আল্লাহর কাছে গরিব-দুঃখীর মর্যাদা

আল্লাহর কাছে গরিব-দুঃখীর মর্যাদা

ছবি: সংগৃহীত

গরিব ও অসহায় লোকদেরকে অনেকে হীনচোখে দেখেন, রসিকতা করেন। এটি কাম্য নয়। গরিব-দুঃখী মানুষটি যদি মুত্তাকি হন, তাহলে তার মর্যাদা আকাশচুম্বী। এমনকি এ শ্রেণির কারণেই আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের রিজিক দিয়ে থাকেন। হজরত সাদ (রা.) নিজেকে নিম্নশ্রেণির লোকদের চেয়ে অধিক মর্যাদাশীল মনে করলে রাসুল (স.) বলেন, ‘দুর্বল লোকদের দোয়ায় তোমাদের সাহায্য করা হয় ও রিজিক দেওয়া হয়।’ (বুখারি, মেশকাত: ৫২৩২)

তাই গরিব মানুষদের হেয় করা নয়, বরং তাদের ভালোবাসা ও পাশে থাকা কাম্য। আবু জার (রা.) বলেন, ‘আমার বন্ধু মুহাম্মদ (স.) আমাকে সাত কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। ১. আমি যেন গরিব-মিসকিনকে ভালোবাসি ও তাদের নৈকট্য লাভ করি। ২. আমি যেন ওই ব্যক্তির দিকে তাকাই, যে আমার চেয়ে নিম্ন স্তরের এবং ওই ব্যক্তির দিকে না তাকাই, যে আমার চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের। ৩. আমি যেন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করি, যদিও তারা একে ছিন্ন করে। ৪. আমি যেন কারো কাছে কিছু যাচ্ঞা না করি। ৫. আমি যেন সর্বদা  ন্যায় ও সত্য কথা বলি, যদিও তা তিক্ত হয়। ৬. আমি যেন আল্লাহর ব্যাপারে কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় না করি এবং ৭. তিনি আমাকে এই নির্দেশই দিয়েছেন যে আমি যেন বেশির ভাগ সময় ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পাঠ করি। কেননা এই শব্দগুলো আরশের নিচের ভাণ্ডার থেকে আগত।’ (মুসনাদে আহমদ, মেশকাত: ৫২৫৯; সহিহ ইবনে হিব্বান: ৪৪৯)

জান্নাতের অধিকাংশ মানুষ হবেন গরিব। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আমি জান্নাতে উঁকি মেরে দেখলাম যে এর বেশির ভাগ অধিবাসী হলো গরিব-মিসকিন। আর জাহান্নামে দেখলাম যে এর বেশির ভাগ নারী।’ (মুসলিম ও মেশকাত: ৫২৩৪)

নবীজি আরও বলেন, ‘আমি কি তোমাদের জান্নাতিদের সম্পর্কে অবহিত করব না? (তারা হলো) প্রত্যেক দুর্বল ব্যক্তি এবং এমন ব্যক্তি, যাকে দুর্বল মনে করা হয়। সে যদি আল্লাহর নামে কসম করে, তাহলে তা তিনি পূর্ণ করে দেন। (তিনি আরো বলেন) আমি কি তোমাদের জাহান্নামিদের সম্পর্কে অবহিত করব না? (তারা হলো) প্রত্যেক রূঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয় ও দাম্ভিক ব্যক্তি।’ (বুখারি ও মুসলিম, মেশকাত: ৫১০৬)

এই গরিব মানুষরাই পরকালে বিশেষ সম্মানে ভূষিত হবেন। রাসুল (স.) বলেন, ‘দরিদ্র মুহাজিররা তাদের ধনীদের চেয়ে ৫০০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তা হলো (আখেরাতের) অর্ধদিনের সমান।’ (তিরমিজি: ২৩৫৩)

ইসলামের শিক্ষা হলো- নিজ অবস্থানের চেয়ে নিম্ন স্তরের মানুষের দিকে তাকানো এবং নিজের অবস্থানের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ এমন ব্যক্তির দিকে দেখে, যাকে ধন-সম্পদে, স্বাস্থ্য-সামর্থ্যে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা হয়েছে, তখন সে যেন নিজের চেয়ে নিম্নমানের ব্যক্তির দিকে তাকায়।’ (বুখারি ও মুসলিম, মেশকাত: ৫২৪২)

গরিব-মিসকিন-অসহায় সমাজে উপেক্ষিত হলেও আল্লাহর বিধান মেনে যত কষ্টেই তিনি দিনাতিপাত করুন না কেন, বিচার দিবসে তিনিই হবেন মহা সম্মানিত। সবার আগেই প্রবেশ করবেন অনন্ত সুখের জান্নাতে।