যেসব খাবার কাঁচা খেলে হতে পারে বিষক্রিয়া

যেসব খাবার কাঁচা খেলে হতে পারে বিষক্রিয়া

ছবি: সংগৃহীত

কাঁচা মাছ-মাংস খাচ্ছে দেখলে রাক্ষসের কথা মনে পড়ে যায়। পৃথিবীর বহু দেশ, যাদের হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো ইতিহাস রয়েছে, রয়েছে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, তারা কিন্তু আজও কাঁচা মাছ-মাংস খায়। যেটা শরীরের জন্য পরবর্তী পর্যায়ে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

অন্যদিকে স্বাস্থ্য যদি ভালো না থাকে তাহলে কেবল শরীরের সমস্যা দেখা দেয়। আর এই স্বাস্থ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত খাদ্য। অনেক সময় পুষ্টিকর খাদ্য সঠিক নিয়মে মেনে না খেলে পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ ফল ও শাক-সবজি কাঁচা খাওয়াটাই বেশি স্বাস্থ্যকর। আবার কিছু কিছু খাবার কাঁচা খাওয়ার কথা আমরা ভাবতেও পারি না, যেমন কাঁচা মাছ, মাংস বা ডিম। আবার এমন কিছু খাবার আছে যা কাঁচা খাওয়ার ইচ্ছে হতেই পারে, কিন্তু তা মোটেই নিরাপদ নয়!

রান্না করার মাধ্যমে বেশ কিছু ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া নষ্ট হয়ে যায়। কাঁচা খাবার খেলে এসব জীবাণু থেকে খাদ্যে বিষক্রিয়া ও পাকস্থলীতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু কিছু খাবার কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় না। সেগুলো কাঁচা খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এমনই খাবার আছে যা কাঁচা খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।

কাঁচা মাছ-মাংস
পুষ্টিবিদদের ম, কাঁচা মাংসে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া যেমন- ই কোলি থাকতে পারে যা খাবারে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ভালো মতো রান্না করা মাংস খাওয়া এই ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে কাঁচা মাছে ব্যাক্টেরিয়া ও পরজীবী নাশ করতে হিমায়িত করা হয়। মাছ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসার সময় জীবাণু আবার ফিরে আসে। এই সমস্যা সমাধানের সহজ উপায় হল, রান্না করে খাওয়া অথবা যত দ্রুত সম্ভব প্রস্তুতের পরে খেয়ে নেওয়া। মাছ মাংস রান্না করে খাওয়া বেশি নিরাপদ।

আলু
খাবারে বৈচিত্র্য আনতে গিয়ে কাঁচা আলু খাওয়া নিরাপদ নয়। কাঁচা আলু পেট ফাঁপা এমনকি পেট খারাপের কারণ হতে পারে, কারণ এতে এমন কিছু স্টার্চ থাকে যা হজম হয় না। আবার আলু বেশি সময় ভেজা বা গরম জায়গায় রাখলে এর ভেতরে কিছু অংশ সবুজ হয়ে যেতে পারে। এই জায়গায় সোলানিন নামের একটি টক্সিন থাকে যা ফুড পয়জনিং তৈরি করে। আলুতে এমন সবুজ অংশ থাকলে সে আলুটা না খাওয়াই নিরাপদ। পুষ্টির দিক দিয়ে বিচার করলে আলুকে ভাত ও গমের সঙ্গে তুলনা করা যায়। তবে আলু কাঁচা খাওয়ার চেষ্টা না করাই ভালো। আলুর মতো সবজি রান্না করে খেলে বেটা ক্যারোটিনের উপাদান বেড়ে যায়। কারণ কাঁচা আলুতে ক্ষতিকর বিষাক্ত কিছু উপাদান থাকে, যা হজম প্রক্রিয়ায় মারাত্বক সমস্যা সৃষ্টি করে।

