যেভাবে মানুষকে ভালোবাসতে বলে ইসলাম

যেভাবে মানুষকে ভালোবাসতে বলে ইসলাম

ছবি: সংগৃহীত

প্রেম-ভালোবাসা, দয়া-মায়া আল্লাহর সৃষ্টি। ভালোবাসার আরবি প্রতিশব্দ মহব্বত। অর্থ: হৃদ্যতা, আন্তরিকতা, আসক্তি, প্রেম, প্রণয় ইত্যাদি। মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে, মায়া-মমতা, শ্রদ্ধা-ভক্তি নিয়ে সমাজবদ্ধ হয়ে থাকবে—এটাই ইসলামের কাঙ্ক্ষিত বিষয়।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহর সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরসমূহে মহব্বত পয়দা করে দিলেন। অতঃপর তোমরা তার অনুগ্রহে পরস্পরে ভাই ভাই হয়ে গেলে।’ (আলে ইমরান: ১০৩)

মানুষকে ভালোবাসতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। হাদিসে এসেছে, ‘এক ব্যক্তি তার কোনো (মুসলমান) ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অন্য গ্রামে রওনা হয়, পথে আল্লাহ তার জন্য একজন ফেরেশতা বসিয়ে দেন। অতঃপর ফেরেশতা তাকে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে এমন ভালোবাসেন, যেমন তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে অমুক ব্যক্তিকে ভালোবাসো।’ (মুসলিম: ২৫৬৭)

নবীজি (স.) আরও ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা বিচার দিবসে বলবেন, আমার সুমহান ইজ্জতের খাতিরে যারা পরস্পরে ভালোবাসা স্থাপন করেছে; তারা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়া দান করব। আজ এমন দিন, আমার ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া নেই।’ (মুসলিম, মেশকাত: ৫০০৬)

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার মর্যাদা ও পরাক্রমের টানে যারা পরস্পরকে ভালোবাসে, তাদের জন্য আছে আলোর মিম্বার (মঞ্চ)। নবী ও শহীদরা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে (মর্যাদা দর্শনে) ঈর্ষা করবে।’ (তিরমিজি: ২৩৯০)

তবে ইসলামে ভালোবাসার বৈধতা নির্ণয়ের প্রধান শর্ত হলো- রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নির্ধারিত সীমায় থেকে ভালোবাসতে হবে। এই গণ্ডি পেরিয়ে প্রেম-ভালোবাসা জায়েজ নেই। যেমন- গাইরে মাহরাম নর-নারীর অবাধ মেলামেশা, দেখা-সাক্ষাৎ জায়েজ নেই। এমনকি গাইরে মাহরাম নারী-পুরুষের পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় বা অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৩২)

শারীরিক সম্পর্ক গড়ার ইচ্ছা না থাকলেও তা হারাম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। (বুখারি: ৬২৪৩)

আল্লামা খাত্তাবি (রহ.) বলেন, ‘দেখা ও কথা বলা জেনার পূর্ববর্তী স্তর। কেননা দৃষ্টি হচ্ছে মনের গোপন জগতের উদ্বোধক আর জিহ্বা হচ্ছে বাণীবাহক আর যৌনাঙ্গ হচ্ছে বাস্তবায়নের হাতিয়ার—সত্য প্রমাণকারী।’ (মাআলিমুস সুনান: ৩/২২৩)

রাসুলুল্লাহ (স.) স্ত্রীদের সবসময় ভালোবাসতেন। তাদের প্রতি সবসময় দয়া দেখাতেন। তাদের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। তাদের নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করতেন। হাদিসে আছে, ‘নবীজি (স.) আয়েশা (রা.)-এর সাথে দৌঁড় প্রতিযোগিতা করেছেন।’ এক হাদিসে আয়েশা (রা.) বলেন, আমি ও নবী (স.) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম। সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো। (সহিহ বুখারি: ২৫০) 

অতএব, ইসলামি শিষ্টাচার ও সংস্কৃতি হলো- মুসলমানের প্রতি মুসলমানের ভালোবাসা থাকবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুসলিম ভাইয়ে ভাইয়ে বন্ধুত্ব করবে। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে ভালোবাসবে এবং ভালোবাসা প্রকাশ করবে; কিন্তু গাইরে মাহরাম নারী-পুরুষ কেউ কাউকে ভালোবাসবে না, দেখা-সাক্ষাৎ কিছুই করবে না।

ইসলামে সর্বোৎকৃষ্ট ভালোবাসা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ভালোবাসা। আল্লাহর প্রতি স্বভাবতই বেশি ভালোবাসা রাখেন মুমিনরা। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় সুদৃঢ়।’ (সুরা বাকারা: ১৬৫)

আবার নবীপ্রেম ঈমানের দাবি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমার নবী (স.)-এর অনুসরণ করো; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ মার্জনা করবেন।’ (আলে ইমরান: ৩১)

এছাড়াও সন্তান, বাবা-মা, আত্মীয় স্বজনকে ভালোবাসা জায়েজ এবং সওয়াবের কাজ। ইসলামে ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন উদযাপনের অনুমতি নেই। প্রত্যেকে নিজের ভালোবাসা যেকোনো দিন, যেকোনো সময়, যেকোনো মুহূর্তে বৈধ মানুষকে প্রকাশ করতে পারে।