দু’কন্যার শখ মেটাতে পাবনার আসলাম রঙিন ফুলকপি আবাদ করে তাক লাগিয়েছেন

দু’কন্যার শখ মেটাতে পাবনার আসলাম রঙিন ফুলকপি আবাদ করে তাক লাগিয়েছেন

দু’কন্যার শখ মেটাতে পাবনার আসলাম রঙিন ফুলকপি আবাদ করে তাক লাগিয়েছেন

জাপানের দেশের রঙিন কপি চাষ করে পাবনার আসলাম আলী তাক রাগিয়ে দিয়েছেন। ইউটিউবে রঙিন ফুলকপি  দেখে তা চাষের জন্য বাবার উপর চাপ প্রয়োগ করে আসলামের স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়ে। দু’কন্যার শথ মেটাতে আসলাম আলী ঢাকা থেকে বেগুনি রঙের ভেলেনটিনা ও হলুদ রঙের কেরটিনা জাতের রঙিন কপির বীজ নিয়ে  দেড় বিঘা জমিতে সাড়ে ৭ হাজারের মত কপি গাছ রোপণ করেছিলেন। কেরটিনা জাতের হলুদ রঙের ফুলকপি ইতোমধ্যে বাজারজাত করতে শুরু করেছেন তিনি। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই রঙিন ফুলকপি বাজারে নিয়ে এসেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন আসলাম। হাসিখুশিতে বাড়ির সবাই আনন্দে উদ্বোলত হয়ে পড়েন। বাজারে বর্তমান  দেশী ফুলকপি ৩০/৪০ টাকা কেজি দওে বিক্রি হলেও বঙিন ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা। রোববার সকালে মেরিল বাইপাস সড়কে বিক্রিতা জানালেন রঙিন ফুরকপি ৮০ টাকা কেজি দওে বিক্রি হচ্ছে। আকর্ষনীয় রঙিন ফুলকপি ক্রেতা মজনু বিশ্বাস জানালেন খাওয়াটায় মেইন উদ্দেশ্য নয়; বাড়ির সবাইকে দেখানোর জন্যই মূলত আজকের এই রঙিন ফুরকপি কেনা।

পাবনা সদর উপজেলার বিলভেদুরিয়া গ্রামের ওমর আলীর ছেলে কৃষক আসলাম আলী চাষের প্রথম বছরেই সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এর আগে দুই থেকে তিন বিঘা জমিতে সাদা ফুলকপির চাষাবাদ করেই এতদিন চলেছে তার সংসার। এবার নতুন জাতের ব্যতিক্রমী রঙিন ফুলকপি চাষ করে পেয়েছেন অভাবনীয় সাফল্য।

আসলাম আলী বলেন, দুই মেয়ে ইউটিউবে দেখে আমাকে বিষয়টি আবাদের জন্য বলেছিল। এরপর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তওে যোগাযোগ করলে তারা বলে রঙিন কপির বিষয়ে তাদেও তেমন জানা নেই। এরপর ইউটিউব থেকে নম্বর সংগ্রহ করে মাগুরা যাই। সেখানে ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করার কথা বলে। আমি ঢাকা গিয়ে বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। যদিও এই বীজের দাম অনেক বেশি।

রঙিন কপির আবাদের আগে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। বর্তমানে চাষ কওে বেশ সাফল্য পেয়েছি। বাম্পার ফলন আর ভালো দাম পাওয়ায় এখন সবাই খুশি। এখন আমার খেতের হলুদ আর বেগুনি রঙের বিদেশী জাতের কপি  দেখতে ভিড় করছে স্থানীয় লোকজন। বাজারেও রঙিন ফুলকপির চাহিদা ও দাম বাড়ায় ভালো লাভের আশা

তিনি আরও বলেন, এক বিঘা জমিতে সাদা কপি চাষের খরচ ২০-২৫ হাজার টাকা লাগে। বিক্রি হয় ৪০-৫০ হাজার টাকায়। আর রঙিন ফুলকপিতে এক বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। বিক্রি ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার হবে বলে ধারণা  করছি। আর দেড় বিঘা জমির রঙিন ফুলকপি প্রায় দুই লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।  

তার বাবা ওমর আলী বলেন, দুই নাতনি মোবাইলে রঙিন কপি দেখে এই আবাদের কথা বলে। দেখা গেল এই কপি এই জেলায় আবাদ হয় না। তাই ছেলে বলল রঙিন কপি আবাদ করব। কাউকে বলা যাবে না। যদি ফলন না হয়; তা’হলে মানুষজন মশকরা করবে। আলহামদুলিল্লাহ প্রথম আবাদেই সফলতা আসছে। অন্য কপির তুলনায় এই কপিতে আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এখন বহু মানুষ এই রঙিন কপি দেখে আবাদেও দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। এটাও আমার ষাফল্য বলে মনে করি।

শহরের সবজি বিক্রেতা নান্নু শেখ বলেন, সবজি চাষি আসলাম অনেক আগ থেকে পালং শাকসহ দেশী ফুলকপি ও বাধাকপি পাইকারিভাবে সরবরাহ করতেন। এ বছর প্রথম রঙিন ফুলকপি সরবরাহ করছেন। যা তিনি নিজেই চাষ করেছেন। রঙিন ফুলকপি ক্রেতাদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। স্বাদও সাদা কপির থেকে অনেক ভালো। প্রথমে কয়েকদিন ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হলেও বর্তমানে প্রতি কেজি ৮০/৯০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, বিদেশে বিভিন্ন রঙিন কপি আবাদ হলেও আমাদের দেশে তেমন আবাদ শুয় হয়নি। কিছু মানুষ ঢাকা থেকে বীজ সংসহ করে আবাদ করে সাফল্যও পাচ্ছেন। সদরের কৃষক আসলাম জাপানি জাতের রঙিন কপি চাষে বেশ সাফল্য পেয়েছেন বলে তিনি এ প্রতিনিধিকে চানান। তিনি আরো বলেন, যেহেতু এ জেলায় এই রঙিন  ফুলকপির আবাদ নেই তাই এর উৎপাদনের টার্গেটও নেই। তবে চাষ বৃদ্ধি পেলে অবশ্যই কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ আবাদের দিকে উৎসাহ করা হবে।