ট্রাম্পের মন্তব্যে ইউরোপের চিন্তা অনেকটাই বেড়েছে

ট্রাম্পের মন্তব্যে ইউরোপের চিন্তা অনেকটাই বেড়েছে

ট্রাম্পের মন্তব্যে ইউরোপের চিন্তা অনেকটাই বেড়েছে

ন্যাটোর মূল বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন ট্রাম্প। ইউরোপের দেশগুলি চিন্তিত। তবে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।ইইউ-র পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল বলেছেন, ''ন্যাটো কখনই এমন কোনো সামরিক জোট নয়, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের রসিকতার উপর নির্ভর করে।'' এটাই ছিল ট্রাম্পের বক্তব্যের উপর বরেলের প্রতিক্রিয়া।

গত শনিবার ট্রাম্প সাউথ ক্যারোলিনায় প্রচারসভায় বলেছেন, ''ন্যাটোর শরিক দেশগুলি যদি তারা তাদের ভাগের অর্থ না দেয়, তাহলে তিনি যা খুশি করার জন্য রাশিয়াকে উৎসাহিত করবেন।'' ট্রাম্পের এই মন্তব্যে ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে আতঙ্কের স্রোত বয়ে গেছে। কারণ, ট্রাম্পের আগামী নির্বাচনে জেতার একটা সম্ভবনা আছে।ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল স্টলটেনবার্গ বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ''ন্যাটোর শরিকদের নিয়ে ট্রাম্প যা বলেছেন, তার প্রভাব অ্যামেরিকা ও ন্যাটোর শরিক দেশের উপর সমানভাবে পড়বে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সেনার ঝুঁকি বেড়ে যাবে।''

ট্রাম্পের হুমকি ও ন্যাটো

প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ন্যাটো থেকে সরে আসার হুমকি অনেকবার দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি একাধিকবার বলেছেন, অ্যামেরিকা যে তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে, তার জন্য ইউরোপকে অর্থ দিতে হবে। এর ফলে ন্যাটোর চুক্তির বহুআলোচিত পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদ পালন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ন্যাটোর কোনো একটি দেশ যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সেই আক্রমণকে নিজেদের উপর আক্রমণ হিসাবে দেখবে এবং তা প্রতিহত করবে।

ঘটনা হলো, ট্রাম্প আবার ন্যাটো নিয়ে সেই বিতর্কিত কথা বললেন। কূনীতিকদের মতে, প্রচারে নেমে এই কথা বলাটা খুবই উদ্বেগজনক। ন্যাটোর অনেক শরিক দেশই মনে করে, ট্রাম্প যদি আবার জিতে আসতে পারেন, তাহলে তিনি আগেরবারের থেকে অনেক বেশি করে শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবেন।

ব্রাসেলসের ইনস্টিটিউট ফর ইউরোপীয়ান স্টাডিজের এলিসন উডওয়ার্ড ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গতবার ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন ইইউ ও অ্যামেরিকার সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন দেখা গিয়েছিল। একটা নাটকীয় পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল। তাই যদি ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় আসেন, তাহলে কী হবে, ইউরোপের দেশগুলির এই চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক।''

ন্যাটোর সংকটের সময়

ট্রাম্পের এই হুমকি এমন একটা সময়ে এসেছে, যখন ইউক্রেনে রাশিয়া আরো তীব্র আক্রমণ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, যখন কিয়েভের জন্য নতুন প্যাকেজে সায় দেয়নি মার্কিন কংগ্রেস, যখন ইউরোপের দেশগুলি তাদের অস্ত্রের উৎপাদন বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে।

মার্কিন থিংক ট্যাংক জার্মান মার্শাল ফান্ড ইস্ট-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মিশেল বারানওস্কি বলেছেন, ''ট্রাম্পের মন্তব্য থেকে এই সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে যে, তিনি ক্ষমতায় এলে রাশিয়া ন্যাটোর শক্তি পরীক্ষা করবে।'' তিনি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''ট্রাম্পের মন্তব্য ইউরোপের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তা বাড়িয়েছে। ইউরোপের কোনো দেশের উপর আক্রমণ হলে অ্যামেরিকা পাশে দাঁড়াবে কিনা, সেই চিন্তা স্বাভাবিকভাবেই দেখা দিয়েছে।''

ব্রাসেলসের কূটনীতিকদের মুখেও একই চিন্তার কথা শোনা যাচ্ছে। তারা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় জানাচ্ছেন, ট্রাম্পের মন্তব্যের ফলে এই সামরিক জোটের যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। ট্রাম্প যা বলেছেন তা হেঁয়ালির মতো। কারণ, ইউরোপের দেশগুলির সামনে এমন কোনো বিল নেই, যা তাদের ভরতে হবে।

প্রতিরক্ষাখাতে খরচ না করা

ট্রাম্পের মন্তব্যের অর্থ হলো, ইউরোপের দেশগুলি তাদের প্রতিশ্রুতিমতো জিডিপি-র দুই শতাংশ অর্থ প্রতিরক্ষাখাতে খরচ করছে না। ২০১৪ সালে ওয়েলসে ন্যাটো শীর্ষবৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।জার্মানি সম্ভবত এই বছর তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ করতে পারবে। সেটাও ১০ হাজার কোটি ইউরোর বিশেষ তহবিলের জন্য। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর ওই তহবিল তৈরি করা হয়।তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের কথার মধ্যেও যুক্তি আছে। এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, ''ট্রাম্পের কথায় ইউরোপের কিছু দেশের ঘুম ভাঙবে।''

সূত্র : ডয়চে ভেলে