মার্চেই রাফাহ শহরে স্থল অভিযান, হামাসকে ইসরাইলের হুমকি

মার্চেই রাফাহ শহরে স্থল অভিযান, হামাসকে ইসরাইলের হুমকি

মার্চেই রাফাহ শহরে স্থল অভিযান, হামাসকে ইসরাইলের হুমকি

হামাস আগামী ১০ মার্চের মধ্যে পণবন্দীদের মুক্তি না দিলে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ শহরে স্থল অভিযান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে ইসরাইল। রোববার এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ।

 ‘বিশ্ববাসী এবং হামাস নেতাদের অবশ্যই জেনে রাখা উচিত, যদি রমজানের আগে আমাদের পণবন্দী নাগরিকরা বাড়িতে না ফেরে, তাহলে রাফাহ অঞ্চলের সর্বত্র অভিযান চলবে’, বলেন গ্যান্টজ।ইসরাইল এমন একটি সময় এই অভিযানের হুঁশিয়ারি দিলো, যখন রাফাহতে হামলার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী বিরোধিতা বাড়ছে।চলতি বছরের ১০ মার্চ ইসলামের পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে।

গাজার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত রাফাহ শহর ফিলিস্তিনির কাছে এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেন না, যুদ্ধ শুরুর পর বেশিরভাগ উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনি নাগরিক মিশরের সীমান্ত ঘেঁষা এই শহরেই আশ্রয় নিয়েছেন।বর্তমানে সেখানে ১৫ লাখেরও বেশি বেসামরিক মানুষ অবস্থান করছে।

গ্যান্টজ আরো বলেন, ‘ইসরাইল একটি সমন্বিত পদ্ধতিতে অভিযানটি পরিচালনা করবে যাতে সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের সংখ্যা কমানো যায়। বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার সুবিধার্থে আমরা আমাদের আমেরিকান এবং মিশরীয় অংশীদারদের সাথে আলোচনা করবো।’কয়েকদিন আগে, রাফাহ শহরে বিমান হামলা চালিয়েছিল ইসরাইল। হামলার পর জাতিসঙ্ঘের জনস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল যে- সেখানকার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে যে- বিমান হামলার পরের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে তারা রাফাহ শহরের উত্তরে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে সেখানে ঢোকার অনুমতি দেয়া হয়নি।ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের গোয়েন্দা তথ্য ইঙ্গিত করছে যে- হামাস ওই হাসপাতালেই পণবন্দীদের আটকে রেখেছে।নাসের হাসপাতালে নিজেদের অভিযানকে ‘সুনির্দিষ্ট এবং সীমিত’ হিসাবে বর্ণনা করেছে আইডিএফ।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরাইলে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ১২ শ’ মানুষকে মেরে ফেলা হয় এবং ২৫৩ জনকে পণবন্দী করা হয়।এ ঘটনার কয়েক দিন পর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরাইল। দেশটির শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নিয়ে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে।অভিযান শুরু পর বিভিন্ন সময় শতাধিক জিম্মিকে ছেড়ে দেয়া হলেও হামাসের হাতে এখনো প্রায় ১৩০ জন পণবন্দী রয়েছে বলে মনে করে ইসরাইল।

এদিকে, গ্যান্টজের বক্তব্যের পর ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।এর ফলে উদ্বাস্তুরা সীমান্ত পেরিয়ে গণহারে মিশরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।ইসরাইল-গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই রাফাহ ক্রসিং দিয়ে উদ্বাস্তুদের অনেকেই ইতোমধ্যে মিশরে আশ্রয় নিয়েছেন।এ ধরনের ঘটনা আগেও দেখা গেছে। তাই এটি ঠেকানোর জন্য মিশর তাদের সীমান্তে একটি বড় প্রাচীর নির্মাণের চিন্তা করছে বলেও জানা যাচ্ছে।

রমজান শুরু হতে আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি। রাফাহ থেকে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে যে- ইতোমধ্যেই সেখানকার উদ্বাস্তুরা পশ্চিম উপকূলের দিকে সরে যেতে শুরু করেছে।তবে উদ্বাস্তুদের বেশিরভাগ অংশ এখনো বুঝতে পারছে না যে- তারা ঠিক কোথায় আশ্রয় নেবেন। ফলে তারা এখনো অপেক্ষা করছেন এবং পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন।

আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি বলেছেন যে- হামাসকে নির্মূল করতে তারা রাফাহ শহরে স্থল অভিযান চালাবেন।এর আগে, মিশর এবং অন্যান্য কিছু আরব দেশ বারবার সতর্ক করেছে যে- রাফাহ শহরে ইসরাইলি হামলা অনেক ফিলিস্তিনিকে মিশরে ঠেলে দেয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে যা অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন তারা।

আন্তর্জাতিকভাবেও ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যে- তারা যেন এই ধরনের হামলা থেকে বিরত থাকে।কারণ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুরা সেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বসবাস করছে।গত ৭ অক্টোবর থেকে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের ধারাবাহিক সামরিক অভিযানে গাজা উপত্যকার অনেকাংশ এখন রীতিমত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৮ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।এছাড়া ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।আর গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১২৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২০৫ জন আহত হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

রাফাহ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
রাফাহ- মিশরের সিনাই মরুভূমি সংলগ্ন একটি সীমান্ত পথ যেটি গাজার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। গাজা থেকে বের হবার আরও দুটি সীমান্তপথ রয়েছে, যেগুলো পুরোপুরি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে এবং দুটোই এখন বন্ধ।ফলে মিশরের এই সীমান্ত পথটিই এখন গাজার উদ্বাস্তুদের একমাত্র ভরসা। তবে ইসরাইল-গাজা যুদ্ধ শুরু হবার পর সীমান্তটি বন্ধ করে দিয়েছে মিশর।

গত ৭ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলের ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরাইলে আক্রমণ করে হামাস। এ ঘটনার পর পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সীমান্তটি বন্ধ ঘোষণা করে ইসরাইল।ফলে রাফাহ সীমান্তটিই এখন বেসামরিক নাগরিকদের জন্য গাজা ত্যাগ করার একমাত্র স্থলপথ। গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রেও রাফাহ এখন গুরুত্বপূর্ণ।

ফিলিস্তিনিরা ইচ্ছা করলেই রাফাহ সীমান্ত পার হতে পারেন না। এজন্য তাদেরকে দুই থেকে চার সপ্তাহ আগে স্থানীয় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়, যেটি ফিলিস্তিন বা মিশর সরকার যেকোনো অজুহাতে প্রত্যাখ্যান করে দিতে পারে।জাতিসঙ্ঘের হিসেবে, ২০২৩ সালের অগাস্টে ১৯ হাজার ৬০৮ জনকে ফিলিস্তিনি নাগরিককে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে মিশরে ঢোকার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর প্রবেশের অনুমতি চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন ৩১৪ জন।
সূত্র : বিবিসি