বে-সরকারি ব্যাংকে সরকারের ঋণ বাড়ছে

বে-সরকারি ব্যাংকে সরকারের ঋণ বাড়ছে

ফাইল ছবি।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে প্রতিবছরই ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয় সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম দেড় মাসেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সরকার। এই ঋণের বড় অংশই নেওয়া হয়েছে জুলাই মাসে। তবে এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনও ঋণ নেয়নি সরকার। উল্টো আগের নেওয়া ঋণের প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এতে গত ১২ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। অর্থসূচক।

সাধারণত ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাত চাহিদানুযায়ী ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ এতে ব্যাংকের ঋণযোগ্য তহবিল সরকারের কাছে আটকে যায়। এ জন্য অর্থনীতিবিদরা বরাবরই সরকারকে ব্যাংক থেকে যতটা সম্ভব কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
 
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকিং খাত থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ব্যাংকের বাইরে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৪২২ কোটি টাকা। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেওয়া হয়নি। বরং আগের নেওয়া ঋণের দুই হাজার ৫৩৬ কোটি টাকার মতো শোধ করা হয়েছে। কিন্তু একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। জুলাই মাসের প্রথম ১৬ দিনেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকার নিট ঋণ নিয়েছে আট হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। আর জুলাই মাসের পুরো সময়ে নেয় ৯ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা।
 
গত অর্থবছরের শুরুর দিকেও সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল। জুলাই মাসের প্রথম ২৮ দিনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া হয়েছিল ১৬ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগের নেওয়া ঋণ শোধ দেখানো হয়েছিল দুই হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নিট ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। শুধু জুলাই নয়, গতবার পুরো অর্থবছরেই ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে অস্বাভাবিক ঋণ নিয়েছিল সরকার।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে গত অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। পরে তা বাড়িয়ে ৮৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকা করা হয়। তবে অর্থবছরের শেষে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়ায় প্রায় ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এটি মূল বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ৫২ শতাংশ বেশি ছিল। এক অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই ব্যাংক থেকে এত বেশি ঋণ নেয়নি সরকার। এর আগে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ ব্যাংকঋণ নেওয়ার রেকর্ড ছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরের সরকারের ব্যাংকঋণ ছিল ৩৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা।