নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার সহজ উপায়

নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার সহজ উপায়

সংগৃহীত

নামাজ (ফারসি: نماز‎‎) বা সালাত (আরবি: صلاة‎‎) ইসলাম ধর্মের ৫টি রোকনের মধ্যে দ্বিতীয় রোকন। প্রাপ্তবয়স্ক ও বুদ্ধি-জ্ঞান সম্পন্ন প্রত্যেক নারী-পুরুষ নির্বিশেষে, প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ বা অবশ্যকরণীয় একটি ধর্মীয় কাজ।

আর তাই পরিপূর্ণভাবে নামাজ আদায়ের জন্য একাগ্রতা খুবই জরুরি। কিন্তু বহু নামাজি এ বিষয়ে উদাসীন! এর প্রতিকার কী?

ইমাম গাজালি (রহ.) তার বিখ্যাত ‘ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন’ গ্রন্থে নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি ৬টি বিষয়ের কথা বর্ণনা করেন, যা না থাকলে নামাজে মনোযোগী হওয়া যায় না।

চলুন তাহলে জেনে নিই, নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার সহজ উপায়গুলো সম্পর্কে।

> নামাজে ‘হুজুরে দিল’ বা একাগ্র থাকা; এটি নামাজের প্রাণ। এমনভাবে নামাজ পড়তে হবে যেন আল্লাহ আমাকে দেখছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো এমনভাবে যেন তাকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন’। (বুখারি, হাদিস: ৫০; মুসলিম, হাদিস: ৮)

নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই কল্পনা ধরে রাখার অনুশীলন করুন যে ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন’। এভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে নামাজ শেষ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে সুন্দরভাবে ওজু করে, অতঃপর মন ও শরীর একত্র করে একাগ্রতার সঙ্গে ২ রাকাত নামাজ আদায় করে (অন্য বর্ণনায় এসেছে যে নামাজে ওয়াসওয়াসা স্থান পায় না), তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় (অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়)’। (নাসাঈ, হাদিস: ১৫১; বুখারি, হাদিস: ১৯৩৪)

> নামাজে যা কিছু পাঠ করা হয়, তা বিশুদ্ধ উচ্চারণে পড়ার চেষ্টা করুন। এটি অন্তরের উপস্থিতিকে আরো দৃঢ় করে। অন্তত, সূরা ফাতিহা ও তাসবিহগুলোর অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কোরআন তেলাওয়াত করো’। (সূরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ৪)

রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতিটি সূরা তারতিলসহকারে তেলাওয়াত করতেন। (মুসলিম, হাদিস: ৭৩৩, তিরমিজি, হাদিস: ৩৭৩)

> নামাজে আল্লাহর প্রতি ‘তাজিম’ বা ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুন। কেননা আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও বিনীতভাবে’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৩৮)

কাজেই ধীরস্থিরতা অবলম্বন করুন। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিকৃষ্টতম চোর হলো সেই ব্যক্তি, যে নামাজে চুরি করে’। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! নামাজে কীভাবে চুরি করে? তিনি বলেন, ‘যে রুকু-সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করে না’।  (মুসনাদ আহমাদ, মিশকাত, হাদিস: ৮৮৫)

> নামাজে  দাঁড়িয়ে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করুন। ভাবুন, এই নামাজই হয়তো বা আপনার জীবনের শেষ নামাজ। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে জনৈক ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত উপদেশ কামনা করলে তিনি তাকে বলেন, ‘যখন তুমি নামাজে দণ্ডায়মান হবে তখন এমনভাবে নামাজ আদায় করো, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ নামাজ’। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত, হাদিস: ৫২২৬)

> নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কল্যাণ আশা করুন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ৪৫)

এই বিশ্বাস রাখুন, আল্লাহ আমার প্রতিটি প্রার্থনায় সাড়া দিচ্ছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ নামাজে দাঁড়ালে সে মূলত তার প্রভুর সঙ্গে কথোপকথন করে। তাই সে যেন দেখে, কীভাবে সে কথোপকথন করছে’। (মুসতাদরাক হাকেম, সহিহুল জামে হাদিস: ১৫৩৮)

> নামাজে নিজের গুনাহর কথা চিন্তা করে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার কথা ভেবে নিজের মাঝে ‘হায়া’ বা লজ্জাশরম নিয়ে আসুন। দণ্ডায়মান অবস্থায় একজন অপরাধীর মতো মস্তক অবনত রেখে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানের দিকে নিবদ্ধ রাখুন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) (দাঁড়ানো অবস্থায়) সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখতেন। (তাফসিরে তবারি : ৯/১৯৭)

এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের সময় হলে সুন্দরভাবে ওজু করে এবং একাগ্রতার সঙ্গে সুন্দরভাবে রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করে, তার এ নামাজ আগের সব গুনাহর কাফফারা হয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে কোনো কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়। আর এ সুযোগ তার সারা জীবনের জন্য’। (মুসলিম, হাদিস: ২২৮)

প্রিয় ভাই ও বোনেরা উপরের বিষয়গুলো অনুসরণ করলে নামাজে মনোযোগ তৈরি হবে, ইনশাআল্লাহ!

ইয়া আল্লাহ! সব মুসলিম উম্মাহকে সহি-শুদ্ধ ভাবে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।