কক্সবাজার সৈকতে ভেসে এলো ২৪ মৃত কচ্ছপ

কক্সবাজার সৈকতে ভেসে এলো ২৪ মৃত কচ্ছপ

ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে একদিনে ভেসে এসেছে ২৪ মৃত কচ্ছপ। শুক্রবার কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের সোনারপাড়া থেকে টেকনাফ সৈকত ও সোনাদিয়া উপকূলে কচ্ছপগুলো ভেসে আসে।

সমুদ্র গবেষণা ইনিস্টিউট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ সংখ্যা বাড়তে পারে। সন্ধ্যা হওয়ায় অনুসন্ধান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এত কচ্ছপ মারা যাওয়ার পেছনে কারণ অনুসন্ধান করতে সমুদ্র পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

কচ্ছপগুলো অলিভ রিডলি প্রজাতির। এসব কচ্ছপের পেটেও ডিম পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) বিজ্ঞানীরা শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরেজমিন পরিদর্শন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

গত বুধ ও  বৃহস্পতিবার একই সমুদ্র উপকূলে আরো ১৫টি মৃত স্ত্রী কচ্ছপ ভেসে আসে। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৮৩টি সামুদ্রিক মৃত স্ত্রী কচ্ছপ ভেসে আসার তথ্য জানিয়েছেন বোরির বিজ্ঞানীরা। 

সব কচ্ছপই অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের প্রজাতি বলে জানিয়েছেন বোরির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম। তিনি জানান, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রজনন মৌসুমে গভীর সাগর পারি দিয়ে অলিভ রিডলি ডিম পাড়তে আসে। এ সময় তারা প্রজনন ক্ষেত্রে আসার পথে জালে আটকা পড়ে বা অন্য কোনোভাবে আঘাত পেয়ে মারা পড়ছে। উদ্ধার করা অধিকাংশ কচ্ছপের শরীর ছিল জাল ও রশি প্যাঁচানো। সব মৃত কচ্ছপ পুঁতে ফেলা হয়েছে। 

১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়ে তরিকুল ইসলাম বলেন, এর আগে স্তন্যপায়ী প্রাণী পরপইস ও ডলফিনের মৃতদেহ ভেসে এসেছে। এভাবে মৃত কচ্ছপ ভেসে আসার বিষয়টি উদ্বেগের ও হতাশার। দু-এক দিনের মধ্যে গভীর সাগরে ঘুরেও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি। 

তরিকুল ইসলাম জানান, এই মৌসুমে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭৬টি অলিভ রিডলি স্ত্রী কচ্ছপ থেকে ৯ হাজার ১০৭টি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ডিম সৈকতের প্রাকৃতিক হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে এক সপ্তাহ ধরে নতুন করে কোনো কচ্ছপ ডিম দেয়নি।

এ বিষয়ে বোরির মহাপরিচালক  ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, ভেসে আসা সামুদ্রিক প্রাণীর মৃতদেহের নমুনা সংগ্রহ করে কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এসব প্রাণীর বিচরণ ও বাসস্থানে কোনো বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয়  কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সারওয়ার আলম বলেন, বোরির বিজ্ঞানী ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে, জালে আটকা পড়ে অধিকাংশ কচ্ছপ মারা পড়ছে। এ বিষয়ে খোঁজ পেলেই ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে ব্যস্ত থাকা একাধিক সমুদ্র গবেষণা ইনিস্টিউটের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ধরণের সামুদ্রিক কচ্ছপ মারা যাওয়ার দৃশ্য আগে কখনো ঘটেনি। তাই পরিস্থিতি দেখে তারাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের ছেঁড়া জাল ও রশি যেন সাগরে ফেলে না আসা হয়; এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান।