রাবিতে জন্ডিসের প্রকোপ, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৬৮ শিক্ষার্থী

রাবিতে জন্ডিসের প্রকোপ, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৬৮ শিক্ষার্থী

ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বেড়েছে পানিবাহিত জন্ডিস (হেপাটাইটিস) রোগের প্রকোপ। গত এক সপ্তাহে ৬৮ শিক্ষার্থী এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। দূষিত পানি ও ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, শরীর খারাপ হলে গত ১৩ জানুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (রামেকে) ভর্তি হন তিনি। বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক জানান হেপাটাইটিস ‘এ’ অর্থাৎ জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন৷ জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

আরেক শিক্ষার্থী পাভেল মাহমুদও জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু তিনিই নন; এভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

গত এক সপ্তাহে পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮ শিক্ষার্থী জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন।

রাবির মেডিকেল সেন্টারের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৪৬ শিক্ষার্থী পরীক্ষা করালে ৬০ শিক্ষার্থীর শরীরে হেপাটাইটিস ‘এ’ ধরা পড়ে।

গত ১৫ জানুয়ারি ১১ জন পরীক্ষা করালে জন্ডিস ধরা পড়ে ৭ জনের। ১৬ তারিখে ১৩ জনের মধ্যে পাঁচ, ১৭ জানুয়ারি আটজনের মধ্যে ছয়, ১৮ জানুয়ারি ২১ জনের মধ্যে ১২, ২১ জানুয়ারি ১৬ জনের মধ্যে ১০, ২২ জানুয়ারি ১৭ জনের মধ্যে আট, ২৩ জানুয়ারি ১৫ জনের মধ্যে ৫ জন, ২৪ জানুয়ারি ১৮ জনের মধ্যে আট এবং ২৫ জানুয়ারি ২৭ জনের মধ্যে সাত শিক্ষার্থীই জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল এবং একাডেমিক ভবনগুলোতে যেন বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল, একাডেমিক ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাসে সাবমারসিবল পাম্পের সংখ্যা খুবই কম।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপ-প্রধান চিকিৎসক ডা. মো. লোমান মঞ্জুর বলেন, জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মূলত শীতকালে ঠান্ডাজনিত সমস্যার কারণে এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয় মানুষ। এ ছাড়াও পানিবাহিত রোগ ও ফুটপাতের খাবার থেকে হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাসে আক্রান্ত হন রোগীরা। তবে সঠিক বিশ্রাম ও ফুটপাতের খাবার এড়িয়ে চললে এ রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসক ডা. তবিবুর রহমান শেখ বলেন, হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের কারণে জন্ডিস হচ্ছে। এটি মূলত একটি পানিবাহিত রোগ। এ রোগ থেকে নিরাময় পেতে হলে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের সচেতনতা। যেসব শিক্ষার্থী হলে থাকেন, তাদের সাবমার্সিবলের পানি খেতে হবে। ক্যাম্পাসে হোটেল ও ক্যান্টিন মালিকদের উচিত বিশুদ্ধ পানি দিয়ে রান্নার কাজ করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, যেদিন থেকে জন্ডিসের আক্রান্ত রোগী ধরা পড়েছে তারপর থেকেই আমরা মেডিকেল সেন্টারে বলে দিয়েছি এটা যেন সচেতনভাবে দেখা হয়। এ ছাড়াও আমরা গণমাধ্যমের সাহায্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জানাতে চেষ্টা করেছি তারা যেন যেখান- সেখান থেকে পানি পান না করেন। টিউবওয়েল বা সাবমার্সিবল এর বিশুদ্ধ পানি পান করলে তারা নিরাপদ থাকবেন।