মাকামে ইবরাহিমে নামাজ পড়বেন যে কারণে

মাকামে ইবরাহিমে নামাজ পড়বেন যে কারণে

ছবি: সংগৃহীত

বরকতময় এক পাথরের নাম মাকামে ইবরাহিম। যা কাবা শরিফের পূর্বদিকের তাওয়াফের স্থানে ক্রিস্টালের বাক্সে লোহার বেষ্টনী দিয়ে রাখা আছে। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সমান প্রায় এক হাত।

কাবাঘর নির্মাণকালে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য পাথরটি ব্যবহৃত হত। তাফসিরে আছে, প্রয়োজন অনুযায়ী ওঠানামা করত পাথরটি। এর মাঝখানে হজরত ইবরাহিমের সেই পায়ের ছাপ এখনও স্পষ্ট দেখা যায়। পাথরটির ওপর প্রতিটি ছাপের দৈর্ঘ্য ২৭ সেমি এবং প্রস্থ ১৪ সেমি। পাথরের নিচের অংশে রূপাসহ প্রতিটি পাথরের দৈর্ঘ্য ২২ সেমি এবং প্রস্থ ১১ সেমি। পাথরটিতে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পদচিহ্নের গভীরতা পাথরটির উচ্চতার অর্ধেক, ৯ সেমি। 

মাকামে ইবরাহিম মহান আল্লাহর অনন্য নিদর্শন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, فِیۡهِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبۡرٰهِیۡمَ ‘তাতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে, যেমন মাকামে ইবরাহিম।’ তাফসিরে তাবারিতে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে—‘বায়তুল্লায় আল্লাহর কুদরতের পরিষ্কার নিদর্শন রয়েছে এবং খলিলুল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-এর নিদর্শনাবলী রয়েছে, যার মধ্যে একটি হল তাঁর খলিল ইবরাহিম (আ.) পদচিহ্ন ওই পাথরে যার ওপর তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। (তাফসিরে তাবারি: ৪/১১)

মাকাম শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে দাঁড়ানোর স্থান। মাকামে ইবরাহিম অর্থ হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর দাঁড়ানোর স্থান। হজরত ইবরাহিম (আ.) পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণের সময় এই পাথরে দাঁড়িয়ে কাজ করেছিলেন, তাই এটিকে ‘মাকামে ইবরাহিম’ বলা হয়। তাওয়াফ-পরবর্তী ওয়াজিব দুই রাকাত নামাজ এই মাকামে ইবরাহিমের পেছনে পড়া সুন্নত। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন- وَ اتَّخِذُوْا مِنْ مَّقَامِ اِبْرٰهٖمَ مُصَلًّي ‘তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো। (সুরা বাকারা: ১২৫)

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে ওমর (রা.) বললেন, আপনি যদি মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থান বানাতেন! তারপরে আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াত নাজিল করেন। (দ্র. বুখারি: ৪০২, ৪৪৮৩; মুসলিম: ২৩৯৯; তিরমিজি: ২৯৫৯, ২৯৬০)

রাসুলুল্লাহ (স.) বিদায় হজের সময় তাওয়াফের পরে এই মাকামে ইবরাহিমের পেছনে কাবার দিকে মুখ করে এভাবে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছেন যে, তাঁর এবং কাবা শরিফের মাঝে মাকামে ইবরাহিম ছিল। (দ্র. বুখারি: ৩৯৫, ১৬২৩, ১৬২৭; মুসলিম: ১২১৮, ১২৩৪; তিরমিজি: ৮৫৬, ৮৬২, ২৯৬৭)

তাওয়াফের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এ দুই রাকাত মাকামে ইবরাহিমের পেছনে আদায় করা উত্তম। যদি কোনো কারণে তা সম্ভব না হয়, তাহলে মসজিদে হারামের যেকোনো জায়গায় আদায় করলেই হবে। তা-ও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে হারামের এলাকার ভেতরে আদায় করে নেবে। হারামের সীমানার বাইরে আদায় করা মাকরুহে তানজিহি। (দ্র. সুরা বাকারা ১২৫ এর তাফসির, আহকামুল কুরআন, জাস্সাস; তাফসিরে ইবনে কাসির; মানাসিকে মোল্লা আলি ক্বারি, পৃষ্ঠা ১৫৫-১৫৭; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ: ১১৬-১১৭; ইলাউস সুনান: ১০/৭৫-৮১) 

মাকামে ইবরাহিমে দোয়াও করেন হাজি সাহেবরা। কেননা কাবার ভিত উঠানোর সময় হজরত ইবরাহিম ও ইসমাঈল (আ.) দোয়া করেছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করুন, যখন ইবরাহিম ও ইসমাইল কাবার ভিতগুলো উঠাচ্ছিল (এবং দোয়া করছিল,) ‘হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা: ১২৭)

হারাম শরিফের দুই পবিত্র পাথর সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের গুনাহ যদি হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহিমের পাথরকে স্পর্শ না করতো, তাহলে যেকোনো অসুস্থ ব্যক্তি তা স্পর্শ করলে (আল্লাহর পক্ষ হতে) তাকে সুস্থতা দান করা হতো।’ (সুনানে কুবরা, বায়হাকি: ৫/৭৫; শরহুল মুহাযযাব: ৮/৫১)

তবে, মাকামে ইবরাহিমকে স্পর্শ কিংবা চুমো দিতে হবে—এমন কোনো বিধান ইসলামে নেই। আল্লাহ তাআলা হজযাত্রীদেরকে মাকামে ইবরাহিমে নামাজ ও দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।