মাদক না পেয়েও ডিএনসির লাঠিপেটা, হাসপাতালে ৩ যুবক

মাদক না পেয়েও ডিএনসির লাঠিপেটা, হাসপাতালে ৩ যুবক

প্রতীকী ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় রানীহাটি হলমোড়ে পথচারী ৩ যুবকের দেহ তল্লাশি করে ডিএনসি (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর) জেলা শাখার সদস্যরা। এ সময় দেহ তল্লাশির বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেও কোনো প্রকার মাদকদ্রব্য না পেয়ে জনসম্মুখে বেধড়ক মারধর, ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ডিএনসি’র সদস্যদের বিরুদ্ধে।

রবিবার (৭ এপ্রিল) এ ঘটনায় শিবগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী যুবকরা। আহত তিন যুবক হলেন- জেলার সদর উপজেলার রানিহাটি ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুরহাট গ্রামের সুধীর চন্দ্র রবি দাসের ছেলে শ্যামল চন্দ্র রবি দাস, একই গ্রামের মসিদুল হকের ছেলে তহরুল ইসলাম এবং বহরম হঠাৎপাড়া গ্রামের মোয়াজ্জেম আলীর ছেলে নাসির উদ্দিন বাবু। তারা সকলেই ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

ডিএনসি‘র মারধরকারী সদস্যরা হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস হোসেন তালুকদার, উপ-পরিদর্শক মো. আসাদুর রহমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. মামুনুর রশীদসহ আরও ১০-১১ জন সদস্য।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী যুবক, স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়ক দিয়ে একটি মোটরসাইকেল করে শিবগঞ্জ যাচ্ছিলেন তিন যুবক। এ সময় রানিহাটি হলমোড় এলাকায় পৌঁছালে তাদের গাড়ির গতিরোধ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ১০-১১ সদস্যের একটি দল। পরে সড়কের পাশেই তাদের দেহ তল্লাশি শুরু করেন তারা। এ সময় তাদের কাছে কিছুই পায়নি আভিযানিক দলের সদস্যরা। মাদকদ্রব্য না পেলেও একটি ভালো মোটরসাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভাঙচুর ও সিট ছিঁড়ে ফেলেন তারা।

ভুক্তভোগী শ্যামল অভিযোগ করে বলেন, আমরা শিবগঞ্জ যাচ্ছিলাম একটি ব্যক্তিগত কাজে। হঠাৎ করেই রানিহাটি হলমোড়ে পৌঁছালে মোটরসাইকেলের পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে আমাদের আটক করা হয়। এ সময় আমাকেসহ আরও দুইজনকে বেধড়ক পিটিয়েছে। আমার গলা ও মাজায় লাঠি দিয়ে মেরেছে। এমনকি ডিএনসির সদস্যরা গোপন অঙ্গে সজোরে আঘাত করায় মারাত্মক জখম ও আহত হয়েছি।

আরেক আহত যুবক তহরুল ইসলাম জানান, আমরা মাদক নেওয়া তো দূরের কথা, মাদকের আশেপাশেও থাকি না কখনো। কিন্তু জোরপূর্বক আমাদের কাছে মাদক রয়েছে বলে স্বীকার করিয়ে নেয়ার জন্য মারধর করেন তারা। কিন্তু আমাদের ভাগ্য সহায় ছিল বলেই আজকে তাদের মিথ্যা মামলা থেকে রক্ষা পেয়েছি। কারণ বাজারের মধ্যে আমাদের মারধর করা দেখে কয়েকশো লোকের সমাগম হয় সেখানে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় দোকানদার জনি, জিয়াউর রহমান ও অহিদ জানান, ডিএনসির সদস্যরা তাদেরকে জোরপূর্বক দেহ ও মোটরসাইকেল তল্লাশি করে। কিছু না পেলেও বেধড়ক মারধর ও হেনস্তা করে। তাদের কাছে মাদক না পেয়েও এমন খারাপ ব্যবহার করেছে মাদকদ্রব্যের লোকজন, ভাবা যায় না। রাস্তার পাশে সিমেন্টের দোকানে নিয়ে গিয়েও শ্যামলকে মারধর করেন তারা।

এ বিষয়ে কথা বলতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আনিছুর রহমান খাঁন ও পরিদর্শক মো. ইলিয়াস হোসেন তালুকদারের সাথে কথা বলতে অফিসে গেলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোন রিসিভ করেনি।

তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক মো. আসাদুর রহমান জানান, নিয়মিত অভিযানের সময় তাদেরকে তল্লাশি করা হয়। এ সময় তাদেরকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।