রাসেল তাণ্ডবে হোয়াইটওয়াশ এড়াল উইন্ডিজ

রাসেল তাণ্ডবে হোয়াইটওয়াশ এড়াল উইন্ডিজ

সংগৃহীত ছবি

রান ২০ না হতেই নেই তিন উইকেট, একশর আগে বিদায় নিলেন আরও দুইজন। বিপাকে পড়া দলকে টানলেন আন্দ্রে রাসেল ও শেরফেইন রাদারফোর্ড। তাদের ঝড়ো ফিফটি ও রেকর্ড গড়া জুটিতে দুইশ ছাড়ানো সংগ্রহ গড়ল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আলো ছড়ালেন ডেভিড ওয়ার্নার। পরে টিম ডেভিডের তাণ্ডবেও লক্ষ্যের ধারেকাছে যেতে পারল না স্বাগতিকরা।

পার্থে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৩৭ রানের জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল ক্যারিবিয়ানরা। ২২০ রানের পুঁজি গড়ে প্রতিপক্ষকে ১৮৩ রানে থামিয়ে দেয় তারা। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে তিন টি-টোয়েন্টির সিরিজটি আগেই নিশ্চিত করে ফেলে অস্ট্রেলিয়া।

রাসেল ও রাদারফোর্ডের নৈপুণ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ২২০ রান অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে দলটির সর্বোচ্চ। আগের সেরা এই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে করা ২০৭ রান।

সফরকারীদের জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া রাসেল ও রাদারফোর্ড ষষ্ঠ উইকেটে যোগ করেন ৬৭ বলে ১৩৯ রান; আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ষষ্ঠ উইকেটে যা রেকর্ড। ২০২২ সালে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে পাপুয়া নিউগিনির টনি উরা ও নরম্যান ভানুয়ার ১১৫ রানের জুটি আগের সর্বোচ্চ। ৭ ছক্কা ও ৪টি চারে ২৯ বলে ৭১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা রাসেল। পাঁচটি করে ছক্কা ও চারে ৪০ বলে ৬৭ রান করেন রাদারফোর্ড।

বিশাল রান তাড়ায় শুরুতে অস্ট্রেলিয়াকে পথে রাখা ওয়ার্নার করেন ৩ ছক্কা ও ৯ চারে ৪৯ বলে ৮১ রান। এই ইনিংসের পথে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টি-টোয়েন্টিতে ৩ হাজার রান (৩ হাজার ৬৭) স্পর্শ করেন বাঁহাতি ওপেনার। পরে ৪ ছক্কা ও ২ চারে ১৯ বলে ৪১ রান করেন ডেভিড।

দিনের শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল অস্ট্রেলিয়ার। ১৭ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চেপে ধরে তারা। যেখানে দুটি শিকারই ছিল অভিষিক্ত পেসার জেভিয়ার বার্টলেটের। বিপাকে পড়া দলের রানের চাকা সচল রাখেন রোস্টন চেইস। ২ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৭ রান করা এই অলরাউন্ডার পরে বল হাতেও ছড়ান আলো। অফ স্পিনে ৪ ওভারে স্রেফ ১৯ রান দিয়ে ২ শিকার ধরেন তিনি।

পরপর দুই ওভারে চেইস ও আগের ম্যাচে বিধ্বংসী ফিফটি করা রভম্যান পাওয়েলের বিদায়ের পর শুরু রাদারফোর্ড ও রাসেল জুটির পথচলা শুরু। খুনে ব্যাটিংয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন দুইজন।

ক্যারিবিয়ানদের হয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটিতে পা রাখেন রাদারফোর্ড ৩৩ বলে। রাসেলের ফিফটি আসে ২৫ বলে। ১৯তম ওভারে জ্যাম্পার ওপর ঝড় বইয়ে দেন রাসেল। প্রথম বলে ছক্কার পর তৃতীয় বলে জীবন পান তিনি। বাউন্ডারিতে ঝাঁপিয়ে পড়েও ক্যাচ নিতে পারেননি টিম ডেভিড, উল্টো হয় চার। জীবন পেয়ে শেষ তিন বলে ছক্কায় ওড়ান রাসেল, ওই ওভার থেকে আসে ২৮ রান!

রাসেলের ওই তাণ্ডবে বিব্রতকর এক রেকর্ডে নাম উঠে যায় জ্যাম্পার। ৪ ওভারে ৬৫ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন এই লেগ স্পিনার। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টি-টোয়েন্টিতে এর চেয়ে বেশি রান খরচ করেননি কেউ। ২০১৮ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যান্ড্রু টাই দিয়েছিলেন ৬৪ রান।

পাহাড়সহ রান তাড়ায় ওয়ার্নারের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু আরেক প্রান্তে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি মিচেল মার্শ। তার বিদায়ে ভাঙে ৬৮ রানের উদ্বোধনী জুটি। অ্যারন হার্ডিও পারেননি ওয়ার্নারকে সঙ্গ দিতে।

চেইস এক ওভারে ফিরিয়ে দেন ২৫ বলে ফিফটি করা ওয়ার্নার ও জশ ইংলিসকে। আগের ম্যাচে রেকর্ড ছোঁয়া সেঞ্চুরি করা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এদিন ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রভ। ২ চারে ১২ রান করতে তিনি খেলেন ১৪ বল। এরপর ডেভিড ঝড় তুললেও লক্ষ্যের কাছে যেতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। তার বিধ্বংসী ইনিংসে কেবল হারের ব্যবধানই কমে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ২২০/৬ (চার্লস ৪, মেয়ার্স ১১, পুরান ১, চেইস ৩৭, পাওয়েল ২১, রাদারফোর্ড ৬৭*, রাসেল ৭১, শেফার্ড ২*; বার্টলেট ৪-০-৩৭-২, বেহরেনডর্ফ ৪-০-৩১-১, জনসন ৪-০-৪৯-১, হার্ডি ৪-০-৩৬-১, জ্যাম্পা ৪-০-৬৫-১)

অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১৮৩/৫ (মার্শ ১৭, ওয়ার্নার ৮১, হার্ডি ১৬, ইংলিস ১, ম্যাক্সওয়েল ১২, ডেভিড ৪১*, ওয়েড ৭*; জোসেফ ৪-০-৩৮-০, হোল্ডার ৪-০-৪৯-০, রাসেল ১-০-১১-০, শেফার্ড ৪-০-৩১-২, আকিল ৩-০-৩৩-১, চেইস ৪-০-১৯-২)

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৭ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: আন্দ্রে রাসেল

সিরিজ: ৩ ম্যাচের ২-১ ব্যবধানে জয়ী অস্ট্রেলিয়া

ম্যান অব দা সিরিজ: ডেভিড ওয়ার্নার