জাকাত যে কারণে ব্যক্তি মালিকানায় দেওয়া জরুরি

জাকাত যে কারণে ব্যক্তি মালিকানায় দেওয়া জরুরি

ফাইল ছবি

জাকাত ফরজ ইবাদত এবং ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন। ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হলো সালাত ও জাকাত। কোরআন মাজিদের বহু স্থানে নামাজের পরই জাকাতের আদেশ করা হয়েছে। মুমিনদের পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করি, তারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে, সৎকাজের আদেশ করে ও মন্দকাজে বাধা প্রদান করে।’ (সুরা হজ: ৪১)

জাকাত ফরজ হওয়া সম্পর্কে কোনো মতভেদ নেই। জাকাতের ফরজিয়তকে যে অস্বীকার করে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়।’ (ফাতহুল বারি: ৩/৩০৯)

জাকাত কেবলমাত্র ব্যক্তিকেই দেওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে সেসব ব্যক্তিদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই জাকাত ফকির, মিসকিন ও সেসব কর্মচারীর জন্য, যারা সদকা উসুলের কাজে নিয়োজিত এবং যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় (নওমুসলিম) তাদের জন্য। আর দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধ, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের (সাহায্যের) জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবা: ৬০)

লক্ষ্য করুন, জাকাত যাদের দিতে হবে তারা প্রত্যেকে ব্যক্তি। তাদের পরিচয় দিয়ে কোরআন মাজিদ বলছে, তারা হলো- ১. ফকির ২. মিসকিন ৩. আমিলিন তথা ইসলামি রাষ্ট্রে জাকাত উসুলের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ৪. মুআল্লাফা কুলুবুহুম তথা দুর্বল ঈমানওয়ালা কোনো নওমুসলিম, যার মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য ৫. রিকাব তথা গোলাম ৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি ৭.আল্লাহর রাস্তায় কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদকারী। কারো মতে, পাথেয়শূন্য হজযাত্রীও এর অন্তর্ভুক্ত। ৮. মুসাফির ব্যক্তি।

ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে না দিলে জাকাত আদায় হবে না। অনেকে বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে উকিল বানিয়ে জাকাত দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই জেনে হতে হবে- ওসব প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত খাতকে মালিক বানিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ১০০% বিশ্বস্ত কি না। অন্যথায় নিজের ফরজ জাকাতকে সন্দেহমূলক জায়গায় ছেড়ে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না।

মূলত দরিদ্র ব্যক্তিদের অভাব মোচনই জাকাতের উদ্দেশ্য। সমাজের দরিদ্র গোষ্ঠীর অভাব মোচন তখনই সম্ভব হবে, যদি ব্যক্তিকে সম্পদের মালিক বানিয়ে দেওয়া হয়। রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, হাসপাতাল-স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা, পানির কূপ, জলাধার খনন ইত্যাদি জনকল্যাণমূলক কাজ দ্বারা ধনি-দরিদ্র সব শ্রেণির মানুষের উপকার হয়, কিন্তু তা দরিদ্র শ্রেণির মালিকানাধীন সম্পদ নয়। তাই জাকাতের অর্থ এসব জনকল্যাণমুখী কাজে ব্যয় করার কোনো সুযোগ নেই।

হাদিস শরিফে জাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দিতে বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- ...أَنّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ ‘আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর জাকাত ফরজ করেছেন, যা তাদের ধনীদের থেকে গ্রহণ করা হবে অতঃপর তাদের গরিবদের তা দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি: ১৪৯৬)

নির্ধারিত আট খাতের বাইরে যেকোনো খাতে জাকাতের নিয়তে সমুদয় সম্পদ দিয়ে দিলেও জাকাত আদায় হবে না। আবু বকর (রা.) ওমর (রা.)-এর প্রতি ওসিয়তে বলেন- مَنْ أَدّى الزَّكَاةَ إلَى غَيْرِ أَهْلِهَا لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ زَكَاةٌ، وَلَوْ تَصَدَّقَ بِالدُّنْيَا جَمِيعِهَا ‘যে ব্যক্তি জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নয় এমন কাউকে জাকাত প্রদান করল তা গ্রহণযোগ্য হবে না; যদিও সে দুনিয়ার সকল সম্পদ দান করে দেয়। (আলমুহাল্লা বিল আসার, ইবনে হাজম: ৪/২৭৬, বর্ণনা ৭২১; মুসান্নাফে আব্দুর রাজজাক, বর্ণনা ৬৯৩৪)

মোটকথা, জাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত হলো- উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া, যাতে সে নিজের খুশিমতো তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। যদি জাকাতদাতা নিজের খুশিমতো দরিদ্র লোকটির কোনো প্রয়োজনে টাকাটি খরচ করে যেমন, তার ঘর সংস্কার করে দিল, টয়লেট স্থাপন করে দিল কিংবা পানি বা বিদ্যুতের ব্যবস্থা করল তাহলে জাকাত আদায় হবে না। (রদ্দুল মুহতার: ২/২৫৭)