কোন ধরনের সম্পদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়

কোন ধরনের সম্পদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়

প্রতীকী ছবি

কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

স্বর্ণ, রুপা ও অন্যান্য মালামালের নিসাব
স্বর্ণের ক্ষেত্রে নিসাব হলো- সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি। অর্থাৎ কারো মালিকানায় ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে এই পরিমাণ স্বর্ণ থাকলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। রুপার ক্ষেত্রে নিসাব হলো সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হলো- এসব কিছুর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায়, তাহলেও তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। (আলমুহিতুল বুরহানি: ৮/৪৫৫; ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া: ১৭/৪০৫)

যেসব সম্পদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব
কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য যে সকল সম্পদ ধর্তব্য হয়, সেগুলো হলো— ১. সোনা ২. রুপা ৩, ব্যবসায়িক পণ্য, ৪, নগদ টাকা, ৫. ব্যাংক, বীমা কোম্পানি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে থাকা টাকা এবং অন্যের কাছে পাওনা টাকা (নির্ধারিত শর্তে), ৬. প্রয়োজনের অতিরিক্ত যেকোনো ধরণের সম্পদ যেমন- জমি, ভবন, গাড়ি ইত্যাদি ৷

প্রয়োজন অতিরিক্ত সমস্ত সম্পদের ওপরই কোরবানি আসে। যদি তা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের মূল্য পরিমাণ হয়ে যায় এবং ঋণমুক্ত হয়। খাবার দাবার, পোশাক পরিচ্ছদ, বসবাসের ঘর, বাহন ইত্যাদি, যা ছাড়া মানুষ জীবন ধারণ করতে অক্ষম, এসব বস্তুকে বলা হয় প্রয়োজনীয় বস্তু। এছাড়া যত সম্পদ থাকবে, এর ওপর কোরবানি ও সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়। আর কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার পর যদি নগদ অর্থ দিয়ে কোরবানির পশু ক্রয় করা সম্ভব না হয়, তাহলে ঋণ করে হলেও কোরবানি দিতে হবে। পরে তা পরিশোধ করে দেবে। যদি এটিও সম্ভব না হয় এবং কোরবানির দিনসমূহ চলে যায়, তাহলে পরবর্তীতে একটি মধ্যম মানের বকরির মূল্য কোরবানির নিয়তে সদকা করে দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার: ৪৫৩-৯/৪৫২; দুররুল মুখতার: ৯/৪৬৩)

প্রয়োজন অতিরিক্ত জমি থাকলেও কোরবানি ওয়াজিব হয়। (আহসানুল ফতোয়া: ৭/৫০৬)

ব্যবসার নিয়তে গাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, কাপড়-চোপড়, অলংকার, নির্মাণ সামগ্রী, ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, হার্ডওয়ার সামগ্রী, বইপুস্তক ইত্যাদি কিনলে তা বাণিজ্য-দ্রব্য বলে গণ্য হবে এবং এসবের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। (সূত্র: মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭১০৩-৭১০৪)

তবে, ভাড়ায় চালিত গাড়ি জাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই এমন গাড়ির মূল্যের ওপর কোরবানি বা জাকাত দিতে হয় না। তবে সেগুলো থেকে ভাড়া বাবদ অর্জিত আয়ের যে অংশ প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহের পর অতিরিক্ত থাকবে তা জাকাতযোগ্য বা কোরবানির উপযোগী সম্পদের মধ্যে গণ্য হবে। (সূত্র: কিতাবুল আসল: ২/৯৭; ফতোয়ায়ে খানিয়া: ১/২৫১; বাদায়ে: ২/৯১; আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৭৩)

কোনো ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার পর কোরবানি আদায় না করে অতঃপর ওই তিনদিন পর সে গরিব হয়ে যায় তাহলে তার ওপরও কোরবানিযোগ্য ছাগল সদকা করা আবশ্যক। দরিদ্র হওয়ার কারণে কোরবানি মাফ হবে না। সুতরাং সে আদায় করে যেতে না পারলে তা আদায় করে দেওয়ার জন্য অসিয়ত করে যেতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৬৫ আল ইখতিয়ার: ৫/২০ মোবাইল শামেলা থেকে গৃহীত)

সম্পদের যথাযথ হিসাব করা কষ্টকর হলে আপনার সম্পদের পূর্ণ হিসাব আপনার কাছের কোনো হক্কানি আলিমের কাছে পেশ করুন। তিনি দেখে সিদ্ধান্ত দেবেন। তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি আমল করুন। আল্লাহ কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শরিয়তের নির্দেশনা মেনে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের কোরবানি কবুল করুন। আমিন।