যে দোয়া সব নবী-রাসুল পড়েছেন

যে দোয়া সব নবী-রাসুল পড়েছেন

ছবি: সংগৃহীত

হজের মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো ইয়াওমে আরাফা বা আরাফাতের দিন। জিলহজ মাসের ৯ তারিখ পবিত্র আরাফাতের দিন। এই দিনে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাকেই হজ বলা হয়েছে হাদিস শরিফে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে এই সালাত আদায় করেছে আর এর আগে আরাফায় অবস্থান করেছে—দিনে বা রাতে, তার হজ পূর্ণ হয়েছে এবং সে তার ইহরাম শেষ করেছে।’ (সুনানে নাসায়ি: ৩০৪৪)

এই দিনে পড়ার মতো সুন্দর একটি দোয়ার উল্লেখ রয়েছে হাদিসে। যে দোয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে- সর্বোত্তম কথা এবং আগেকার নবীদের দোয়া। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আরাফাতের দিনের দোয়াই শ্রেষ্ঠ দোয়া। দোয়া-জিকির হিসেবে সর্বোত্তম হলো ওই দোয়া, যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ করেছেন, তা হলো— لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদির।’ অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তারই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।’ (জামে তিরমিজি: ৩৫৮৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩৭৭৮)

উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্দুল বার (রহ) বলেন, এ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, আরাফার দিনের দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হবে। আর সর্বোত্তম জিকির হলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (ইবনে আব্দুল বার, আত-তামহিদ)। ইমাম খাত্তাবি (রহ) বলেন, এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দোয়া করার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও তাঁর মহত্বের ঘোষণা করা উচিত। (ইমাম খাত্তাবি, শান আদ-দোয়া: পৃ-২০৬)

পবিত্র আরাফাতের দিনে উল্লেখিত দোয়াটির বেশ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ হাদিসমতে এই দিন হলো শ্রেষ্ঠ দিন। আর দোয়াটি হলো আল্লাহর সর্বোত্তম বান্দাদের দোয়া। সর্বোত্তম দিনে সর্বোত্তম দোয়া পাঠ করা নিঃসন্দেহে অনেক উত্তম আমল। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আরাফাতের দিনের তুলনায় উত্তম কোনো দিন নেই।’ (মাজমাউল জাওয়ায়েদ: ৩/২৫৬)

তাছাড়া আরাফাতের দিনের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। এই দিনে বান্দার দিকে মহান প্রভুর রহমতের জোয়ার প্রবলবেগে উৎসারিত হয়। অসংখ্য বান্দাকে তিনি এই দিনে ক্ষমা করে দেন। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘আরাফার দিনের মতো আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা? (সহিহ মুসলিম: ১৩৪৮)

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক বর্ণনায় রয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা নিকটতম আসমানে আসেন এবং পৃথিবীবাসীকে নিয়ে আসামানের অধিবাসী অর্থাৎ ফিরিশতাদের সঙ্গে গর্ব করেন। বলেন, দেখো- আমার বান্দারা উস্কোখুস্কো চুলে, ধুলোমলিন বদনে, রোদে পুড়ে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে সমবেত হয়েছে। তারা আমার রহমতের প্রত্যাশী। অথচ তারা আমার আজাব দেখেনি। ফলে আরাফার দিনের মতো আর কোনোদিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৩৮৫৩)

আরাফাতের দিনেই অবতীর্ণ হয়েছে কোরআনে কারিমের সর্বশেষ আয়াত, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলাম তোমাদের দীন মনোনীত করলাম। (সুরা মায়েদা: ০৩)

উপরের আলোচনা থেকে বোঝা গেল, ইয়াওমে আরাফা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। তাকবিরে তাশরিক এবং হজের তালবিয়া ছাড়াও উল্লেখিত দোয়াটি বেশি বেশি পড়ার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া কোরআন হাদিসে বর্ণিত সকল দোয়া পড়া যাবে। তওবা, ইস্তেগফারের যাবতীয় দোয়া-আমলগুলোও জারি রাখতে হবে, যেহেতু এই দিনটিতে রয়েছে গুনাহমুক্তির মোক্ষম সুযোগ। 

আরাফার দিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো রোজা। এদিন একটি রোজা রাখলে বান্দার দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘আরাফার দিনের (৯ জিলহজের) রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা রাখি যে, তিনি আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইয়াওমে আরাফার গুরুত্ব উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। উপরোক্ত দোয়াটি বেশি বিশ পাঠ করার পাশাপাশি তওবা ইস্তেগফার করার তাওফিক দান করুন এবং সবাইকে মাবরুর হজ নসিব করুন। আমিন।