সসেজ
চিকেন সসেজ বাচ্চাদের কাছে জনপ্রিয় একটি খাবার। ভেজে খাওয়া যায়, এই সসেজ দিয়ে তৈরি করা যায় সুস্বাদু হটডগ । অনেকেরই ধারণা, সসেজ যেহেতু প্রক্রিয়াজাত করা একটি খাবার, তাই এটা প্যাকেট থেকে বের করে সরাসরি খাওয়া যাবে। কিন্তু এ ধারণাটি ভুল! সসেজে থাকতে পারে লিস্টেরিয়া নামের ব্যাকটেরিয়াটি, যা আপনাকে অসুস্থ করে ফেলতে পারে। তাই ভালোভাবে রান্না না করে সসেজ খাওয়া উচিত নয়।

কাঁচা দুধ
শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সকলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য হল দুধ। এই খাদ্যগুলোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো অ্যসিড, এনজাইম থাকে যা শরীরের পক্ষে ভালো। দুধ থেকে অনেক পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। তবে, কাঁচা দুধ পান করাটা খুবই বিপজ্জনক। এতে ব্যাকটেরিয়া থাকে। এর জন্য দুধ ভালোভাবে ফুটিয়ে পান করা উচিত।

অঙ্কুরিত বীজ
বিভিন্ন অঙ্কুরিত বীজ যেমন, ছোলাবীজ কাঁচা খাওয়া উচিত নয়, যদিও এতে অনেক পুষ্টি পাওয়া যায়। স্প্রাউট ভালো করে ধুয়ে রান্না করে খাওয়া উচিত। কাঁচা অঙ্কুরগুলো প্রোটিন এবং খনিজগুলোর একটি আশ্চর্যজনক উত্স। তবে গর্ভবতী অবস্থায় অঙ্কুরিত বীজ না খাওয়াই ভালো। এর কারণ, স্প্রাউট মধ্যে ক্ষতিকারক ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা খাদ্য বিষাক্ততার কারণ হতে পারে। অঙ্কুরিত বীজ খাওয়ার সময় আপনি সেগুলোকে হয় হালকা করে ভেজে নিন বা আরও ভালো হয় যদি রান্না করে নিতে পারেন। বিভিন্ন অঙ্কুরিত বীজ যেমন, ছোলাবীজ কাঁচা খাওয়া উচিত নয়, যদিও এতে অনেক পুষ্টি পাওয়া যায়।

ময়দা
গম থেকে ময়দা হয়ে তা বাজার পর্যন্ত আসতে আসতে অনেকভাবেই এতে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে। শুধুমাত্র রান্নার মাধ্যমেই এই জীবাণু ধ্বংস হতে পারে। এ কারণে কাঁচা খামির, কুকি ডো বা কেকের ব্যাটার খাওয়া উচিত নয়। ময়দা তৈরির সময় এমন কিছু প্রক্রিয়ার সাহায্য নেওয়া হয়, যে কারণে ময়দা প্রকৃতিতে অ্যাসিডিক হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, শরীরে অতিরিক্ত অ্যাসিডিটির কারণে প্রদাহের মাত্রা বাড়তে পারে। এমনকী, আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। বেশি মাত্রায় ময়দা খাওয়া শুরু করলে শরীরে গ্লুটেন নামক একটি ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যে কারণে ক্ষুদ্রান্ত্রের যেমন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তেমনই ছোট-বড় নানা রোগে ঘাড়ে চেপে বসতে পারে।

বেগুন
ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, হাইপারটেনশন, ত্বকে ব্রণর সমস্যা ও চুলের সমস্যার জন্যে দারুন উপকারী বেগুন। বেগুনের মধ্যে সোলানিন নামের যে টক্সিনটি আলুতে থাকতে পারে, সেটি কাঁচা বেগুনেও থাকতে পারে, বিশেষ করে অপরিপক্ক বেগুনে। অন্যদিকে, কাঁচা বেগুনে অনেকের প্রবল অ্যালার্জি থাকে। এসব বিবেচনা করে বেগুন ভালোভাবে রান্না করে খাওয়াই শ্রেয়।

