ভারতের প্রবীণতম বিলিয়নিয়ার লক্ষ্মণ দাশ মিত্তাল

ভারতের প্রবীণতম বিলিয়নিয়ার লক্ষ্মণ দাশ মিত্তাল

ছবিঃ সংগৃহীত।

কর্মজীবন শুরু করেছিলেন জীবন বিমার এজেন্ট হিসেবে। কিন্তু স্বপ্ন ছিল ব্যবসা করার। তিলে তিলে জমানো টাকায় একসময় ব্যবসা শুরুও করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যদেবী মুখ তুলে চাননি। কিছুদিনের মধ্যেই দেউলিয়া হয়ে যান। তবে হাল ছাড়েননি। ৬০ বছর বয়সে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর আবারও ব্যবসায় নামেন। এবার আর হতাশ হতে হয়নি। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আজ ভারতের সবচেয়ে বয়স্ক বিলিয়নিয়ার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন লক্ষ্মণ দাশ মিত্তাল।

২০২৪ সালে ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার তালিকায় ভারতের প্রবীণতম ধনকুবেরের স্বীকৃতি পেয়েছেন ৯৩ বছর বয়সী এ ব্যবসায়ী। এর আগে এই আসনটি দখলে ছিল মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান কেশাব মাহিন্দ্রার। ২০২৩ সালর ১২ এপ্রিল ৯৯ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি। এরপরেই ভারতের সবচেয়ে বয়স্ক বিলিয়নিয়ার হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন লক্ষ্মণ দাশ মিত্তাল।

১৯৩১ সালে পঞ্জাবের হোশিয়ারপুরে জন্ম লক্ষ্মণ দাশের। সেখানেই স্কুল-কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর উর্দু ভাষায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন এবং সেসময় পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের ক্লাসে প্রথম হয়েছিলেন লক্ষণ দাশ মিত্তাল। পরে ইংরেজিতেও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন এবং এর জন্য স্বর্ণপদক অর্জন করেছিলেন তিনি।ফোর্বসের তথ্যমতে, লক্ষণ দাশ মিত্তালের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২৩ হাজার কোটি রুপি।

১৯৫৫ সালে কর্মজীবন শুরু করেন লক্ষণ দাশ। ভারতের বৃহত্তম বিমা সংস্থা এলআইসির এজেন্ট হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু চোখে স্বপ্ন ছিল ব্যবসা করার।চাকরিজীবনে মাসিক বেতনের একটি অংশ সঞ্চয় করতেন লক্ষ্মণ দাশ মিত্তাল। সেই টাকা দিয়েই ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেন তিনি।

হোশিয়ারপুরের স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে গম পেষার যন্ত্র তৈরি করতে শুরু করেন। তবে এই ব্যবসায় লাভের মুখ দেখতে পারেননি। বরং সব সঞ্চয় হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে যান তিনি।একসময় গাড়িনিমার্তা সংস্থা মারুতি উদ্যোগের (বর্তমান মারুতি সুজুকি) ডিলারশিপ পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হন।স্বপ্নভঙ্গ হয় লক্ষ্মণ দাশের। আবারও চাকরি করে টাকা জমাতে শুরু করেন তিনি।

৬০ বছর বয়সে চাকরি থেকে অবসর নেন লক্ষ্মণ দাশ। কিন্তু চুপচাপ বসে থাকার পাত্র নন তিনি। আবারও ভাগ্য পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন। এতদিন ধরে যে পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করেছিলেন, তা দিয়ে ফের ব্যবসা শুরু করেন।১৯৯৬ সালে চালু করেন ট্র্যাক্টর প্রস্তুতকারী সংস্থা সোনালিকা। এবার ভাগ্যদেবী মুখ তুলে চায় তার দিকে। বর্তমানে ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম ট্র্যাক্টর প্রস্তুতকারী সংস্থা সোনালিকা। ভারতজুড়ে পাঁচটি কারখানা রয়েছে তাদের, পণ্য রপ্তানি হয় ১২০টিরও বেশি দেশে।

ফোর্বসের তথ্যমতে, লক্ষণ দাশ মিত্তালের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২৩ হাজার কোটি রুপি।তবে এখন আর সোনালিকা ট্রাক্টরসের কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হন লক্ষণ দাশ। ব্যবসার দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন ছেলেদের হাতে। তার বড় ছেলে অমৃত সাগর সংস্থাটির ভাইস-চেয়ারম্যান এবং ছোট ছেলে দীপক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। লক্ষণ দাশের নাতি সুশান্ত এবং রমনও সোনালিকার সঙ্গে যুক্ত।