কুবি শিক্ষকের পদ স্থায়ী না করে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ

কুবি শিক্ষকের পদ স্থায়ী না করে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ

ফাইল ছবি

কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষককে সহকারী অধ্যাপক পদে স্থায়ী না করে বাইরের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক (আপগ্রেডেড) মোহাম্মদ আকবর হোসেন মঙ্গলবার (২৮ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর ইমেইলে প্রেরিত এক চিঠিতে এই অভিযোগ আনেন।

আবেদনপত্র থেকে জানা যায়, ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের একটি স্থায়ী পদের জন্য আহ্বান করা হয়। একই বছরের ২ নভেম্বর তিনিও সেই পদের জন্য আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি সিলেকশন বোর্ড ডাকা হয়। শিক্ষা ছুটিতে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে সেই ভাইভায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেই নিয়োগ বোর্ডেও পেশাদারিত্ব দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের। প্রায় দুই ঘন্টা দেরিতে বোর্ডটি শুরু হয়।

এই বোর্ডের সিদ্ধান্ত প্রায় দেড় বছরেও আকবর হোসেনকে জানায়নি প্রশাসন। আবেদনপত্রে তিনি আরও বলেন, নানা সূত্রমতে আমি জানতে পেরেছি, বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আমাকে বাদ দিয়ে বাইরে থেকে সম্পূর্ন নতুন একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সিলেকশন বোর্ড এবং সিন্ডিকেটের এমন সিদ্ধান্ত আমাকে হতবাকই শুধু করেনি, করেছে সংক্ষুব্ধ। বারবার মনে হয়েছে, আমেরিকার মতো উন্নত দেশের একটি নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে এসে আমি কি কোন "পাপ" করেছি, যার জন্য আমাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে।  কুবির (এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের) প্রচলিত নিয়মানুযায়ী স্থায়ী পদ সৃষ্টি হলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বিভাগে যিনি অস্থায়ী (আপগ্রেডেড) পদে যিনি আছেন তাকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও আকবর হোসেনকে করা হয়েছে বঞ্চিত।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ আকবর হোসেন বলেন, সিনিয়রিটির ভিত্তিতে বিভাগের স্থায়ী পদ আমি প্রাপ্য ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন তাদের এই ভুল শুধরে নেয় এবং আমাকে যেন আমার প্রাপ্য সম্মান দেয়া হয়।' এদিকে অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের বাদ দিয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ইসরাত জাহান নিমনীকে। যিনি এর আগে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁকে নিয়োগের ব্যাপারে সুপারিশ করেনি বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির। প্ল্যানিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. এম এম শরিফুল করিম বলেন, আমরা দুইজন সদস্য ওই প্রার্থীর নাম সুপারিশ করিনি। কিন্তু যেহেতু প্ল্যানিং হয়নি এরপর প্ল্যানিংকে পাশ কাটিয়ে রেজিস্ট্রার নিজেই যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ করেছে। যেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন কখনো হয়নি যে যারা স্থায়ী বা পুরনো তাঁদেরকে বাদ দিয়ে নতুন কাউকে স্থায়ী করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্ত অনুযায়ী যেই যোগ্যতা দরকার তাঁর সেটা নেই।

ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা ছিল। কিন্তু সেটা তখন কুবিতে অনুমোদন হয়নি। কমিটির আরেক সদস্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রেজাল্টের জন্য যেই শর্ত রয়েছে ওনার সেটা ছিল না। কিন্তু ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালা অনুযায়ী তিনি যোগ্য ছিলেন। কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তিতে দুইটা শর্তই উল্লেখ করেছে। তাই আমরা তাঁকে সুপারিশ করিনি। আমদের বিভাগের অস্থায়ী শিক্ষকরা আবেদন করলেও তাদেরকে না নিয়ে নিয়মভঙ্গ করে এই প্রার্থীকে বাছাই করেছে কর্তৃপক্ষ। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের রেজাল্টের শর্তে একটিতে সিজিপিএ ৩.৫০ এবং অন্যটিতে ৩.৩৫ চাওয়া হয়েছে। তবে ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালা অনুযায়ী, সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের রেজাল্টের শর্তে একটিতে সিজিপিএ ৩.৫০ এবং অন্যটিতে ৩.২৫ উল্লেখ করা হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ী এই প্রার্থীর রেজাল্ট কম রয়েছে।

তবে কর্তৃপক্ষ এই প্রার্থীকে নেওয়ার জন্য অভিনব কায়দায় বিজ্ঞপ্তিতে দুইটি শর্ত উল্লেখ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এছাড়া বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি সুপারিশ না করলেও রেজিস্ট্রার দপ্তর আইন অমান্য করে এই প্রার্থীকে বাছাই করে। এ ব্যাপারে জানতে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো: আমিরুল হক চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। উপাচার্য অধ্যাপক ড এ এফ এম আবদুল মঈনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি।