সাদাকাতুল ফিতর : সামর্থ্যানুযায়ী পরিমাণ

সাদাকাতুল ফিতর : সামর্থ্যানুযায়ী পরিমাণ

ফাইল ছবি

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দাদের ওপর যেসব দান ওয়াজিব করেছেন ‘সাদাকাতুল ফিতর’ তার অন্যতম। গুরুত্বের বিবেচনায় ইসলামী শরিয়তে জাকাতের পরই এর অবস্থান। সাদাকাতুল ফিতর শব্দদ্বয়ের মধ্যে ‘সাদাকা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, দান করা। আর ফিতর শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ভেঙে ফেলা, উন্মুক্তকরণ, ফাটল। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর সামর্থ্যবান মুসলিম কর্তৃক জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিদের নির্ধারিত খাদ্যদ্রব্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ অথবা সেসব খাদ্যের সমপরিমাণ মূল্য পরিশোধ করার বিধানই ইসলামী শরিয়তে ‘সাদাকাতুল ফিতর’ হিসেবে পরিচিত।

রাসূল সা:-এর অসংখ্য হাদিসের আলোচনায় সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশনা এসেছে। এ প্রসঙ্গে বুখারি শরিফের ১৫০৩ নং হাদিসে প্রখ্যাত সাহাবি ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক গোলাম, আজাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্তবয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের ওপর রাসূলুল্লাহ সা: সাদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক- এক ‘সা’ পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতে বের হওয়ার আগেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ কোন কোন খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা যাবে এ প্রসঙ্গে সহিহ বুখারির ১৫০৮ নং হাদিসে পাঁচটি খাদ্যদ্রব্যকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: বলেন, আমরা সাদকাতুল ফিতর বাবদ এক ‘সা’ খাদ্য গম অথবা এক ‘সা’ যব অথবা এক ‘সা’ খেজুর অথবা এক ‘সা’ পনির কিংবা এক ‘সা’ কিশমিশ প্রদান করতাম...।

(উল্লেখ্য, এক ‘সা’ সমপরিমাণ তিন কেজি ৩০০ গ্রাম) অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে, বাকি খাদ্যদ্রব্যগুলোর পরিমাণ এক ‘সা’ নির্ধারণ করা হলেও গম অথবা আটার পরিমাণ অর্ধ ‘সা’ তথা এক কেজি ৬৫০ গ্রাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তৎকালীন আরবে গম ছিল আমদানি করা পণ্য। অন্যান্য নির্ধারিত দ্রব্যের তুলনায় এর দাম বেশি ছিল, তাই অর্ধ ‘সা’ পরিমাণ গম দিয়েই ফিতরা আদায় হয়ে যেত। একই রকমভাবে খেজুর অনেক সহজলভ্য ও সুলভ মূল্যের হওয়ায় সাহাবিদের মধ্যে এক ‘সা’ পরিমাণ খেজুর দিয়ে ফিতরা আদায়ের প্রচলন বেশি ছিল।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সব শ্রেণীর মানুষের সুবিধার্থে আটা বা গমের মূল্যকে হিসাব করে ফিতরার সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন থাকে, সমাজের এলিট শ্রেণী-কোটিপতিরাও কি এক কেজি ৬৫০ গ্রাম গম বা আটার মূল্যে ফিতরা আদায় করবে, এ রকম যদি করে তাহলেও ধনীদের ওয়াজিব ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়ের ক্ষেত্রে সর্বোৎকৃষ্ট বস্তু বাছাই করা উচিত। যাদের পক্ষে দেশের নামী-দামি ব্র্যান্ড থেকে হাজার হাজার টাকার ঈদ শপিং করা সম্ভব হয়, পুরো রমজানজুড়ে ইফতার মাহফিলের নামে আড়ম্বরপূর্ণ খাবারের আয়োজন করা সম্ভব হয় তারা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এই ওয়াজিব সাদাকা আদায়ের সময় কেন সর্বনিম্ন মূল্যটি বাছাই করবেন! সামর্থ্যবানরা যদি ফিতরার সওয়াবের ক্ষেত্রে লেটার মার্ক প্রত্যাশী হোন, তাহলে আটা বা গম ছাড়াও অন্যান্য নির্দিষ্ট পণ্য যব, কিশমিশ, পনির, খেজুর দিয়ে ফিতরা আদায় করা ভালো। যদি এ রকম হয় যে পরিবারের সবার পক্ষ থেকে বেশি মূল্যের ফিতরা আদায় করার সামর্থ্য নেই, তাহলে দুই-একজনের পক্ষ থেকে উচ্চ মূল্যের পণ্য দিয়ে এবং বাকিদের পক্ষ থেকে আটা বা গমের মূল্য দিয়েও ফিতরা আদায় করা যাবে।

সর্বোপরি, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের সর্বনিম্ন ফিতরা আদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমাদের বের হয়ে আসা উচিত। সম্পদের প্রাচুর্যতার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ধনীদের উচিত আল্লাহর রাস্তায় সাধ্যনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যয় করা।

লেখক :খাদিজা বিনতে জহির সুমাইয়া

শিক্ষার্থী