সুস্থ জীবনের জন্য ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি

সুস্থ জীবনের জন্য ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি

নিজেকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করতেই হবে।

বিশ্বের উন্নত দেশের মহাপণ্ডিতদের হিসাব-নিকাশ বদলে দিয়েছে ভাইরাস কোভিড-১৯। কয়েক বছর আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) বিশেষজ্ঞরা শপথ নিয়েছিলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ‘হেলথ ফর অল’ মিশন সফল করার। তবে এখন সব বিশেষজ্ঞদের ভাবনা-চিন্তা বদলে গেছে। সবার একটাই লক্ষ্য কোভিড-১৯কে জব্দ করা।

একটা ব্যাপারে সবাই একমত যে, সামগ্রিকভাবে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অসুখ-বিসুখকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। ভালো থাকার অন্যতম শর্ত, শরীর ও মনের সুস্থতা, বললেন ভারতের চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের (সিএনসিআই) মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট শঙ্কর সেনগুপ্ত।

প্রাত্যহিক জীবনে কিছু ভালো অভ্যেস গড়ে তুলতে পারলে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার, হার্টের অসুখের মতো নানান লাইফস্টাইল ডিজিজ প্রতিরোধ করা যায়, একই সাথে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে সুবিধা হয় বলে তিনি জানান।

মানুষের একটা বড় সমস্যা ওভার ওয়েট। এর মূলে আছে বদলে যাওয়া খ্যাদ্যাভ্যাস আর কায়িক পরিশ্রমের অভাব, বললেন ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার। ইদানীং আচমকা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঘটনা ঘটছে।
তার মতে, কোনো কিছুই আচমকা আসে না। কিছু কিছু সিগনাল অবশ্যই দেয়, আমরা অবজ্ঞা করি, তাই আচমকা বিপদে পড়তে হয়। জীবনে খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসে কিছুটা রদবদল করে আর সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন গা ঘামিয়ে দ্রুত পায়ে হাঁটাচলা করে ব্লাড সুগার, প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখার সাথে সাথে ও আচমকা হার্টঅ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

যাদের প্রেসার বা রক্তে চিনির মাত্রা ঊর্ধ্বমুখী, তাদের অবশ্যই নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি ওজন ঠিক রাখা জরুরি। সুদীর্ঘ লকডাউনের ফলে গৃহবন্দী থাকায় অনেকেরই ওজন বেড়ে গিয়েছে। নিজেকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করতেই হবে। বাড়তি ওজন ক্যানসার, হার্টঅ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক, ডায়াবেটিসসহ নানান রোগ ডেকে আনে। এমনকি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে ওবিসদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা স্বাভাবিক ওজনের মানুষদের তুলনায় অনেক বেশি হয়। সিগারেটসহ যেকোনো তামাক ক্যানসার ও হার্টঅ্যাটাকের অন্যতম কারণ।

আচমকা হার্টঅ্যাটাক অথবা ব্রেন স্ট্রোকের জন্য রক্তের কোলস্টেরল অনেকাংশে দায়ী। বিভিন্ন নামে এই শত্রু আমাদের শরীরের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। এলডিএল, ভিএলডি, অ্যাপো বি, ট্রাইগ্লিসারাইড এসব নামের লাইপোপ্রোটিন অ্যাথেরোস্কে¬রোসিস অর্থাৎ রক্তবাহী শিরা ধমনীর মধ্যে চর্বির প্রলেপ পড়ার গতি বাড়িয়ে দিয়ে হার্ট, ব্রেনসহ শরীরের সব ক’টি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে অকেজো করে দেয়।

সাম্প্রতিক গবেষণায় এক নতুন ফ্যাটের কথা জানা গেছে। এক মেগা ট্রায়ালের পর দেখা গেছে, আমাদের স্টেপল ফুড কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেলেই শরীরের বিশেষ এক এনজাইমের প্রভাবে তা লো ডেনসিটি কোলস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডে পরিণত হয়, বলেছেন ডায়েটিশিয়ান ইন্দ্রাণী দত্ত। এর থেকে ডায়াবেটিসের আর হার্টঅ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে। এর মানে অবশ্য এই নয় যে, কার্বোহাইড্রেটকে একেবারেই বাদ দিতে হবে। ভাত রুটি অল্প পরিমাণে খেয়ে পেট ভরাতে হবে সবজি, সালাদ, ফল আর বাদাম দিয়ে, বললেন ইন্দ্রাণী। আবার হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এইচডিএল আমাদের শরীরের বন্ধু। এটি আমাদের হার্টকে রক্ষা করে।

টাটকা ফল, সমুদ্রের মাছ, বাদাম, বিনস, অলিভ অয়েলসহ কিছু খাবার এইচডিএল বাড়াতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে এসব খাবার রাখতে বললেন তিনি। আবার যাদের ডায়াবেটিস বা হাই ব্লাড প্রেসার আছে, বাড়তি প্রোটিন তাদের কিডনির ওপর চাপ ফেলে। যা-ই খাবেন মাপসই, কিন্তু মাত্রা ছাড়াবেন না।

বিভিন্ন অসুখের বাড়বাড়ন্ত আটকে দিতে রোগের শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই নিজের ডাক্তারি নিজেরা করবেন না, ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ কিনে খেলে আচমকা বিপদে পড়তে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ওষুধ খাবেন।