যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে বাড়ছে রোবটের ব্যবহার

যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে বাড়ছে রোবটের ব্যবহার

ছবি: সংগৃহীত

বিজ্ঞান কল্পকাহিনির অনেক কিছুই এখন বাস্তবতা। যুদ্ধাস্ত্রের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। ইউক্রেন যুদ্ধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসমৃদ্ধ অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। রোবট বন্ধু হতে পারে, বিনোদন দিতে পারে কিংবা কিছু কাজেও সহায়কও হতে পারে। আরেক ধরনের রোবটও আছে, যাকে বলে কিলার রোবট। এখন পর্যন্ত হলিউডের মুভিতে আমরা এমন রোবট দেখেছি। তারা সব ধ্বংস করে, আবেগহীনভাবে হত্যা করে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধ্যাপক টোবি ওয়ালশ বলেন, কিলার রোবট শুনলে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মুভিতে দেখা রোবটের কথা মনে হয়। কিন্তু সমস্যা হলো, এগুলো এখন বাস্তবে হচ্ছে। এগুলো টার্মিনেটর রোবট নয়। এগুলো একধরনের ড্রোন যার ব্যবহার আমরা ইউক্রেন যুদ্ধে দেখতে পাচ্ছি। এসব ড্রোনকে মানুষের চেয়ে কম্পিউটার দিয়ে নিয়ন্ত্রণের পরিমাণ বাড়ছে।

ট্যাঙ্ক, পরিখায় সৈন্য— ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার শুরুতে আমরা এমনটা দেখেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে দুই পক্ষই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু করে। যেমন বায়রাক্তার ড্রোন। একেকটির দাম ১১ মিলিয়ন ইউরোর বেশি।

জার্মান প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. গারি শাল বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার কাছে থাকা অনেক অস্ত্রকে পরবর্তীতে এআই-সমৃদ্ধ করা হয়েছে। ফলে যুদ্ধে পরিবর্তন এসেছে। যেমন রাশিয়াকে আমরা এআই-সমৃদ্ধ গ্লাইড বোমা ব্যবহার করতে দেখেছি। আর ইউক্রেনের এআই-সমৃদ্ধ অস্ত্রের মধ্যে আছে ড্রোন। যুদ্ধের প্রথম কয়েক মাসে ইউক্রেন যে কার্যকর ও সফল ছিল, তার কারণ ছিল তারা পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিল।

সামরিক সংঘাত মানে হলো, তথ্য সংগ্রহ ও সেগুলোর অর্থ বুঝতে পারা। কত দ্রুত সেটা করা যাচ্ছে তাও গুরুত্বপূর্ণ। এআই সেটা করতে পারে ও সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

মিউনিখের বুন্ডেসভেয়ার ইউনিভার্সিটির আক্সেল শুলটে বলেন, এখন অনেক কিছু স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাওয়ায় মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে শ্রম বিভাজন করতে গিয়ে আমাদের সতর্কতার সঙ্গে ভাবতে হবে। মানুষের উদ্দেশ্য আছে, যন্ত্রের নেই। আমরা এসব যন্ত্রকে, এসব স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাকে, হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করি।

কিন্তু ড্রোন কি হিউম্যানয়েড কিলার রোবট বা টার্মিনেটর হতে পারে? আক্সেল শুলটে বলেন, টার্মিনেটর? না সেটা সম্ভব না। আমরা এখনও প্রযুক্তিগতভাবে অতদূর এগোইনি। হ্যাঁ, ইউটিউবে আমরা বোস্টন ডাইনামিক্সের দারুণ সব ভিডিও দেখি বটে। আমরা দেখি, গতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এসব যন্ত্রের দক্ষতা বেশ ভালো। তারা ডিগবাজি বা সেরকম কিছু দিতে পারে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, সেগুলো বিপজ্জনক কিলার রোবট হয়ে গেছে।

২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় দুই ট্রিলিয়ন ইউরো ছাড়িয়ে গেছে— যা একটি রেকর্ড। ৭৫০ বিলিয়ন ইউরো খরচ করে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ রয়েছে। তবে চীনও কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছে। ২০২২ সালে রাশিয়া তার সামরিক বাজেট নয় শতাংশ বাড়িয়েছিল।

গারি শাল বলেন, যদি আপনার এমন বাহিনী থাকে যেটা এআই ব্যবহার করে, তাহলে অন্য যারা এআই ব্যবহার করে না, তাদের চেয়ে আপনার কৌশল ভিন্ন হবে। এটা শুধু যন্ত্রের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঢোকানোর বিষয় নয়। এটা পুরো ব্যবস্থা পরিবর্তনের বিষয়: প্রশিক্ষণ, কৌশল, সংগঠন।

যেসব কোম্পানি শান্তিপূর্ণ প্রয়োজনে রোবট বানাচ্ছে তারাই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র তৈরিতে কাজ করছে। এজন্য সরকার থেকে টাকা পাচ্ছে। প্রায় ৬০টি দেশে এমন কাজ হচ্ছে।