রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষার ঢাল

রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষার ঢাল

ফাইল ছবি

মুমিনের আসল সফলতা হলো- জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কেবলমাত্র কেয়ামতের দিনই তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হবে। অতঃপর যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছু নয়। (সুরা আলে ইমরান: ১৮৫)

রোজা মানুষের গুনাহকে ধুয়েমুছে দেয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (বুখারি: ১৯০১) 

জাহান্নাম পরকালীন শাস্তির প্রধান জায়গা। অপরাধীর আবাসস্থল। সুস্থ, বিবেকবান মানুষ দৃঢ়ভাবে প্রার্থনা করে জাহান্নাম থেকে মুক্তির। রোজা মানুষকে সেই নিকৃষ্ট জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে রাখে। জাহান্নামের সম্মুখে ঢাল হয়ে প্রতিরোধ গড়ে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যুদ্ধের মাঠে ঢাল যেমন তোমাদের রক্ষাকারী, সিয়ামও তদ্রুপ জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল।’ (ইবনে মাজাহ: ১৬৩৯; বায়হাকি: ৪/২১০)

অপর একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিন রোজা রাখে, আল্লাহ তার বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে তার মুখমণ্ডলকে ৭০ বছরের দূরত্বে রাখেন। (ইবনে মাজাহ: ১৭১৮)

মহিমান্বিত মাস রমজান শুরুর আর কয়েকদিন বাকি। এই মাসে গুনাহমুক্ত হয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুযোগ হাতছাড়া করা মোটেও উচিত হবে না। রমজানে দান-সদকা করেও জাহান্নাম থেকে বাঁচার সুযোগ রয়েছে। অন্য সময়েও দান-সদকার সওয়াব কম নয়। তবে মহিমান্বিত মাস রমজানে দান-সদকার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। রাসুলুল্লাহ (স.) রমজানে অনেক বেশি দান করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমজানে তার দানশীলতা (অন্য সময় থেকে) অধিকতর বৃদ্ধি পেত..।’ (বুখারি: ০৬; মুসলিম: ২৩০৮; মুসনাদে আহমদ: ২৬১৬)

দান-সদকার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আদি ইবনে হাতিম (রা.) বলেন, নবী (স.) বলেন, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। এরপর তিনি পিঠ ফেরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আবার বলেন, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। এরপর তিনি পিঠ ফেরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তিনবার এরূপ করলেন। এমনকি আমরা ভাবছিলাম যে তিনি বুঝি জাহান্নাম সরাসরি দেখছেন। তিনি আবার বলেন, তোমরা এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। আর যদি কেউ সেটাও না পাও তাহলে উত্তম কথার দ্বারা হলেও (আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করো)। (বুখারি: ৬৫৪০)

রমজানে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমেও জাহান্নাম থেকে মুক্তির আশ্রয় খুঁজে নেবেন মুসলমানরা। কেননা কোরআন তার পাঠকারীর জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। সহিহ মুসলিমের আবু উমামা আল বাহিলি (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, নবীজি (স.) বলেন, ‘তোমরা কোরআন পড়ো, কেননা তেলাওয়াতকারীদের জন্য কোরআন সুপারিশকারী হিসেবে আসবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৮০৪) সহিহ ইবনে হিব্বানে এসেছে, ‘কোরআন এমন সুপারিশকারী যার সুপারিশ কবুল করা হবে। যে ব্যক্তি কোরআনকে পথপ্রদর্শক বানাবে কোরআন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। যে ব্যক্তি কোরআনকে পশ্চাতে ফেলে রাখবে কোরআন তাকে জাহান্নামে পাঠাবে।’ (ইবনে হিব্বান: ১২৪)

নবীজি (স.) রমজানে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতেন। জিব্রাইল (আ.) নবীজির সঙ্গী হতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, জিবরাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং ফজর অবধি তার সাথে অবস্থান করতেন। (বুখারি: ১৯০২) হাদিসে আরও এসেছে- রাসুলুল্লাহ (স.) প্রিয়কন্যা ফাতেমাকে (রা.) গোপনে জানালেন যে, জিব্রাইল প্রতি বছর (রমজানে) আমাকে একবার কোরআন শোনাতেন এবং শুনতেন, এ বছর তিনি দুবার আমাকে শুনিয়েছেন-শুনেছেন। একে আমি আমার সময় সমাগত হওয়ার ইঙ্গিত বলে মনে করি। (বুখারি: ৩৬২৪)

রমজানে আরও কিছু আমল বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। যেমন- রোজাদারকে ইফতার করানো, রাত জেগে ইবাদত করা, সামর্থ্য থাকলে ওমরা করা, ইতেকাফ করা ইত্যাদি।

রমজানের ব্যাপারে যারা গাফেল তারা ক্ষতিগ্রস্ত, বঞ্চিত ও হতভাগা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যার সামনে আমার নাম উল্লেখ করা হলো আর সে আমার ওপর দরুদ পড়ল না এবং ওই ব্যক্তির ধ্বংস হোক যে তার মা-বাবাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। আর ওই ব্যক্তির ধ্বংস হোক যে রমজান মাস পেল অথচ তার গুনাহ মাফ করা হলো না। (মুসনাদে বাজ্জার: ৮৪৬৫)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানকে এমনভাবে কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন, যাতে গুনাহমুক্ত হওয়া যায়, জাহান্নাম থেকে মুক্ত হওয়া যায়। আমিন।