী ছিল। সৎ দু’সন্তানকে ক্ষতি করার পরিকল্পনা করতে থাকেন পারভীন। তারই অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবেই আয়েশাকে হত্যা করেছেন তার সৎ মা পারভীন।

এ ঘটনার সাথে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন। আটকের পর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও তথ্য বের হবে বলে জানিয়েছেন এসআই রাজ্জাক।