মাশরুম
মাশরুম শরীরের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত মাশরুম খেলে দূরে থাকা যায় রক্তশূন্যতা, ডায়াবেটিক ও উচ্চরক্তচাপের মতো রোগ থেকে। মাশরুমের রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। কোনো কোনো মাশরুম লিভারের জন্য ভালো। কফ, কাশি দমনে সাহায্য করে। কাজ করে সংক্রমণ প্রতিরোধী হিসেবে। হাঁপানি, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, রক্ত জমাট বাঁধা কিংবা বহুমূত্র রোগে মাশরুমজাত ওষুধ ব্যবহার করা হয়। মাশরুম খেতে পছন্দ করেন অনেকেই। ক্যানের মাশরুম এমনিই খাওয়া যায়। এতে থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি ও পটাসিয়াম। রান্না করলেই শরীরের জন্য এসব পুষ্টি সহজলভ্য হয়। শুধু তাই নয়, কাঁচা মাশরুম হজম করাটাও কঠিন। কাঁচা মাশরুমে কিছু ক্ষতিকর উপাদানও থাকতে পারে। এসব কারণে মাশরুম রান্না করে খাওয়া উচিত।

ঝিনুক
ঝিনুক এমন একটা খাবার যা বিষক্রিয়া সৃষ্টিকরা খাবারের শীর্ষে থাকে। এগুলো কেবল ব্যাক্টেরিয়া না বরং ভাইরাসও ছড়ায়। বিশেষত তা যখন কাঁচা খাওয়া হয়। ঝিনুকে রয়েছে ভ্রিব্রিও (ক্ষুদ্রান্ত্রে অসুখ তৈরি করতে পারে এমন ভাইরাস) এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণু যা কোষে জমাট বাঁধতে পারে। স্বাদ ও ঘ্রানহীন এমন ব্যাক্টেরিয়া মেরে ফেলার সহজ উপায় হয় রান্না করে খাওয়া।

ফলের বীজ
আপেল, আম, পীচ, নাশপাতি বা অ্যাপ্রিকটের বীজ কাঁচা খাওয়া উচিত নয়। এগুলোতে এমন একটি রাসায়নিক থাকে যা সায়ানাইডে রূপান্তরিত হয়ে বিষক্রিয়া করতে পারে। গাঁজর আমরা রান্না ও সারাতের সঙ্গে দুই ভাবেই খেয়ে থাকি। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সবজি একটি নিয়মিত খাবার। শীতকালে বাজারে পাওয়া যায় হরেক রকম সবজি। বিশেষ করে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য সবজি খাওয়া বেশি উপকারী। তবে কিছু সবজি আছে যেগুলো আমরা রান্নার পাশাপাশি কাঁচা খেয়ে থাকি। কিন্তু হাতের নাগালে পাওয়া সবজি কাঁচা খাওয়া ঠিক নয়।

তিতা কাঠবাদাম
আমরা সাধারণত যে কাঠবাদাম খাই, তা হলো সুইট আমন্ড। এগুলো যথেষ্টই স্বাস্থ্যকর। কিন্তু কাঠবাদামের মতোই দেখতে বিটার আমন্ডও পাওয়া যায়, যা অনেকটা তিতা এবং এতে থাকে বিষাক্ত হাইড্রোসায়ানিক এসিড। এই আমন্ড ৭০টি খেলে একজন মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। এতে থাকে বিষাক্ত হাইড্রোসায়ানিক এসিড। তবে রান্না করলে এগুলো আর বিষাক্ত থাকে না। বেশি মাত্রায় ময়দা খাওয়া শুরু করলে শরীরে গ্লুটেন নামক একটি ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যে কারণে ক্ষুদ্রান্ত্রের যেমন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তেমনই ছোট-বড় নানা রোগে ঘাড়ে চেপে বসতে পারে।