পাবিপ্রবিতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কর্মকর্তাকে হেনস্তার অভিযোগ

পাবিপ্রবিতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কর্মকর্তাকে হেনস্তার অভিযোগ

ফাইল ছবি

পাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তাকে হেনস্তা ও হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হলেন, মোঃ রাফাত বিন ইসলাম শোভন, আলমাছুর রহমান অয়ন, জহির রায়হান,মোঃ লিখন এবং তানভীর শান্ত।

ভুক্তভোগী ওই কর্মকর্তার হলেন শারিরীক শিক্ষা দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার শেখ শাহজামাল। অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে মোঃ রাফাত বিন ইসলাম শোভন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, আলমাছুর রহমান অয়ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, জহির রায়হান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মোঃ লিখন ও তানভীর শান্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। এরা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর অনুসারী।

রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের শারিরীক শিক্ষা দপ্তরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। ভুক্তভোগী কর্মকর্তা শেখ শাহজামাল এ নিয়ে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, রোববার দুপুর ১.৪৫ মিনিটে একটি নাম্বার থেকে তার ফোনে কল আসে।

তিনি তখন ট্রেজারার অফিসে ছিলেন। সেখান থেকে অয়ন, শোভন, লিখন, জহির, শান্ত সহ ১৫ থেকে ১৮ জন ছেলে তাকে শারীরিক শিক্ষা দপ্তরে ডেকে এনে হেনস্তা করেন এবং মৃত্যুর হুমকি সহ তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। এ সময় তাকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য বলেন, না গেলে খুন করে ফেলার হুমকি দেন।

অভিযোগ পত্রে ভুক্তভোগী কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চাকরির নিরাপত্তা ও হত্যার হুমকির বিচার চেয়েছেন। ভুক্তভোগী কর্মকর্তা শেখ শাহ জামাল বলেন, ওরা দুপুরে এসে আমার কাছে ব্যাডমিন্টন খেলার ফেদার কেনার জন্য টাকা চায় কিন্তু আমি বলেছি লিখিত আবেদন করতে। তারা সেটা করতে রাজি হয়নি বরং তারা আমাকে তাৎক্ষনিক টাকা দিতে বলে। আমি সেটা করতে অপরাগ হলে ওরা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন। এরপর আমার শার্টের কলার চেপে আমাকে বের করে নিতে চায়। একটা পর্যায়ে অয়ন আমাকে খুন করে ফেলার হুমকি দেন। এ নিয়ে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি প্রশাসনের কাছে আমার নিরাপত্তা এবং আমাকে হত্যার হুমকির বিচার চাই।

তবে ভুক্তভোগী কর্মকর্তার করা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। তারা জানান, ব্যাডমিন্টন খেলার সরঞ্জাম চাওয়ার জন্য তারা দুপুরে শারীরিক শিক্ষা দপ্তরে যান। সেখানে ঐ কর্মকর্তা তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। ঘটনার এক পর্যায়ে ঐ কর্মকর্তা আলমাছুর রহমান অয়ন এবং লিখনের ওপর হামলা করলে তারা আহত হয়। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে গিয়ে প্রক্টরকে ঘটনাটি জানান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

এই বিষয়ে আলমাছুর রহমান অয়ন বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে আমরা ব্যাডমিন্টন খেলার ফেদারের জন্য উনাকে বলছি। আমাদের দুই বক্স ফেদার দেওয়ার কথা কিন্তু উনি দিচ্ছেনা। আজকে আমরা উনাকে অনেকবার ফোন দিলাম কিন্তু উনি ফোন ধরেননি। পরে উনার দপ্তরে যাই বিষয়টা জানার জন্য। কিন্তু উনি আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন এবং আমাদের গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে উনি আমাদের ওপর হামলা করেন এবং আমরা দুইজন আহত হই। আসার সময় তিনি আমাদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন।

এই ঘটনার একটি অডিও এই প্রতিবেদকের হাতে আসে। ঐ অডিওতে ভুক্তভোগী কর্মকর্তার সাথে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাকবিতন্ডার কথা শোনা যায়। ঐ অডিওতে একজনকে বলতে শোনা যায়, তোকে একেবারে খুন করে ফেলবো। তবে এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবু।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, দুপুরে শুনেছি ছাত্রলীগের সাথে এক কর্মকর্তার কথাকাটাকাটি হয়েছে। তবে আমি এর আগে অফিস থেকে বের হয়ে আসি। ঘটনাটি বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে বলতেছে। তাই কার দোষ সেটা এখনই বলা যাচ্ছেনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, আমি সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত অফিসে ছিলাম, এ নিয়ে কোন অভিযোগ পত্র আমি পাইনি। তবে ঐ কর্মর্কতা দাবি করেন রেজিস্ট্রারের কাছে অভিযোগপত্র পৌঁছানো হয়েছে এবং তিনি যে সেটার গ্রহণ করেছেন সেটা অভিযোগ পত্রে উল্লেখ আছে।