কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো বিলুপ্তপ্রায় লাঠি খেলা

কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো বিলুপ্তপ্রায় লাঠি খেলা

কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো বিলুপ্তপ্রায় লাঠি খেলা

আধুনিক সভ্যতার আড়ালে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বিলুপ্তপ্রায় লাঠি খেলা। ঢাক-ঢোলের বাজনা আর গানের সুরের তালে তালে চলে লাঠিয়ালদের লাঠির কসরত। খেলায় প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে পাল্টা আঘাত করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন লাঠিয়ালরা। ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা দেখতে সেখানে ভিড় জমায় হাজারো দর্শক। এ আয়োজনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বয়ে যায় পুরো এলাকায়। এমন আয়োজন যেন প্রতি বছর হয় তার দাবি জানিয়েছেন খেলা দেখতে আসা দর্শকরা। অনেকদিন পর এবার কুষ্টিয়ায় জাঁকজমকের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। আধুনিক খেলার ভিড়ে এই ঐতিহ্যবাহী খেলা হারিয়ে যেতে বসেছেও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খেলাটি ধরে রাখতে চায় লাঠিয়াল বাহিনীরা

অতীতকালে জমিদাররা শত্রু দমনে লাঠিয়াল পুষতেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর লাঠিয়ালদের প্রয়োজন ফুরালেও তাদের বংশধরেরা এটাকে খেলা হিসেবে আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন। তবে কুষ্টিয়ায় সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে ওস্তাদ ভাই লাঠিখেলা বাঁচিয়ে রাখতে ও সারাদেশের লাঠিয়ালদের সংগঠিত করতে একটি সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করেন। তিনি ১৯৩৩ সালে কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী। আর্থিক দৈন্যতাসহ নানা কারণে লাঠিয়ালদের সেইভাবে সংগঠিত করা সম্ভব না হলেও বর্তমানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর পরিবার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কুষ্টিয়া ছাড়াও নড়াইল, ঝিনাইদহ, পাবনা, নাটোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙা ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৩৫টি দলের কমপক্ষে শিশুসহ পাঁচশ লাঠিয়াল এবার এই উৎসবে অংশ নেন। এসব দলে পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি নারীদের সংখ্যাও কম ছিল না। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে গত বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে ১০শে ফেব্রুয়ারী শনিবার শেষ হবে গ্রাম-বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য এই লাঠিখেলা উৎসব। দর্শকদের সামনে লাঠিয়ালরা উপস্থাপন করেন নানা ধরনের কসরত। দেশের ঐতিহ্য ও গ্রামীন জীবনের সংগ্রাম লাঠি খেলার মাধ্যমে তুলে ধরেন খেলোয়াড়রা। খোলাটি টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চান তারা। এবার  শিশু ও নারীসহ এবার ৩৫টি দল অংশগ্রহন করে এই আয়োজনে। লাঠিয়াল বাহিনীর নতুন নতুন খেলা দেখার জন্য ভিড় করছেন দর্শরা। এধরনের আয়োজনে খুশি তারা।

পৃষ্ঠপোষক কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শিশির কুমার রায় ও আয়োজক রূপন্তি চৌধুরী বলেন, সুখি সুন্দর জীবনের জন্য এই খেলাটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। জনপ্রিয়তার মাধ্যমে খেলাটি সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে স্কুল কলেজ পড়–য়া বা উঠতি যুব সমাজকে বিপথগামীতা থেকে রক্ষা করা যাবে বলে জানান আয়োজকেরা। তবে সরকারের আর্থিক অনুদান পেলে গ্রাম্য ঐতিহ্য লাঠি খেলাটি বেশী করে আয়োজন করা সম্ভব বলে মনে করেন তারা ।