পাবনায় ট্রুডোর জন্ম নিবন্ধনের ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন

এম মাহফুজ আলম, পাবনা: পাবনায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে ভুয়া জন্মসনদ তৈরির ঘটনায় মামলা হয়েছে। একইসঙ্গে এ ঘটনায় সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সচিবকে কারণ দর্শানোর  নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনাটি তদন্তে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধনকার্যক্রম।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাতে জেলা প্রশাসন এসব পদক্ষেপ নেয়। নিবন্ধন জালিয়াতিতে অভিযুক্ত আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে আমিনপুর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে ইউপি সদস্য ও ২ নম্বর প্যানেল ফাতেমা বেগম বাদি হয়ে মামলাটি করেছেন। আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি তদন্তে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।

 জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে ভুয়া জন্মসনদ তৈরির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনায় বিব্রত হয় জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার রাতেই স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক সাইফুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একইসঙ্গে কীভাবে জন্মসনদটি তৈরি হলো, কারণ জানতে চেয়ে আহম্মদপুর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রউফ মোল্লা ও সচিব আওলাদ হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধনকার্যক্রম।

ঈাবনা জেলা প্রশাসক মু.আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে  দেখছি। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী সময়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সম্প্রতি সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউপি থেকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর একটি জন্মসনদ তৈরি করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সার্ভারে জন্মসনদটি ছিল। বিষয়টি জানাজানির পর দুপুর থেকে সার্ভারে জন্মসনদটি আর পাওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া জন্মসনদের ছবিতে দেখা যায়, নিবন্ধিত ব্যক্তির নাম জাস্টিন ট্রুডো। জন্মস্থান পাবনা। জন্ম ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর। মায়ের নাম মার্গারেট ট্রুডো, মায়ের জাতীয়তা বাংলাদেশি। বাবার নাম পিয়েরে ট্রুডো, বাবার জাতীয়তাও বাংলাদেশি। ইউপির কম্পিউটার অপারেটর নিলয় হোসেন টাকার বিনিময়ে ভুয়া সনদটি তৈরি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এনিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর থেকে নিলয় পারভেজ পলাতক রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চলছে তুলকালাম।

জানা গেছে, জন্মনিবন্ধন নিয়ে সারা দেশেই সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। টাকা দিয়েও মাসের পর মাস সনদ পাচ্ছেন না। পেলেও ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মচারিদের গাফিলতিতে থাকছে নানা ভুল। এগুলো সংশোধনেও আরেক দফা ভোগান্তি হচ্ছে।

পাবনার সুজানগরের আহমদপুর ইউনিয়নে সম্প্রতি এমনই বড় ধরণের ত্রুটি ধরা পড়েছে। ইউনিয়ন থেকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়েছে। গণমাধ্যমের হাতে আসা ওই জন্মসনদে ট্রুডোর বাবা পিয়েরে ট্রুডো ও মায়ের নাম মার্গারেট ট্রুডোই লেখা এবং তারা দু’জনই বাংলাদেশি নাগরিক। ট্রুডোর জন্ম ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর, নিবন্ধন নম্বর ১৯৭১৭৬১৮৩১৭০৩৫৫০৯।