জার্মানির মধ্যপ্রাচ্য নীতি সফল হচ্ছে না

জার্মানির মধ্যপ্রাচ্য নীতি সফল হচ্ছে না

জার্মানির মধ্যপ্রাচ্য নীতি সফল হচ্ছে না

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে দ্বি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে সমর্থন করে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক মনে করেন, দ্বি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই ‘একমাত্র সমাধান'৷

ডিসেম্বরে এক বিবৃতিতে বেয়ারবক বলেছিলেন, ‘‘সন্ত্রাস দমন না হলে ইসরায়েল কখনও শান্তিতে বাস করতে পারবে না৷ ইসরায়েল শুধুমাত্র তখনই শান্তি উপভোগ করতে পারবে, যখন ফিলিস্তিনিদেরও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা থাকবে৷''

কিন্তু সম্প্রতি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান প্রত্যাখ্যানের কথা জানান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু৷ প্রথমে এক্স-এ বিষয়টি জানানোর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপেও বিষয়টি তাকে জানান নেতানিয়াহু৷

হামাসও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান সমর্থন করে না, কারণ, তারা ইসরায়েলের অস্তিত্ব স্বীকার করে না৷ শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এই সমাধান সমর্থন করেন৷

দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান কতটা বাস্তব?

জার্মানির পাবলিক রেডিও এসডাব্লিউআরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইতিহাসবিদ মিশায়েল ভল্ফজন বলেন, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবতাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে৷ ‘‘আমরা কীভাবে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করবো?'' প্রশ্ন তার৷ এটি ‘মূলত বাজে প্রস্তাব এবং বাস্তবায়নযোগ্য না' বলেও মনে করেন তিনি৷

মিশরের কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান মোহামেদ এল বারাদেই পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে ভন্ডামির অভিযোগ এনেছেন৷ সম্প্রতি ‘ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স অ্যান্ড সোসাইটি' জার্নালের জার্মান সংস্করণে প্রকাশিত এক লেখায় তিনি বলেন, ‘‘যে রাজনীতিবিদেরা এখন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে কথা বলছেন তারা, ইসরায়েল যখন ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য পরিকল্পিত জায়গার অনেকখানির দখল নিচ্ছিল (সংযোজন ও বসতি নির্মাণের মাধ্যমে) তখন চুপ ছিলেন৷''

তবে অলাভজনক সংস্থা ‘কাউন্টার এক্সট্রেমিজম প্রজেক্টের' মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক হান্স-ইয়াকব শিন্ডলার ডিডাব্লিউকে বলেন, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়টি জার্মানি নিয়মিতভাবে বলে যেতে পারে৷

ইউএনআরডাব্লিউ-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ

গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে যে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিল তার সঙ্গে জাতিসংঘের ইউএনআরডাব্লিউএ সংস্থার কয়েকজন কর্মী জড়িত ছিল বলে সম্প্রতি অভিযোগ করেছে ইসরায়েল৷ এই বিষয়টি জার্মানির মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতিকে আরও জটিল করে তুলেছে৷ কারণ ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় কাজ করা জাতিসংঘের ঐ সংস্থাটিতে দীর্ঘদিন ধরে অনেক সহায়তা করে আসছে জার্মানি৷ ইসরায়েলের অভিযোগের পর জার্মানিসহ পশ্চিমা কয়েকটি দাতা দেশ ঐ সংস্থায় সহায়তা স্থগিত করেছে৷ সমালোচকেরা বলছেন, জাতিসংঘের ঐ সংস্থা কীভাবে টাকা খরচ করছে, সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে জার্মান সরকার৷

মামলায় ইসরায়েলকে সমর্থন

ইসরায়েলের প্রতি জার্মানির সমর্থন দিন দিন আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে৷ সম্প্রতি সাউথ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক কাজ করার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করেছে৷ এই মামলায় ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে জার্মানি৷ এই বিষয়ে জার্মান সরকারের মুখপাত্র স্টেফান হেবেস্ট্রাইট বলেন, ‘‘আমাদের অতীতের কারণে, হলোকস্টের কারণে, এই বিষয়টি খুব ঘনিষ্ঠভাবে পরীক্ষা করে দেখার বাধ্যবাধকতা অনুভব করি আমরা, এবং আমরা নিশ্চিত নই যে, যে যুক্তিগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে তা এই অভিযোগকে (গণহত্যার) সমর্থন করে৷''

অবহেলিত মধ্যপ্রাচ্য নীতি

ইতিহাসবিদ মিশায়েল ভল্ফজন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অনেক দেশের কাছে মধ্যপ্রাচ্য একটি অপরিহার্য ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক অঞ্চল৷ ‘‘আর মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র নির্ভরযোগ্য অংশীদার হলো ইসরায়েল, বিষয়টি আপনার পছন্দহোক বা না হোক,'' এসডাব্লিউআর বেতারকে বলেন তিনি৷ একইভাবে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং সামরিক প্রযুক্তির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইসরায়েলকে প্রয়োজন, বলেন ভল্ফজন৷ এসব কারণে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান পেতে পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলের উপর খুব বেশি চাপ দিতে পারে না বলে মনে করেন তিনি৷

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইইউ ও জাতিসংঘকে নিয়ে ‘মিডলইস্ট কোয়ার্টেট' গঠন করা হয়েছিল৷ জার্মানিও সেখানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছিল৷ ‘‘এই কোয়ার্টেটের একটি ধীর ও নীরব মৃত্যু হয়েছে,'' বলে মনে করেন শিন্ডলার৷ ‘‘ফিলিস্তিনিদের বিষয়টি পাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে৷ সব পক্ষ গত কয়েক বছরে বিষয়টি পাশে সরিয়ে রেখেছে,'' বলেন তিনি৷

সূত্র : ডয়চে ভেলে